শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:৪৪:০৫

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত‌্যুতে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত‌্যুতে বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

নিউজ ডেস্ক : কিউবার বিপ্লবী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত‌্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ৯০ বছর বয়সে স্থানীয় সময় গতকাল রাত ১০টা ২৯ মিনিটে মারা যান। বিপ্লবী নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কিউবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

শনিবার এই বিপ্লবী নেতার মৃত‌্যু সংবাদ জানার পরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তার অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে দাঁড়ানো ফিদেল কাস্ত্রোকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার সঙ্গে কিউবার এই নেতার সম্পর্কের কথা স্মরণ করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ফিদেলের অবদানের কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন‌্যা।

কিউবায় কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাইলফলক বা আইকন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তাকে বিপ্লবী নেতা হিসেবে সম্মান করেন বেশির ভাগ মানুষ। রকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাকে হত্যা করতে ৬০০ পরিকল্পনা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনাকে ভন্ডুল করে দিয়ে কিউবাকে একহাতে তিনি শাসন করেছেন ৫০ বছরের বেশি। তিনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে রক্ষা করতে সংগ্রাম করে গেছেন।

এই বিপ্লবী নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের রাজনীতিক নেতারা। শোক প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিউবায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। এক টুইটে তারা বলেছে, চিরকালের কমান্ডার! ২৫শে নভেম্বর স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২৯ মিনিটে কিউবা বিপ্লবের কমান্ডার ইন চিফ ফিদেল ক্যাস্ত্রো চির বিদায় নিয়েছেন। লন্ডনের সাবেক মেয়র কেন লিভিংস্টোন তাকে বিংশ শতাব্দীর একজন ‘জায়ান্ট’ বলে আখ্যায়িত করে তাকে স্যালুট জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ফিদেল ক্যাস্ত্রো যে বিপ্লব এনেছিলেন কিউবায় তা যেমন আশার সঞ্চার করেছিল, তেমনি পরে তা হতাশায় পরিণত হয়েছে।

ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুতে একজন মহান বন্ধুকে হারিয়েছে ভারত। এক টুইটে এ কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টুইটে তিনি লিখেছেন, ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুতে যে বেদনা তাতে কিউবার সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক। আমরা এই বেদনাময় সময়ে কিউবার সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব আইকনিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার মধ্যে ফিদেল ক্যাস্ত্রো অন্যতম। এই মহান বন্ধুকে হারিয়ে শোক প্রকাশ করছে ভারত।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা বলেছেন, ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন কিউবার সার্বভৌমত্বের অধিকার আড়ায়ে ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায়। একই সঙ্গে বিশ্বের নিষ্পেষিত অন্য মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন তিনি। আমাদের বর্ণবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বন্ধু ছিলেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তার মৃত্যুতে নেলসল ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা কিউবার জনগণ ও সরকারের প্রতি তাদের গভীর বেদনা ও সহমর্মিতার কথা ঘোষণা করেছেন।

ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচেভ। তিনি বলেছেন, ফিদেল ক্যাস্ত্রো উন্নয়নের পথ অনুসরণ করেছিলেন। ফিদেল ক্যাস্ত্রো ছিলেন মিখাইল গর্বাচেভের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সেই বন্ধুকে স্বরণ করে গর্ভাচেভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন কিউবার বিরুদ্ধে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন দেশকে শক্তিশালীভাবে সঠিক পথে নিয়ে গিয়েছেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তার ওপর ঔপনিবেশিক চাপ ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের দেশকে ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উন্নয়নের স্বাধীন পথে নিয়ে গিয়েছেন। তার সঙ্গে আমার মতোর খুব মিল ছিল। আমরা মতের বিনিময় করেছি। আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই বন্ধুত্ব টিকে ছিল। বিংশ শতাব্দীতে এসে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে সহযোগিতার এক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সবই করেছেন ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তার সময় শেষ হয়ে গেছে। এতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। তিনি চিরদিন আমাদের স্মৃতিতে থাকবেন। একজন অসাধারণ রাজনীতিক, একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ ও আমাদের বন্ধু হয়ে তিনি রয়ে যাবেন।

ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে আইকনিক বিপ্লবী নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার কাম রাজনীতিক ইমরান খান। তিনি টুইটে লিখেছেন, বিশ্ব একজন বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে হারালো। তিনি তার দেশকে সামরাজ্যবাদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তিনি কিউবাকে একটি আত্মমর্যাদাবান জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। উপেক্ষা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন। এর মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিকতা বিরোধী লড়াইয়ে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। আমরা পাকিস্তানিরা সব সময়ই কিউবার সমর্থনের কথা স্মরণ করি। বিশেষ করে ২০০৫ সালের ভূমিকম্পের পরবর্তী অবস্থায় তাদের সমর্থন আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।

২৬ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে