বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:০১:২৬

৩ টাকার দিনমজুর থেকে কোটিপতি!

৩ টাকার দিনমজুর থেকে কোটিপতি!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জেদ, পরিশ্রম, ইচ্ছাশক্তি আর একাগ্রতা দিয়ে যে কত কঠিন পথ পেরোনো যায় তারই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ ৫৪ বছরের তেনজিন নেগি।  ছিলেন দিনমজুর, হলেন তিনি কোটিপতি!

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিমাচলপ্রদেশের এ ব্যবসায়ী একটা সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতেন।  মজুরি ছিল সারাদিনে ৩ টাকা।  থাকতেন রাস্তার ধারে তাঁবু খাটিয়ে।

যেখানে না ছিল পানি, না ছিল বিদ্যুত্‍‌।  তবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এ মানুষটির কাছে যেটা ছিল তা হলো মাথা তুলে দাঁড়ানোর অদম্য বাসনা।  আজ তিনি কয়েক কোটি টাকার কোম্পানির মালিক।

হিমাচলপ্রদেশের খোরকাই গ্রামে জন্ম তেনজিনের। বাবা-মা তিব্বতী উদ্বাস্তু।  রাস্তাঘাট তৈরিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন।  সংসার খরচ চালাতে ১৬ বছর বয়স থেকে সেই পথে হাঁটেন তেনজিনও।  তবে নাবালক হওয়ায় তিনি পেতেন অর্ধেক মজুরি দৈনিক ৩ টাকা।

ভারত সরকার তিব্বতী উদ্বাস্তুদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করলে মধ্যপ্রদেশের সুরগুজায় একটুকরো জমি পান তেনজিনরা।  সরকারই বাড়ি তৈরি করে দেয়।  

মাঠেঘাটে কাজ করতে থাকেন তেনজিনের বাবা-মা। বড় দুই ভাই ও এক ছোট বোনকে নিয়ে পাবলিক স্কুলে যেতে শুরু করেন তেনজিন।

পড়াশোনা করে তিনি সিমলা পৌরসভায় সুপারভাইজারের কাজ পান।  সেই পদে কাজ শুরু করলেও শুরু থেকেই তেনজিনের নজর ছিল কনট্রাক্টরদের দিকে।

তারা কীভাবে কাজ করছেন, কীভাবে গোটা প্রজেক্ট হাতে নিয়ে নির্মাণকাজ করছেন, সবকিছু হাতে-কলমে শিখতে শুরু করেন পরিশ্রমী এ যুবক। এরপর একদিন ঠিক করেন নিজেই কন্ট্রাক্ট ধরে কাজ করবেন। প্রথম কাজ আসে মাত্র ৬০০ টাকার।  সেই থেকে শুরু।

তেনজিনের অভিযোগ, 'কনট্রাক্টররা যথাসময়ে সরকারের থেকে চেক পেয়ে যেতেন। তবে আমাদের টাকা মেটাতেন অনেক দেরি করে।  তখনই ঠিক করি, আমি নিজেই ব্যবসা শুরু করব।

প্রথম কাজটি খুব ভালোভাবে করায় একে একে প্রজেক্ট আসতে শুরু করে তেনজিনের হাতে।  ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে তিনি শুরু করেন নিজের কোম্পানি 'তেনজিন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড'।

ভালো কাজের সুবাদে হিমাচলপ্রদেশ সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে একে একে কাজ পেতে শুরু করে তার কোম্পানি। তেনজিন বলছেন, 'বাড়ি থেকে শুরু করে দোকানপাট, রেস্তোরাঁ, শপিং কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, স্কুল আমরা সবই তৈরি করি।

সাফল্যের চূড়ায় উঠেও অতীতকে ভোলেননি তেনজিন। সেজন্যই সিমলায় গরিবদের জন্য তৈরি করেছেন ৫০টি বেডবিশিষ্ট হাসপাতাল।  সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ান তার দিনমজুরদের।

দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে আজ তার সুখের পরিবার। কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ২৫-৪০ কোটির। তেনজিনের ভাষ্য, 'আমি শুধু কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার মনে হয়, তৃপ্তির সঙ্গে সাফল্য পাওয়ার এটাই একমাত্র পথ।'
২৮ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে