বৃহস্পতিবার, ০২ জুন, ২০১৬, ০১:৩২:৩৯

পোড়ার ভয় এখনও তাড়া করে সুজানাকে

পোড়ার ভয় এখনও তাড়া করে সুজানাকে

আসাদুজ্জামান: সাত বছর বয়সী সুজানা কর্মস্থলে মাকে দেখতে গিয়েছিল। মায়ের দেখা না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল হোটেলের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ গরম তেলে ঝলসে যায় প্রায় পুরো শরীর। তার কোনো অপরাধ না থাকলেও গরম তেলে পুড়ে এক মাস থাকতে হয় হাসপাতালে। এখন কিছুটা সুস্থ হলেও কোথাও যেতে ভয় পায় সে। আবার যদি কেউ শরীরে গরম তেল ঢেলে দেয়?

গত সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারকের কাছে গরম তেলে শরীর পুড়ে যাওয়ার এ বর্ণনা তুলে ধরে সুজানা। পরে তাকে তার বাবার জিম্মায় দেন আদালত।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সুজানার মা জহুরা বেগম যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জ এলাকার একটি হোটেলে তরকারি ও মাছ কাটার কাজ করতেন। মাঝেমধ্যেই সুজানা হোটেলে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসত। অন্যদিকে ওই হোটেলে জাকির হোসেন নামের এক লোক নিয়মিত খাওয়াদাওয়া করতেন। প্রায়ই তিনি বাকিতে খেতেন। এ নিয়ে হোটেলের মালিকের সঙ্গে তাঁর ঝগড়া হতো।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে জাকিরের কাছে বাকি টাকা চাইলে হোটেলের মালিকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জাকির হোটেলে মাছ ভাজার জন্য গরম তেল রাখা কড়াইয়ে লাথি মারেন। ওই তেল সুজানার শরীরে গিয়ে পড়ে। পুড়ে যায় সুজানার শরীর। এ কাণ্ড ঘটিয়ে কৌশলে চলে যান জাকির। জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে সুজানাকে নিয়ে আসেন বাবা আবুল হোসেন। পেশায় তিনি রিকশাচালক। আদালত চত্বরে আবুল হোসেন বলেন, তাঁর মেয়ে নিষ্পাপ। দয়াগঞ্জের একটি স্কুলে লেখাপড়া করে। অভাবের সংসার তাঁর। সুজানার মা যেহেতু ওই হোটেলে কাজ করতেন, তাই তাঁকে দেখতে সেখানে গিয়েছিল সে। তখন জাকির হোসেন নামের ওই লোক গরম তেলের কড়াইয়ে লাথি মারেন। সব তেল সুজানার শরীরের গিয়ে পড়ে।


আবুল আরও বলেন, গরম তেলে শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে গেছে। বিশেষ করে গলা, কপাল ও পেট একেবারে পুড়ে যায় সুজানার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসা করানোর পর এখন সে কিছুটা সুস্থ। আদালতের বারান্দার একটি বেঞ্চে চুপচাপ বসেছিল সুজানা। কপালে পোড়া দাগ। জানতে চাইলে সুজানা বলে, সে বিচার চায়।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মামলার একমাত্র আসামি জাকির হোসেন ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক আশিস কুমার দেব বলেছেন, ‘জাকিরের স্বভাবচরিত্র মোটেও ভালো নয়। তিনি খুব খারাপ লোক। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অনেক অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তিনি।-প্রথম আলো

২জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে