রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৩৩:৩০

জাহাজ বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় ছোপ ছোপ রক্ত

জাহাজ বিল্ডিংয়ের পঞ্চম তলায় ছোপ ছোপ রক্ত

নিউজ ডেস্ক: কল্যাণপুরের ‘তাজ মঞ্জিল’ ভবনের পঞ্চম তলায় এখনো ছোপ ছোপ রক্ত। পাঁচ দিনে লাল রক্ত শুকিয়ে কালো রং ধারণ করেছে। রক্ত গড়িয়ে পড়েছে পঞ্চম তলা থেকে চতুর্থ তলার সিঁড়ি পর্যন্ত। গত মঙ্গলবার সকালে এই ভবনের পঞ্চম তলায় পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতের অভিযানে নিহত হন নয় জঙ্গি।


অভিযানের পর থেকেই তালাবদ্ধ রাখা হয়েছে তাজ মঞ্জিলের মূল ফটক। গতকাল শনিবার একজন ভবনটির ভেতরে ঢুকে রক্তমাখা মেঝে ও সিঁড়ি দেখতে পান। কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাড়িটির কেতাবি নাম ‘তাজ মঞ্জিল’।

তবে আশির দশকে নির্মিত ছয়তলা এই বাড়িটি ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে পরিচিত। প্রতি তলায় ১১ থেকে ১৪টি কক্ষ আছে। গত মঙ্গলবারের আগ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মানুষের আনাগোনায় গমগম করত পুরো বাড়ি। এখন এই বাড়িতে সুনসান নীরবতা। ভেতর-বাইরে ভুতুড়ে পরিবেশ, সারাক্ষণ থাকে পুলিশি পাহারা।


মূল ফটক দিয়ে বাড়িটির ভেতরে ঢুকলে হাতের ডান দিকে ছোট্ট একটি কক্ষ। এই কক্ষে থাকতেন বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী। পাশে গাড়ি রাখার গ্যারেজ। গ্যারেজে পড়ে আছে ধুলোপড়া একটি পুরোনো গাড়ি। বাঁ দিকে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ।

এই কক্ষটি দোকানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। নিচতলায় রয়েছে আরও ৮-১০টি কক্ষ। সবগুলো কক্ষই তালাবদ্ধ। কয়েক মাস আগে এসব কক্ষে কল্যাণপুর বস্তি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ছিন্নমূল মানুষেরা ছিলেন।


মূল ফটক থেকে ৮ থেকে ১০ হাত দূরে হাতের ডানে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। সিঁড়িটির প্রস্থ দুই হাতের বেশি নয়। একসঙ্গে দুজন উঠতে গেলে একজনের সঙ্গে আরেকজনের ধাক্কা লাগে। দ্বিতীয় তলায় কক্ষগুলোর সামনে আলাদা দুটি লোহার কলাপসিবল গেট আছে।

এই তলার পুরোটাজুড়ে থাকতেন বাড়ির মালিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার প্রতিটিতে চারটি করে ইউনিট। বাড়িটি অন্ধকার, আলো-বাতাস ঢোকে না বললেই চলে। গতকাল দুপুরেও বাড়ির প্রতিটি তলায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলতে দেখা গেছে। মঙ্গলবারের পর থেকে বাতিগুলো আর নেভানো হয়নি।


গতকাল ভবনটি দেখে আসা ওই ব্যক্তি বলেন, চতুর্থ তলা থেকে পঞ্চম তলায় উঠতেই উৎকট গন্ধ। নিহত জঙ্গিদের রক্ত পচে এই গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে রক্ত গড়িয়ে নিচে পড়ার চিহ্ন রয়েছে। পঞ্চম তলার সিঁড়ি যেখানে শেষ হয়েছে, তার সামনে লম্বা একটি করিডর। করিডরটির দৈর্ঘ্য অন্তত ১০ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৩ ফুট।

মূলত এই করিডরে অবস্থান নিয়ে জঙ্গিরা সিঁড়িতে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গুলিবিনিময় করেন। নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে সাতজনের লাশ এই করিডরে পড়ে ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

করিডরের চারপাশের দেয়ালে অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুলি লেগেছে ডান পাশের দেয়ালে। দেয়ালটিতে গুলি লেগে ছোট-বড় অসংখ্য ছিদ্র তৈরি হয়েছে। লম্বা করিডরটি দিয়ে পঞ্চম তলা দুই ইউনিটে ভাগ করা হয়েছে। ডান দিকে চারটি কক্ষ ও বাঁ দিকে সাতটি।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, বাঁ দিকের সাতটি কক্ষে থাকতেন ১১ জঙ্গি। তাঁদের মধ্যে নয়জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, এঁদের মধ্যে দুজন পাঁচতলা থেকে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফিয়ে পড়েছিলেন। লাফিয়ে পড়া দুজনের একজন পালিয়েছেন, আরেকজন আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে আটক আছেন।


পঞ্চম তলার সাতটি কক্ষ মূলত ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তাই কক্ষগুলো তালাবদ্ধ। জানালার ফাঁক দিয়ে একটি কক্ষে জঙ্গিদের ব্যবহার করা বইখাতা মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে ওই ব্যক্তি জানান। ডান পাশের ইউনিটে ঢোকার দরজাটি খোলা। মাঝামাঝি একটি কক্ষের মেঝেতে তোশক ও বালিশ রয়েছে।

তবে এই ইউনিটের অন্য কোথাও আর কোনো আসবাব নেই। একেবারে পূর্ব পাশের কোনায় একটি রান্নাঘর। সেখানেও তেমন কোনো আসবাব নেই। এই তলার দুই পাশের বারান্দাতেই লোহার গ্রিল আছে।

তবে প্রতি বারান্দাতেই ছোট একটি পকেট গেট আছে। গেটটি ছিটকিনি দিয়ে আটকানো। জঙ্গিরা যে ইউনিটে থাকতেন সেই ইউনিটের বারান্দাতেও এমন একটি গেট আছে। এই গেট দিয়েই দুই জঙ্গি বাঁচার জন্য লাফ দিয়েছিলেন।-প্রথম আলো

৩১ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে