শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২২:১১

যেভাবে শুরু হলো ফেসবুকের পথচলা

যেভাবে শুরু হলো ফেসবুকের পথচলা

মুনির হাসান : যোগাযোগের দুনিয়া ওলটপালট করে দিয়েছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের জীবনের গল্পের সঙ্গে ফেসবুকের যোগাযোগটা কতই না মনোহর!

২০০৩ সাল। সেপ্টেম্বর মাস। হার্ভার্ডের কার্কল্যান্ড হাউসের বাসিন্দা হতে এলেন এক তরুণ—মার্ক জাকারবার্গ। তাদের আবাস এইচ-৩৩ ঘরে। এটি ভবনের চারতলায় অবস্থিত। মার্কের সঙ্গে ছিল আট ফুট দৈর্ঘ্যের একটি হোয়াইট বোর্ড। যেকোনো চিন্তাভাবনার সময় এ বোর্ড তার সহায়! তার বিক্ষিপ্ত চিন্তা কেন্দ্রীভূত হয় এই বোর্ডকে ঘিরে।

হাউসের স্যুটটি একটু ঘোরালো—দরজা পেরোলে একটি ‘কমনরুম’। সেখানে রয়েছে চারটি পড়ালেখার ডেস্ক। ‘কমনরুম’ পার হয়ে যাওয়া যায় দুটি শয়নকক্ষে। আর সেই যাওয়ার পথে মাত্র একটি দেয়ালই খালি। সেখানে সানন্দে বসে গেল হোয়াইট বোর্ডটি।

শয়নকক্ষ দুটি একই রকম—একটি দোতলা খাট। দুটি ডেস্ক আর ক্যাবিনেট। এর একটিতে মার্কের সঙ্গে থাকবে হিউজেস। সাহিত্য আর ইতিহাসে স্নাতক পড়ুয়া। দুজনের কেউ রাজি হলো না ওপরে থাকতে। ফলে খাট খুলে পেতে ফেলা হলো ঘরের মধ্যে। ফলাফল হাতেনাতে—ঘরে আর নড়াচড়া করার কোনো জায়গাই থাকল না।
পাশের ঘরে থাকে ডাসটিন মস্কোভিচ ও বিলি ওলসন। এই চারজনের মধ্যে মার্কই কেবল কম্পিউটারে স্নাতক করছেন। সারা দিন শুধু প্রোগ্রামিংয়ে কোড করার চিন্তা তার। নানান প্রকল্প আর ইন্টারনেট। ইন্টারনেটই হলো মার্কের ধ্যানজ্ঞান। বাকিদের মধ্যে কম্পিউটার নিয়ে কিছুটা আগ্রহ আছে মস্কোভিচের।

মার্কের মনোবিদ মায়ের মতে, মার্ক প্রচণ্ড অগোছালো। কারণ হলো, ছোটবেলা থেকে তার দেখভাল করার লোক ছিল। ফলে তিনি নিজে প্রায় কিছুই করেন না। কোক খাওয়ার পর ক্যানটি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার কথা ভাবেন না পর্যন্ত। তিনি সেটি কোনো এক স্থানে রাখেন এবং একসময় ভুলেও যান তার কথা। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে এইচ-৩৩ নামের ঘরটির অবস্থা হলো দেখার মতো। অবশ্য মাঝেমধ্যে মস্কোভিচের বান্ধবী রাগে গজগজ করতে করতে তাদের ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে যান।

এইচ-৩৩-এ ওঠার মাসখানেকের মধ্যে মার্ক তার প্রথম প্রকল্পে হাত দিলেন। প্রকল্পটি খুব সহজ—‘টপোলজি ক্লাসে আমার পাশে যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে বসে, তাহলে আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে পরের সেমিস্টারে সে কোন কোন সাবজেক্ট নেবে। তাহলে আমিও সে কোর্স রেজিস্টার করতে পারি!’—‘কোর্সম্যাচ’ নামে মার্কের প্রথম প্রকল্প বা ‘প্রজেক্ট’ ঠিক এই কাজটি করেছে। এতে কোন শিক্ষার্থী কোন কোর্সে নিবন্ধন করেছে এটি যেমন জানা যায়, তেমনি কোন কোর্সে কে কে আছে, জানা যায় সেটিও।

এরপরের ঘটনা, প্রকল্পটি দারুণভাবে সফল হলো। তবে মার্ক তার পরের প্রকল্পের প্রেরণা পেলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জায়গা থেকে। টি-শার্ট পরা কিছুটা অন্তর্মুখী কিন্তু মুখের কাছে সব সময় হাসি ধরে রাখা এই তরুণ নারীমহলে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু মানুষের সব সময় তো আর একরকম যায় না। কখনো তাকে হারতে হয় অন্য মানুষের কাছে। এ রকম এক সময় একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কের মনে হলো, এমন একটা সফটওয়্যার বানাতে হবে যা কিনা নির্দিষ্ট কোনো লোককে কোনো জন্তু-জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করে রেটিং দেবে। যিনি বেশি রেটিং পাবেন তিনি পরের ধাপে যাবেন আরো ‘হট’ কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে।

মার্কের বন্ধু বিলি ওলসন প্রথম থেকেই বললেন, জন্তু-জানোয়ার আমদানির দরকার কী? বরং দুজন মানুষের মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক। সবাই র্যা ঙ্কিং করুক। কিন্তু ঝঞ্ঝাট আছে এখানেও—কলেজের সবার ছবি কোথায় পাওয়া যায়?

মার্কের মনে পড়ল, প্রথম দিন ওরিয়েন্টেশনের সময় হাউসের ক্যামেরাম্যান সবার ছবি তোলেন। সেগুলো রাখা হয় হাউসের ফেসবুকে। এবার সেই ছবির ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে শুরু করলেন মার্ক। এভাবে একসময় ভাবলেন, নিজের হাউস তো হলো, এখন বাকিগুলো পাওয়া যাবে কীভাবে?

হার্ভার্ডের বারোটি হাউসের নয়টির ফেসবুকের সব ‘ফেস’-এর ছবি জোগাড় করা হলো দুটি পদ্ধতিতে—হ্যাকিং আর অন্যদের পাসওয়ার্ড জোগাড় করে।

তো, শুরু হলো ‘ফেসমেশ’। এটি একটি ওয়েবসাইট, যার হোমপেজ থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হলো কে ‘হট’ তা খুঁজে বের করতে। মার্কের ল্যাপটপে সিস্টেম প্রস্তুত করা হলো ২ নভেম্বর বিকেলে। ‘টেস্ট করা আর সাজেশন দেয়ার জন্য’ নিজের কয়েকজন বন্ধুকে ই-মেইল করে জানালেন মার্ক। এই ‘টেস্টাররা’ আবার তাদের বন্ধুদের জানিয়ে দিলেন। এভাবেই সঙ্গে সঙ্গে সেটি হয়ে গেল ‘আন্ডারগ্রাউন্ড হিট’।

মার্কের ঘরের পাশের ঘরের একটি ছেলে প্রথম ঘণ্টার মধ্যে চলে এলেন শীর্ষস্থানে। কাজেই তিনিও তাড়াতাড়ি জানালেন তার বন্ধুদের। এরপর রাত ১০টায় মার্ক যখন নিজের কক্ষে ফিরে এলেন, ল্যাপটপের অবস্থা তখন কাহিল—কারণ ব্যাপক হিট হচ্ছে।

তবে সব সময় সবকিছুর ফল ভালো হয় না। নারীমহলে ব্যাপারটি জানাজানি হতে দেরি লাগল না বেশি। দুটি সংগঠন দ্রুত এই সাইটের বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ আনল। টনক নড়ল কর্তৃপক্ষের। রাত ১০.৩০ মিনিটে মার্কের ল্যাপটপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো নেটওয়ার্ক থেকে।

ততক্ষণে ৪৫০ শিক্ষার্থী ২২ হাজার জোড়া ছবির তুলনা করে ফেলেছে! ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে যেতে হলো মার্ককে। সেসব অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু ‘কোর্সম্যাচ’ আর ‘ফেসমেশ’ দিয়ে এর মধ্যেই সবার অজান্তে যে তৈরি হয়ে গেছে ভবিষ্যতের দুনিয়া-কাঁপানোর ভিত!-প্রথম আলো
০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/শান্ত/মো:শাই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে