এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম ভূখণ্ডকে প্রতিনিয়ত শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করা মুখের কথা নয়। প্রতি মুহূর্তে এই কঠিন কাজ ভারতীয় সেনাবাহিনী হাসিমুখে সামলেছে, এখনো সামলাচ্ছে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনী জানে, কী করলে সন্ত্রাসী হামলা ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হয়। মার খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়েও তাই পরক্ষণে উঠে শত্রুকে পালটা মার দিতে দেরি হয় না তাদের। যারা প্রতিদিন ভারতকে রক্ষা করে চলেছে, আসুন, সেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর ন’টি শক্তিশালী ক্র্যাক ফোর্স সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
১. মার্কোস : মার্কোস হলো ভারতীয় মেরিন কমান্ডোদের বাহিনী। জলে-স্থলে জঙ্গি হামলা রুখতে এই বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা হয়৷ ১৯৮৭ সালে এই বাহিনীর জন্ম। বলা হয়, এই মার্কোস ট্রেনিং হলো বিশ্বের অন্যতম জবরদস্ত কড়া ধাঁচের ট্রেনিং। কমান্ডোদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষিপ্রতা বাড়িয়ে তোলা হয় নিখুঁত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। জঙ্গিরা এই বাহিনীকে বলেন, “দাড়িওয়ালা ফৌজ”। কারণ, এক এক সময় ছদ্মবেশ নিয়ে আমার-আপনার এলাকাতে ঘোরাফেরা করে মার্কোস কমান্ডোরা। দেশকে নিশ্চিত নিরাপত্তা দিতে মার্কোস কমান্ডোদের জুড়ি মেলা ভার।
২. প্যারা কমান্ডো : ১৯৬৬ সালে গঠিত হয়েছিল এই বিশেষ বাহিনী। এরা ভারতীয় সেনার উচ্চপ্রশিক্ষিত প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের ফৌজি। এই ইউনিট পৃথিবীর সব থেকে প্রশিক্ষিত কমান্ডো বাহিনীর অন্যতম। এদের বিশেষত্ব, দ্রুত উড়ন্ত বিমান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে চতুর্দিক থেকে শত্রুদের ঘিরে ফেলা। ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে এই প্যারা-কম্যান্ডোরা ভারতের জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
৩. ঘাতক ফোর্স : ঘাতকের অর্থ নিধনকারী। আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় সেনার এই বাহিনী অত্যন্ত আক্রমণাত্মক। প্রতিটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নে এক প্লেটুন করে এই কমান্ডো বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। ভারতীয় সেনার সব থেকে শক্তিশালী ও ক্ষিপ্র জওয়ানদেরই এই বাহিনীতে রাখা হয়। ঘাতক বাহিনী সব সময় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকে।
৪. কোবরা : COBRA বাহিনীর পুরো নাম হল (Commando Battalion for Resolute Action)। এটি সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের বিশেষ বাহিনী। মূলক মাওবাদী ও নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য এদের মোতায়েন করা হয়। গেরিলা যুদ্ধে এই বাহিনী বিশেষভাবে দক্ষ। ২০০৮ সালে এই বাহিনী গঠিত হয়। এই মুহূর্তে কোবরা কমান্ডোদের অস্ত্রশস্ত্র সহ খরচের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা।
৫. ফোর্স ওয়ান : মুম্বাইতে ২৬/১১ হানার পর এই বাহিনী গঠন করা হয়। এদের বিশেষত্ব এই, যে কোনো ধরনের জঙ্গি হানার মোকাবিলায় সক্ষম এই ফোর্স ওয়ান। আধুনিক অস্ত্রে বলীয়ান যে কোনো জঙ্গি আস্তানাকে শেষ করতে এই বাহিনীর লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।
৬. স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স : ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের সময় এই গোপন বাহিনী গড়া হয়। সেদিক থেকে বলা যায়, এই বাহিনী ভারতীয় সেনার সব চাইতে পুরানো এলিট ফোর্স। ভারতীয় সীমান্তে বিদেশি হামলাকারীরা ঢুকে পড়লে তাদের মোকাবিলার জন্যই নিবেদিতপ্রাণ এই ফোর্স। এখন এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। এই দল প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি রিপোর্ট দেয়। এদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না কারণ৷ এই বাহিনীর শক্তিমত্তা সব সময় গোপনে সুরক্ষিত হয়। সরকারিভাবে অনেকে এর অস্তিত্বও স্বীকার করতে চান না।
৭. এনএসজি বা ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড : ভারতে জঙ্গি হামলা রুখতে মূল শক্তি হলো এই কমান্ডো বাহিনী। দেশের ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় বহাল থাকে এই বাহিনী। এরা সব সময় সজাগ ও সতর্ক। প্রখর দৃষ্টিশক্তি ও সেইসঙ্গে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকে এই বাহিনীর। প্রতি বছর বিভিন্ন বাহিনী থেকে মনোনীত ১০০ জন এই পদের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলেও চূড়ান্তভাবে বাছাই হন তাদের মাত্র ২০ শতাংশ। এই বাহিনীর দুটি ভাগ রয়েছে। একটি স্পেশাল অ্যাকশন ফোর্স ও অপরটি স্পেশাল রেঞ্জার্স গ্রুপ।
৮. গরুড় কমান্ডো ফোর্স : ২০০৪ সালে তৈরি গরুড় কমান্ডো ফোর্স ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বাহিনী। ইন্ডিয়ার স্পেশাল ফোর্সের মধ্যে গরুড় বাহিনীতে যোগ দেয়ার প্রশিক্ষণই সব থেকে দীর্ঘকালীন। একজন বিমানবাহিনীর সদস্যকে গরুড় বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য অন্তত তিন বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। পাশাপাশি এই বাহিনী ভারতের কমান্ডো বাহিনীগুলির মধ্যে নবতর। দেশের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিমানবাহিনীর ঘাঁটিগুলিকে নিরাপদ রাখতে সদা সতর্ক এই স্পেশাল ফোর্স।
৯. এসপিজি বা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ : দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপত্তা দেয় এই বাহিনী। এই বিশেষ বাহিনীর কাজ হলো দেশের সাবেক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীদের সুরক্ষিত রাখা। প্রধানমন্ত্রীর উপর জঙ্গি হামলা বা নাশকতামূলক হামলা হতে পারে কি না, সেই তথ্য সব সময় রাখতে হয় এই বাহিনীকে। এসপিজির ট্র্যাক রেকর্ডও ঈর্ষণীয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয়ের একেবারে ভিতরকার লক্ষ্মণ গণ্ডিতে, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর গা ঘেঁসে ছায়ার মতো যে এসপিজি কমান্ডোরা থাকেন, তারা সম্পূর্ণত খালি হাতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকেন৷ তাদের প্রত্যেককেই মার্শাল আর্টে তুখোড় হতে হয়৷-কলকাতা২৪
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/শান্ত/মো:শাই