আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মরচে পড়ে গেছে। কিন্তু পুরনো ফুলদানিটিকে কখনও বাতিল করেননি ব্রিটেনের ক্যাথরিন রাওলিন্স। এক দু’দিন নয়, টানা তিন দশক ধরে এটি তার খুবই প্রিয় ফুলদানি। কিন্তু সেই প্রিয় ফুলদানিই যে এরকম বিড়ম্বনায় ফেলবে, ভাবতেই পারেননি ক্যাথরিন। আচমকাই যখন আসল রহস্য ভেদ হল, তখন মূর্ছা যাওয়ার জোগাড়। আর শিহরিত হন এই ভেবে যে, বোমাটি যদি কখনো ফেটে যেত, তখন কি হতো!
কারণ, তার প্রিয় ফুলদানিটি আর কিছুই নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বোমা। বোমাটি ফাটেনি। খোলের ভিতরে বিস্ফোরকের মাল মশলা সবই মজুত। বোমার উপরের অংশটি কিছুটা খুলে তার মাথায় প্লাস্টিকের গোলাপও গুঁজে রাখতেন ক্যাথরিন। এমন কি কখনও কখনও বিভিন্ন স্কুল-কলেজেও ফুলদানিটিকে নিয়ে যেতেন দুই সন্তানের মা ক্যাথরিন। পেশায় যে তিনি এক জন কেরিয়ার অ্যাডভাইসর।
ক্যাথরিন রলিনস জানিয়েছেন, স্কুলে পড়ার সময় যখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর, তখন স্কুলপ্রাঙ্গণে খেলার সময় তিনি এই ধাতবপাতে মোড়ানো বস্তুটি দেখতে পান। তিনি মনে করেছিলেন সেটি বোধহয় কোনও অলঙ্কার। সেটি সংগ্রহ করে পরে ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন তিনি।
সম্প্রতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডে জার্মানির বোমা হামলার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখেন রলিনস। এতে দেখা যায়, জার্মানির বোমারু বিমান ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস অঞ্চলের কভেনট্রি এলাকায়, যেখান থেকে তিনি বোমাটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, তার পাশে বোমা হামলা চালায়। এ থেকে তার মনে প্রশ্ন জাগে, তার ঘরে রাখা ফুলদানিটি কি তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কোনো বোমা?
ক্যাথরিন পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশ জানায়, 'বোমাটি এখনো সক্রিয়। এটি বিস্ফোরিত হলে ২০ মিটার দূরত্বে থাকা যেকোনো ব্যক্তির প্রাণ যেত। তা ছাড়া রলিনসের বাড়ি গুঁড়িয়ে যেত।'
বোমার ফুলদানিটি রলিনসের পরিবারের সদস্যের কাছে খুবই পছন্দের। তিনি যে স্কুলে চাকরি করেন, সেই স্কুলের শিশুদের দেখাতে বোমাটি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যদি তখন সেটি বিস্ফোরিত হতো, তাহলে কী সর্বনাশই না ঘটে যেত।
তিনি জানিয়েছেন, বোমার ওপরের অংশে থাকা কিছুটা ফাঁকা জায়গার মধ্যে গোলাপের স্টিক ঢুকিয়ে রাখেন তিনি। কিন্তু তিনি জানতেই পারেননি, এর নিচের অংশে রয়েছে তাজা বিস্ফোরক।
ক্যাথরিন জানিয়েছেন, বোমাটি এখন যেন তাঁর পরিবারের একজন হয়ে গিয়েছে। ওই ফুলদানিটিতে নিত্যনতুন টাটকা ফুলের স্টিক ভরে রাখতেন তিনি।
ক্যাথরিন আরো জানিয়েছেন, পুলিশকে ঘটনাটি জানানোর পর তারাই এসে বোমাটি সাবধানে বের করে নিয়ে যায়। পুলিশ বোমাটি নিয়ে বিস্ফোরক সরিয়ে আবার রলিনসকে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
০৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/