শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৩২:১৯

দিনে বাবার পিঠে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়ায় ৩৩-৩৪ ইঞ্চির যুবতী দু’বোন!

দিনে বাবার পিঠে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়ায় ৩৩-৩৪ ইঞ্চির যুবতী দু’বোন!

চুয়াডাঙ্গা : মা-বাবার পুতুল মেয়ে রূপা আর মিম।  বয়সে যুবতী হলেও আচরণে তারা শিশু।  দিনভর কাটে পাড়ার শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে।  রাতে ঘুমায় মায়ের গলা ধরে।  বাবার কোলে-পিঠে চড়ে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াতে স্বচ্ছন্দবোধ করে।

সবাই তাদের পুতুল মেয়ে বলে জানে।  আর এ কারণেই ওদের বাড়ির নাম হয়েছে পুতুলবাড়ি।  পুতুল মেয়ে রূপা আর মিম কথা বলে তোতা পাখির মতো।  

তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো যেন কোনো যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসছে।  দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই দেখতে আসে তাদের।  তবে অচেনা মানুষ দেখলে খুব লজ্জা পায় তারা।  কথার ফাঁকে ফাঁকে আবার যান্ত্রিক পুতুলের মত মুচকি হাসে।

পুতুল রূপা ও মিমের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারখাদা গ্রামে।  বাবা আবদুর রশিদ একজন ক্ষুদ্র কৃষক।  মা ফাতেমা খাতুন গৃহিণী। তাদের সংসারে তিন সন্তান।

রূপা বড় আর মিম ছোট।  রূপার বয়স ২৬ আর মিমের বয়স ১৭ বছন।  তাদের একমাত্র ভাই নূর আলম জিকু মেজ।  তবে তিনি স্বাভাবিক।  নূর আলম জিকু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স শেষবর্ষের ছাত্র।  


গ্রামের অনেকেই জানান, পত্রপত্রিকার খবর পড়ে যতটুকু জানতে পারি- রূপা আর মিমের মতো খাটো মেয়ে বিশ্বে আর নেই।  

তাদের বাবা আবদুর রশিদ বলেন, ‘রূপার উচ্চতা ৩৪ ইঞ্চি আর মিমের ৩৩।  আমার মনে হয়, আমার  মেয়েদের মতো এত কম উচ্চতার সহোদর পৃথিবীর আর কোথাও নেই।’

তাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে দুই মেয়ের নাম লেখাতে চান তিনি।  এ জন্য জেলা প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছেন আবদুর রশিদ।

রূপা ও মিমের মা ফাতেমা খাতুন জানান, ‘জন্মের সময় ওরা খুবই ছোট আকৃতির ছিল।  বেঁচে থাকবে বিশ্বাস হয়নি কারোরই।  বাংলাদেশসহ ভারতের অনেক নামিদামি ডাক্তার দেখানো হয়েছে।  কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

জানা গেছে, রূপা খুব অভিমানী।  কেউ কিছু বললে সহ্য হয় না।  রেগে গেলে ঘরের এটা-ওটা আছাড় মারে।  যা বায়না ধরে তা-ই দিতে হয়।  বাবার পকেট থেকে টাকা নিয়ে একাই বাড়ির পাশের দোকানে চলে যায়।  দিনভর শুধু খেলাধুলা।  মোবাইলে শিল্পী মমতাজের গান শোনে।  গানের তালে তালে আবার নাচে।  

তবে মিমের রাগ-অভিমান কম।  বাড়িতে এই আছে, এই নেই।  খেলতে খেলতে চলে যায় পাড়ায়।  ওদের রয়েছে হরেক কিছিমের খেলনা।  খেলনা সাজানো গোছানোতে তাদের সময় কাটে।  খিদে পেলে দৌড়ে ছুটে আসে মায়ের কাছে।  কিন্তু স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি  রূপা আর মিমের।

প্রতিবেশীরা জানান, রূপাকে ১০-১৫ বছর আগে স্কুলে পাঠানো হয়েছিল।  কিন্তু স্কুলে গেলেই অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে দেখার জন্য হামলে পড়ত।  শিক্ষকদের তা সামলাতে কষ্ট হতো।  এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় রূপাকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয়।

মিমের বেলায়ও তাই।  ওরা বুদ্ধিতে ৪-৫ বছরের শিশুর মতো।  পড়াশোনা ওদের ভালো লাগে না।  রূপা ও মিমের দাদা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস জানান, ‘আমার দুই নাতনিকে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা বাজারঘাট- কোথাও যাওয়া যায় না।  কৌতূহলী মানুষ দেখার জন্য ঘিরে ধরে।’

রূপা ও মিমের বাবা কৃষক আবদুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার দুই মেয়েকে দেখতে অনেকেই বাড়িতে আসেন।  প্রশাসনের অনেকে ওদের খবর জানেন।  কিন্তু ওদের সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসেনি।  

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তবারক হোসেন বলেন, ‘ওরা ভাতা পায় না।  তবে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।’

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাদ জাহান বলেন, ‘ওদের ব্যাপারে কিছু জানি না।  ওদের অবস্থা জেনে সহযোগিতার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৬ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে