বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৫৯:৪২

৭৫ বছর বয়সী স্বামীর ঠ্যাং ভেঙে দিন, টেবিলে টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে বৃদ্ধার আব্দার

৭৫ বছর বয়সী স্বামীর ঠ্যাং ভেঙে দিন, টেবিলে টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে বৃদ্ধার আব্দার

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : হাতের ব্যাগে দশ হাজার টাকার পাঁচটি বান্ডিল৷ ধোপদুরস্ত পোশাকে বৃদ্ধা সটান ঢুকে পড়েছিলেন লাউডন স্ট্রিটের বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার দপ্তরে। ঢুকেই সামনের টেবিলে টাকার বান্ডিল ছড়িয়ে তাঁর নির্দেশ, ‘আমার স্বামীর বয়স ৭৫। বিবাহ -বর্হিভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন এই বয়সে! আপনাদের পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলাম। দুটো মস্তান ভাড়া করে দিন যাতে স্বামীকে শায়েস্তা করা যায়। আর কাজটা করুন পুজোর আগেই।’

ভারতের কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, বর্তমানে অ্যানাপোল সংস্থার কর্ণধার সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘প্রথমে মনে হয়েছিল ভদ্রমহিলা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁকে বসিয়ে কথা বলে বুঝতে পারলাম, তিনি বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস। তাই তদন্তটা আমাদের করতেই হল।’

ঢাকুরিয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা, বছর ৬৫ -র ওই মহিলার ঘটনাটি নিঃসন্দেহে অভিনব। তবে এ -ও ঠিক , হালফিলে কলকাতায় বিবাহ -বহির্ভূত সম্পর্ক এবং তার উপরে গোয়েন্দাগিরির সংখ্যা বাড়ছে।

সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘শুধুমাত্র আমার সংস্থার হিসেবই যদি ধরেন, তা হলে বলতে পারি মাসে পঁচিশ থেকে তিরিশটি কেস আমাদের কাছে আসছে যাঁদের গড় বয়স ৩৫ থেকে ৫৫ -র মধ্যে।

তবে মহিলাদের থেকে এই ধরনের অভিযোগ বেশি আসে। আমাদের তদন্ত করতে হয়। কিন্তু সুপারি কিলারের তদন্ত এগোল কী ভাবে ? বৃদ্ধার অভিযোগ পেয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দারা ঢাকুরিয়ায় গিয়ে জানতে পারেন, সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া ওই বৃদ্ধ রোজ দুপুরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁর বাড়ির সামনের সদর রাস্তায় ঠিক তখনই এক মধ্যবয়সি মহিলা আসেন। ইঙ্গিতে দু’জনের মধ্যে কথা হয়। এর পরেই ওই বৃদ্ধ ঘুরে আসার নাম করে বাইরে যান। ট্রেনে করে যান গড়িয়ায় ওই মহিলার বাড়িতে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে বৃদ্ধ ফিরে আসেন। এমনকি মাসে মাসে নিজের পেনশনের একটা অংশ তুলে দেন ওই মহিলার হাতে। ভদ্রলোকের পাশবই থেকে জানা গিয়েছে সেই তথ্যও। এ বার সমস্যায় পড়েন গোয়েন্দারা। অভিযুক্ত এই দ্বিতীয় মহিলা তা হলে কে?

তদন্তে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অ্যানাপোলের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, এক সময়ে বৃদ্ধের অফিসেই ওই মহিলার স্বামী চাকরি করতেন। ফলে এই ভদ্রলোকের সঙ্গে সহকর্মীর স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বৃদ্ধাকে জানানো হয় পুরো তথ্য। কিন্তু তিনি দমতে রাজি নন। বৃদ্ধা গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেন, তাঁর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেটাই প্রয়োগ করতে চান এ বার।

কী সেই পরিকল্পনা? এ বার তিনি সত্যরঞ্জনকে বলেন, ‘আপনারা এই টাকা দিয়ে কয়েকজন মস্তান ভাড়া করুন। কিন্তু বলে দেবেন, যেন ওঁকে প্রাণে মেরে না -ফেলে। শুধুমাত্র হাত -পা ভেঙে দিলেই চলবে। তা হলে ওঁকে বাড়িতেই থাকতে হবে। বাইরে কোথাও যেতে পারবে না৷ তখন আমি বুঝে নেব।’

সংস্থার পক্ষ থেকে অবশ্য বৃদ্ধাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের পক্ষে এ কাজ করা অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে পুলিশ বা আদালত পর্যন্ত বিষয়টি গড়ালে সমস্যায় পড়বেন তিনিই। অবশ্য এই সতর্কতা ভোলাতে পারেনি তাঁকে। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি, পুজো শেষ হলেই আবার সংস্থার দন্তরে যাবেন৷ বয়সের দিক থেকে এই ঘটনাটি খানিকটা ব্যতিক্রমী।

তবে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির বক্তব্য, তুলনায় যে সব কমবয়সিরা স্বামীর উপরে নজরদারি করাতে চান, তাঁরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরকীয়ার অভিযোগ আনেন। একই সন্দেহ নিয়ে আসেন স্বামীরাও।

ঢাকুরিয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে মনোবিদ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এই বয়সে এক ধরনের হতাশা এমনিতেই আসে। এক একজনের ক্ষেত্রে সেটা একেক রকম। অনেকে এই হতাশা নিজের উপরে প্রকাশ করেন। তাঁরা হয়তো আত্মহত্যা করে বসেন। আবার অনেকে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে এ রকম কাণ্ড ঘটান। তবে দু’জনেরই কাউন্সেলিং করানো প্রয়োজন।’ -এই সময়।
০৫ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে