শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০৯:১৬:২২

হুজুরবেশি ছিনতাইকারী: ‘গহনাগুলো খুলে দাও, তোমার মঙ্গল হবে’

হুজুরবেশি ছিনতাইকারী: ‘গহনাগুলো খুলে দাও, তোমার মঙ্গল হবে’

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: 'গহনাগুলো খুলে দাও, তোমার মঙ্গল হবে' এই বলে পায়জামা-টুপি পড়া দাড়িওয়ালা কোনো ব্যক্তি হঠাৎ সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। আর তখনই নির্দ্বিধায় গলার হার, হাতের বালা, চুড়ি ও আংটিসহ মূল্যবান স্বর্ণালংকার হুজুরবেশি ছিনতাইকারীদের হাতে তুলে দিয়ে বেহুঁশের মতো বাড়ি ফিরছে নারীরা।

এটি সিনেমা বা নাটকের কাহিনীর মতো মনে হলেও কিশোরগঞ্জ শহরে অহরহই ঘটছে এমন ঘটনা। হুজুরবেশি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের অভাবনীয় ভয়ংকর সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। ঘটনার শিকার নারীরা ডাক-চিৎকার কিংবা কাউকে বলার মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আগেই নির্বিঘ্নে চম্পট দেয় হুজুরবেশি ছিনতাইকারীরা।

গত এক মাসে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে স্বর্ণের গলার হার, হাতের বালা, চুঁড়ি ও আংটি খুইয়েছেন অন্তত এক ডজন নারী।

জানা গেছে, নামাজ ও ইবাদত বন্দেগীর পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদের আশপাশ এলাকায় হুজুরের ছদ্মবেশে অবস্থান নেয় এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। তাদের ফাঁদে পড়ে গলার হার, হাতের বালা, চুঁড়ি ও আংটিসহ মূল্যবান স্বর্ণালংকার খোয়াচ্ছে নারীরা।

স্বর্ণের গহনা সজ্জিত নারীদের দেখতে পেলেই হুজুরবেশি প্রতারকচক্র সামনে দাঁড়িয়ে কেমন আছেন মা, কোথায় যাচ্ছেন- এমন এক-দুটি বাক্য বিনিময় করেই হাত বাড়িয়ে দিয়ে অলংকার খুলে দিতে বলে।

অভাবনীয় ভয়ংকর সম্মোহনী শক্তির কারণে 'চাহিবা মাত্রই' দিশাহীন হয়ে পড়ে নারীরা। হুজুরবেশি প্রতারকদের হাতে স্বর্ণালঙ্কার কিংবা টাকা ভর্তি ভ্যানেটি ব্যাগ তুলে দিয়ে অনেকক্ষণ স্বাভাবিক জ্ঞানহীন অবস্থায় থাকতে হয় তাদের। অহরহ এ ধরনের ঘটনা ঘটায় শহরের নারীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

গত বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর কিশোরগঞ্জের জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সরকারি মসজিদের সামনে ওই হুজুরবেশি এক প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে নিজের হাতে গলার হার, হাতের চুড়ি ও আংটিসহ সব স্বর্ণালংকার তুলে দেন কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা।

গত সোমবার কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে সদর উপজেলার হাজিরগল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের স্ত্রী নুরুন্নাহার ওই মসজিদের কাছে হুজুরের ছদ্মবেশি প্রতারকের হাতে তুলে দেন গলার হার ও হাতের স্বর্ণের বালা।

একই ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন শহরের নগর মাতৃসদনের স্বাস্থ্য সহকারী হাফসা আক্তার। শহরের ঈশাখা সড়কের বাসিন্দা হাফসা আক্তার জানান, তিনি মার্কেটে যাওয়ার উদ্দেশে বের হলে তার বাসার কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত নূর মসজিদের সামনে হুজুরবেশি এক লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে কুশল জিজ্ঞেস করেই হাত বাড়িয়ে দেয়। আর  তখন তিনি স্বর্ণের গলার হার, হাতের ব্যাসলেট ও আংটি মুহূর্তের মধ্যেই তার হাতে তুলে দেন।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, 'আমার বাসা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পেছনে। বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলে আমার মেয়ের খোঁজ নিয়ে পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। কিশোরগঞ্জের জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সরকারি মসজিদের সামনে আসতেই পাঞ্জাবী, টুপি ও লুঙ্গি পড়া দাঁড়িওয়ালা শ্যামলা বর্ণের এক হুজুরবেশি লোক কেমন আছো বলে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে- গহনাগুলো খুলে দাও। এ সময় আমি কীভাবে নিজের হাতে স্বর্ণালঙ্কার খুলে তার হাতে তুলে দিলাম তা নিজেও বলতে পারি না।

তিনি বলেন, 'ঘটনার ২০-২৫ মিনিট পর আমি যখন বাসার কাছাকাছি আসি তখন পাশের বাসার এক মহিলা আমাকে প্রশ্ন করে আপা কোথায় গেছিলেন? তখন আমি কিছুটা সম্বিত ফিরে পাই এবং দেখি আমার গলার চেন, হাতের চুঁড়ি ও আংটি নেই। তখন আমি কোনো রকমে এসব কথা বললে লোকজন আমাকে নিয়ে ওই মসজিদের পাশে যায়। কিন্তু সেখানে ওই হুজুররূপী প্রতারককে আর পাওয়া যায়নি।'

নগর মাতৃসদনের স্বাস্থ্য সহকারী হাফসা আক্তার জানান, হুজুররূপী ওই প্রতারকের ভয়ংকর ও অভাবনীয় সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। গহনাগুলো খুলে দাও, তোমার মঙ্গল হবে- বলার পর কিছু বুঝে উঠার আগে সকল স্বর্ণালংকার খুলে তার হাতে তুলে দিই। আমি স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।'

তিনি বলেন, 'ঘটনাটি আমার বাসার কাছে হলেও যখন আমি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে বলতে পেরেছি ততক্ষণে ওই হুজুররূপী প্রতারক নির্বিঘ্নে উধাও হয়ে যায়।'

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেন জানান, হুজুরবেশি প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসব নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।-যুগান্তর
১৫ অক্টোবর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে