বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৫১:১৪

অনুভূতি সম্পন্ন কৃত্রিম হাত তৈরি করেছে চট্টগ্রামের রায়হান

অনুভূতি সম্পন্ন কৃত্রিম হাত তৈরি করেছে চট্টগ্রামের রায়হান

জীবন মুছা : অনুভূতি সম্পন্ন কৃত্রিম হাত তৈরি করে রীতিমত বিস্ময় সৃষ্টি করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তরুণ রায়হান চৌধুরী। তার উদ্ভাবিত এই কৃত্রিম হাত কোন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলে তা দিয়ে স্বাভাবিক হাতের মতোই অনেক কাজ করতে পারবেন ব্যক্তিটি।

শুধু কৃত্রিম হাতই নয়, রায়হান ইতোমধ্যে আবিষ্কার করেছেন ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা বা পূর্বাভাস দেয়ার মতো সেন্সর ডিভাইস।

অটোমোবাইল বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী এই তরুণ তার উদ্ভাবন ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। কোন সরকারি বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই রায়হান চৌধুরী প্রায় ১৫ বছর ধরে নানা ডিভাইস উদ্ভাবনে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

একান্ত সাক্ষাৎকারে রায়হান চৌধুরী বলেন, ‘যাদের হাত নেই কেবল তারাই অনুভব করতে পারেন এর কষ্ট। বিষয়টি মাথায় রেখে অনুভূতি সম্পন্ন কৃত্রিম হাত তৈরির জন্য গবেষণা শুরু করি। মাত্র এক মাসের গবেষণা এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে একটি কৃত্রিম হাত তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, এই কৃত্রিম অঙ্গটি হাতবিহীন মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা হলে তাতেও থাকবে অনুভূতি। এটি স্বাভাবিক রক্ত মাংসের হাতের মতোই কাজ করতে সক্ষম হবে।

রায়হান বলেন, ‘সরকার বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে আমার তৈরি কৃত্রিম হাতকে সাধারণ হাতের মতোই অবয়ব দেয়া সম্ভব হবে। আর ব্যাপক আকারে তা কার্যকর করা গেলে দুর্ঘটনায় যাদের অঙ্গহানি ঘটে, বদলে যাবে তাদের জীবন। স্বাভাবিক মানুষের মতোই তারা দৈনন্দিন কাজ সারতে পারবেন কৃত্রিম হাত দিয়ে।’

রায়হান বলেন, ‘আমার তৈরি কৃত্রিম হাত দিয়ে হাতবিহীন ব্যক্তি হ্যান্ডশেক করার ইচ্ছে পোষণ করলে সেটি করতে পারবেন, মুষ্টি করতে চাইলে মুষ্টিবদ্ধ করা যাবে। কোনো জিনিস ধরতে চাইলে তাও পারবেন।’ কৃত্রিম এই হাতটি মস্তিষ্কের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কাজই করতে সক্ষম বলে দাবি করেন রায়হান।

তিনি জানান, প্রায় ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ ফুট দীর্ঘ এই কৃত্রিম হাতটি তৈরিতে সময় লেগেছে এক মাস। এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার শিক, গলানো প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক্স সেন্সর আর মোটরসহ সাধারণ কিছু উপকরণ।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার অধিবাসী রায়হানের পিতা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন আমদানি-রফতানি বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন।

চার ভাই ও এক বোনের সংসারে রায়হানের পড়ালেখা এগিয়েছে অটোমোবাইলে ডিপ্লোমা পর্যন্ত। ২০০৮ সালে আগ্রাবাদ স্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ওই বছর নাছিরাবাদ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তিনি। ২০১০ সালে অটোমোবাইলে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে উদ্ভাবনী গবেষণায়ই পার করছেন সময়।

রায়হান জানান, খুব ছোটবেলায় একটি রেডিও কেমন করে বাজে, রেডিওর ভেতর কেমন করে গান বা কথাবার্তা শোনা যায়- এই কৌতূহলের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে গবেষণা শুরু করেন।

দীর্ঘ গবেষণায় ২০১০ সালে ‘মোবাইল প্রজেক্টরের’ মধ্য দিয়ে শুরু করেন উদ্ভাবন। এরপর দুই বছর আগে ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে ‘ট্রেন সেন্সর’ ও ব্যাংক ডাকাতি রোধে ‘লেজার গান সিস্টেম’ যন্ত্র আবিষ্কর করেন রায়হান।

রায়হানের উদ্ভাবিত ট্রেন সেন্সর রেললাইনের যেকোনো সমস্যা আগাম জানান দিতে সক্ষম। রেললাইনের কোথাও ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হলে এই বিশেষ সেন্সর ট্রেনের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে সক্ষম হবে এবং মোবাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার্তা পাঠাবে।

এ ছাড়া রায়হান চলতি বছর ভূমিকম্প পূর্বাভাস যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন।

রায়হান জানান, সারাবিশ্বে এখনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার কোনো যন্ত্র আবিষ্কার না হলেও তার উদ্ভাবিত ডিভাইস ভূমিকম্পের কয়েক মিনিট পূর্বে মোবাইলে বার্তা পাঠাতে সক্ষম হবে। মোবাইল রিংটোনের মাধ্যমে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস  দেবে ওই বিস্ময় যন্ত্র।

রায়হান আরো জানান, তার আবিষ্কৃত ডিভাইসটির একটি অংশ মাটির গভীরে পুঁতে রাখা হলে লেজার রশ্মির মাধ্যমে উপরে থাকা অপর একটি অংশে বার্তা পাঠাবে, যা একইসঙ্গে সঙ্কেত আর মোবাইল ফোনে রিংটোনের মাধ্যমে অবহিত করবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। যত বেশি গভীরতায় যন্ত্রটি স্থাপন করা যাবে তত দ্রুত ভূমিকম্পের আগাম বার্তা জানা যাবে।

এর আগে ২০১২ সালে রায়হান আবিষ্কার করেন লেজার সিকিউরিটি ডিভাইস। তার আবিষ্কৃত এই যন্ত্রটি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় লেজারের সাহায্যে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। যন্ত্রটি যে জায়গায় স্থাপন করা হবে, সেখানে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করলেই স্বয়ংক্রিয় মোবাইল কলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবে ডিভাইসটি।

রায়হান জানান, গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আবিষ্কার এবং গবেষণায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করেছেন। তার এযাবতকালের আবিষ্কার এবং উদ্ভাবনী গবেষণার যাবতীয় খরচ দিয়েছেন বড় ভাই মেরিন প্রকৌশলী এম জি দস্তগীর চৌধুরী। সরকারি-বেসরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পরিবারের উৎসাহে এখনো গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন রায়হান।

মা আমেনা বেগম জানান, রায়হান নাওয়া-খাওয়া ভুলে সার্বক্ষণিক গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এমনো দেখা গেছে সে দিন-রাত টানা ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তার ছোট্ট ল্যাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাকে যতটুকু পারি সাহায্য করছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা চাই রায়হানের আবিষ্কার দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগুক। একটু সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রায়হান অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।-জাগো নিউজ
১৭ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে