মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:১৭:১১

‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের মোবাইল, প্রেশার কুকার, ট্রলি ব্যাগ দেব’

‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের মোবাইল, প্রেশার কুকার, ট্রলি ব্যাগ দেব’

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: নামেই দান! আদতে রক্তদানে পাল্টা উপহার পান!
একসময় রক্তদান শিবিরের সঙ্গে ‘স্বেচ্ছা’ শব্দটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। কিন্তু তৃণমূল জমানায় পাইয়ে দেওয়ার মানসিকতা থাবা বসিয়েছে মহতী কাজেও। কোথাও মোবাইল তো কোথাও রক্তের বিনিময়ে দাতাদের দেওয়া হচ্ছে এক কেজি ওজনের ইলিশ। সঙ্গে গুঁড়ো মশলা এবং সর্ষের তেলের প্যাকেট! কোথাও আবার উপঢৌকনের তালিকায় রয়েছে ওয়াটার ফিল্টার, প্রেশার কুকার, রান্নার বাসন, ট্রলি ব্যাগ। দিনের শেষে কার শিবিরে কত বেশি রক্তদাতা এলেন, সেটাই আসল কথা।

কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় সম্প্রতি ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের ফলেই রক্তদান শিবিরের হিড়িক। এবং রক্তদাতা জোটাতে পাল্টা ‘উপহার’।
যার প্রেক্ষিতে ‘অশনি সংকেত’ দেখছেন রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত সংগঠন এবং ব্লাড ব্যাঙ্কের সদস্যেরা। তাঁদের মতে, দীর্ঘদিন প্রচার চালিয়ে মানুষের মধ্যে একটা সচেতনতা গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু রক্তদানে ‘বিনিময় প্রথা’ তার মূলে আঘাত করছে। প্রথমত, ছোট ক্লাব বা সংগঠন আর্থিকভাবে সমর্থ না হওয়ায় এই ধরনের কাজে যুক্ত থাকায় উৎসাহ হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, উপহারের টানে অনেক রক্তদাতা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করছেন। ফলে প্রচুর পরিমাণ রক্ত নষ্ট হচ্ছে বলে জানান মেডিক্যাল ব্যাঙ্কের সম্পাদক ডি আশিস।

প্রসঙ্গত, একবার রক্ত দেওয়ার পর তিন মাস না-গেলে আবার রক্ত দেওয়া যায় না। জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হলেও একই নিয়ম। তবে উপহারের টানে অনেকেই তা লুকিয়ে যাচ্ছেন! ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামে’র সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষের মতে, সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, উপহার প্রথা চালু করায় শীর্ষে কলকাতা। অল্প পিছনে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলি। এ ব্যাপারে তাঁরা সরাসরি দ্বারস্থ হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
খুব একটা ভুল বলেননি তিনি। সূত্রের খবর, গত ১১ সেপ্টেম্বর গিরিশ পার্ক এলাকার একটি ক্লাবে উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ওয়াটার ফিল্টার। প্রশ্ন করায় এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর তারক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, স্মারক এবং ছোটখাটো উপহার দেওয়া হয়েছে। তবে এটা একেবারেই উৎসাহদানের জন্য। কারণ, আগে রক্তদান ছিল বিপ্লব। এখন উৎসব!’’

গত এক সপ্তাহে একাধিক জায়গায় ওই ‘উৎসবে’র সাক্ষী থেকেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সূত্রের খবর, সল্টলেকের একটি এবং দক্ষিণ দমদমের দু’টি ওয়ার্ডে গত রবিবারেও প্রেশার কুকার, ট্রলি ব্যাগ এবং খাবার গরম রাখার ‘হটপট’ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, সব শিবিরেরই উদ্যোক্তা হয় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর নয় শাসকদল-সমর্থিত ক্লাব।

তবে উপহার দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে খুব একটা কেউ স্বীকার করছেন না। বিতর্কের ভয়ে অনেকে রক্তদানের পর লোকচক্ষুর আড়ালে রক্তদাতাদের ঘরে ঘরে উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন। দক্ষিণ দমদম পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে যে তেমন হয়েছে, তা স্বীকার করে চেয়ারম্যান পাচু রায় বলেন, ‘‘বুঝতেই তো পারেন! এই ট্রেন্ড ভাঙতে সময় লাগবে। তবে প্রত্যেক জায়গায় আবেদন করছি।’’
‘বিনিময়প্রথা’র জন্য শাসক তৃণমূলের নেতাদেরই কাঠগড়ায় তুলে রক্তদান আন্দোলনের নেতা অপূর্ব বলেন, ‘‘কার দখলে রক্তদান শিবির থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। কিছু না বুঝেই এসব করছেন তাঁরা। উপহার কেনার এত টাকাই বা আসছে কোথা থেকে!’’ আর সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর চিকিৎসক কুমারেশ হালদারের কথায়, ‘‘আমরা এসব কিছু জানি না। কারণ, জানলেও কিছু করার নেই!’’-এবেলা
২০ সেপ্টেম্ববর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে