এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে কৃষি অধিদপ্তর ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলে, কিন্তু এবারে অতিরিক্ত ১০০ হেক্টর জমিসহ ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া গতকাল জানান, বিগত ২ বছর সারা দেশে ক'রো'নার কারনে বিশেষ করে রবি মৌসুমের সব ধরনের ফসলের ঘাটতি ছিল। চলতি বছর কৃষি বিভাগ দেশের মানুষের রবি শস্য চাহিদা পূরণে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর এতে খুশি দিনাজপুরের কৃষকেরা।
চলতি বছর জেলার ১৩টি উজেলায় ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রবি মৌসুমের শুরুতেই সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১ মাসব্যাপী দেশের সর্বত্র এলাকায় কৃষকেরা পেঁয়াজের চাষ করে থাকেন। এবারে জেলায় (অক্টোবরের ১১ তারিখ পর্যন্ত) অতিরিক্ত ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়ে মোট ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ অর্জিত হয়েছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার ভাব গ্রামের আদর্শ কৃষক মতিউর রহমান জানান, তিনি এবারে ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। পেঁয়াজের গাছ কিছুটা বড় হয়েছে।
পেঁয়াজ রোপনের পর থেকে ৩ মাস সময় লাগে পেঁয়াজ জমিতে পরিপক্ক হতে। প্রতি বিঘা জমিতে রাসায়নিক সার ৩০ কেজি, পটাশ ৫০ কেজি, ফসফেট ১৫ কেজি এবং ২০ কেজি ইউরিয়া সার গোবরের সাথে মিশিয়ে পেঁয়াজের জমি প্রস্তুত করে বীজ বপন করা হয়।
তিনি বলেন, ১ বিঘা জমি চাষ করতে ২০ হাজার টাকা পেঁয়াজের বীজ এবং রাসায়নিক সার গোবর ও শ্রমিকের মূল্যসহ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আশ্বিন মাস থেকে পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়।
পেঁয়াজ পরিপক্ক হওয়ার আগেই অগ্রহায়ণ মাসেই পেঁয়াজের গাছসহ উত্তোলন করে বাজারজাত করা যায়। নতুন পেঁয়াজের গাছ বাজারে গ্রাহকদের খুব চাহিদা থাকে। পেঁয়াজের পাশাপাশি পিঁয়াজের পাতা এবং পেঁয়াজের শিকড় থেকে ফুলকা নামক একটি ডাটা বের হয় ওই ডাটাটি শীতকালিন সময় মানুষের খাবার চাহিদা অনেকটাই পূরণ করে থাকে।
মতিউর রহমান আরও বলেন জানান, ৩৩ শতক হিসেবে ১ বিঘায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ভাল ফলন ও পরিচর্যার মাধ্যমে পেঁয়াজের চাষ করা হলে ১ লাখ টাকার পিঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের রবিশস্য নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দেশে পেঁয়াজের অস্থির বাজার রোধ করতেই সারাদেশে পেঁয়াজ চাষের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
দেশের পাবনা জেলার চলনবিল রবি মৌসুমে শুকিয়ে যাওয়া চরগুলোতে পেঁয়াজের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু ওই পেঁয়াজ দিয়ে সারা দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়না।
দেশের জনগণ বেড়েই চলছে সে কারনেই সারাদেশের ন্যায় খাদ্যের জেলা দিনাজপুরেও পিঁয়াজ চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এবারে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের উন্নতজাতের পেঁয়াজের বীজ সরবরাহ দিয়ে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে।
তিনি জানান, দিনাজপুর সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, খানসামা, বীরগঞ্জ, কাহারোল, চিরিরবন্দর ও বিরামপুর উপজেলায় এবারে পেঁয়াজের চাষ তুলনামূলক বেশী হচ্ছে। আশা করা যায় এই জেলার চাষকৃত পেঁয়াজ দিয়েই জেলার চাহিদা পুরণ করে অন্য জেলায় সরবরাহ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।