সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৫১:১৮

বহু মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু রুখে দিয়েছেন এই মানুষটি

 বহু মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু রুখে দিয়েছেন এই মানুষটি

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: ছুটির দিনগুলো কাটানোর জন্য কতরকম প্ল্যানই না থাকে আমাদের। সিনেমা দেখে, বই পড়ে কিংবা কখনও নিতান্তই আলিস্যির মধ্যে দিয়ে কেটে যায় শনি-রোববারের দুপুরগুলো। কখনও আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি শর্ট ট্রিপে। একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র্য আনতে হাতে ওই দু’টোই দিন।

অনেকের আবার তা-ও নেই। হপ্তাভর কাজের পর দম ফেলার জন্য পাতে শুধু রবিবার। তাই এই দিনটাকে অনেক বুঝেশুনে খরচা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চিনের বাসিন্দা ৪৮ বছরের চেন সি কীভাবে তাঁর উইকেন্ডগুলো কাটান, সেটা জানার পর অবাক লাগতেই পারে। তবে একই সঙ্গে তাঁকে সেলাম না জানিয়েও পারবেন না।

সে কথায় না হয় সময় মতোই আসা যাবে। তবে কর্মক্ষেত্রে নিয়মকানুন-এর কড়াকড়ির ব্যাপারে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা হয় চিন-কে। দিনের পর দিন কঠোর নিয়মের বেড়াজালে বন্দি থাকার ফলে মানসিক অবসাদে ভোগেন, এমন মানুষের সংখ্যা সেখানে নেহাত কম নয়।

স্বাভাবিকভাবেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন অনেকেই। এজন্য সেখানকার বহুতল অফিসগুলির বাইরে অনেক সময় নেট-এর জাল বিছানো থাকে, যাতে ছাদ থেকে কেউ নীচে ঝাঁপ দিলে বেঁচে যায় তাঁর প্রাণ।শুধু অফিস বিল্ডিংগুলি নয়, ইয়াংসি নদীর উপর অবস্থিত নানকিং ইয়াংসি ব্রিজটিও সাক্ষী রয়েছে বহু আত্মহত্যার।

এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০০০-এর উপর মানুষ আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে এই ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন নদীর জলে। তবে চিনের বাসিন্দা চেন সি অনবরত চেষ্টা করে চলেছেন এই সংখ্যাটা যাতে ভবিষ্যতে আর না বাড়ে, তার জন্য। তিনি প্রতি সপ্তাহে ছুটি পেলেই একবার করে চলে আসেন এই ব্রিজে। তারপর কী করেন জানেন?

যাঁরা আত্মহত্যা করতে এখানে আসেন, তাঁদের বাঁচান। মৃত্যুর দরজা থেকে আবার ফিরিয়ে দেন জীবনের পথে। গত ১৩ বছর ধরে এই করেই তিনি অতিবাহিত করছেন তাঁর উইকেন্ডগুলি। এযাবৎ ৩০০-র বেশি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন চেন। প্রত্যেকবার যখনই তিনি দেখেন কেউ লাফ দিতে যাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে গিয়ে জাপটে ধরেন তাঁকে।

এমনকী প্রাণ বাঁচানোর পরে অনেক সময়ে তাঁদের থাকার বন্দোবস্তও করে দিতে হয় চেন-কে। কারণ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, যাঁরা এই পর্যন্ত ব্রিজে গিয়েছেন আত্মহত্যা করতে, তাঁদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের। অভাবগ্রস্ত জীবন নিয়ে তাঁরা  হতাশ। চেন চেষ্টা করেন সেই সমস্ত মানুষের জীবনের অভাবজনিত হতাশা দূর করতে।


একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চেন জানিয়েছেন, তিনি নিজেও একসময় অবসাদে ভুগতেন নিজের পেশা নিয়ে। জীবন নিয়েও হতাশ থাকতেন অধিকাংশ সময়ে। সে সময় এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁকে সাহায্য করেন। তাঁর থেকে উৎসাহ পেয়ই চেন ঘুরে দাঁড়ান। পরবর্তীকালে একটি ব্যবসা শুরু করেন এবং বিয়েও করেন।

বর্তমানে তাঁর একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘একা থাকতে থাকতে এমন কিছু সময় আসে, যখন জীবনটা দুর্বিষহ লাগে আমাদের। ওই সময়গুলোয় শুধুমাত্র অন্যদের থেকে একটু উৎসাহ দরকার।’প্রত্যেক শনি ও রবিবার বাড়ি থেকে ২০ কিলেমিটার দূরের এই ব্রিজে পাড়ি জমান চেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকেন।

তাঁর থেকে প্রেরণা পেয়েই নিকটবর্তী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগের ছাত্ররা ইদানীং এখানে আসেন চেন-কে সঙ্গ দিতে। চেন যাঁদের সাহায্য করেন, তাঁদের কাউন্সেলিং-এর দায়িত্ব নেন এই ছাত্ররা। তাঁর এই উদ্যোগ যে নয়া নজির গড়ল পৃথিবীর ইতিহাসে, তা বলাই বাহুল্য।-এবেলা
২৮ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪ডটকম/টি.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে