রাস্তার ধুলো ওড়ালেই মিলছে সোনা!

শশী ঘোষ: ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’ এই বাংলা প্রবাদটি হয়তো সকলের জানা। অনেকে হয়তো ঠাট্টা করেও বলেন ছাই থেকে যদি রত্ন পাওয়া যায় তবে আর কি লাগে। কিন্তু সত্যি বলতে এই কথাটির যথার্থ মানে খুঁজে পাওয়া যাবে বড় বাজার কিংবা বউ বাজারে গেলে। ভোর হতে না হতে ওখানের মানুষজন হাতে একটা ঠোঙা নিয়ে লেগে পড়েন ধুলো কুড়োতে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই থাকে এই দলে। বেশ দারুন জমজমাটি ব্যাপার। প্রথম দেখে হয়তো অনেক ভ্যাবাচ্যাকা খাবেন কিংবা গোটা কয়েক ভিমরিও খেতে পারেন। অনেকেতো বলেই ফেলেন একিরে বাবা ধুলো কুড়নোর এত হিড়িক। কি আছে এই ধুলোতে! মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক দামী জিনিস লুকিয়ে আছে এই ধুলোতে। এই দিয়ে অনেকের সংসারের রুজি রোজগার চলে রীতিমত। এতদূর শুনে নিশ্চয় মনে হচ্ছে বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ব্যাপার।

ইন্ট্রো বড় না করে একটু এবার পরিস্কার করে বলা যাক। শিয়ালদহের বউ বাজার অথবা কলকাতার বড়বাজার মূলত পরিচিত সোনা পট্টি হিসেবে। এখানে শুধু যে বড় বড় সোনার দোকান আছে শুধু তা নয় এর সঙ্গে লাইন ধরে গলিগুলোতে আছে ছোট খাটো অনেক সোনার কারিগরদের দোকান। যারা দিনের ২৪ ঘণ্টায় সোনার গয়না বানানোর কাজ করে। গয়না তৈরির সময় যে সোনার গুঁড়ো মাটিতে পড়ে তা এতটাই সুক্ষ যে ব্যবহার করা যায়না। সকালে এবং রাতে দোকান যখন ঝাঁট দেওয়া হয় তখন ধুলোর সঙ্গে সোনার গুঁড়ো মিশে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানেই এই সোনা মেশানো ধুলো কুড়নোড় জন্য আশে পাশের অনেক বস্তির লোকেরা লেগে পড়ে। সকালে দোকানপাট খোলার আগে এরা ভিড় জমাতে থাকে। যে আগে যাবে সে অনেক বেশী ধুলো কুড়োতে পারবে তার তত বেশী লাভ করতে পারবে।

ধুলো থেকে সোনা বাছাইয়ের কাজটা করেন কি করে? এরা সারাদিন যা ধুলো জমায় তা রাতে জলে ভিজিয়ে রাখে। জলের মধ্যে সব ধুলো নিচে থিতিয়ে যায় সোনার গুড়ো জলে ভেসে ওঠে তা ছেঁকে আলাদা করে নেয়। এই প্রক্রিয়াতে চলে গোটা কাজটা। বউ বাজারের এক সোনার দোকানদার বলছেন ধুলো থেকে সোনা বাছাইয়ের কাজটা বেশ অনেকদিন থেকে চলে আসছে। এই কাজের সঙ্গে অনেকে যুক্ত আছে। সোনার গুঁড়োগুলো অল্পদামে কিনি এদের থেকে। এবার নিশ্চয় ভাবছেন বেশ মজার একটা ব্যাপার ধুলো কুড়িয়ে টাকা ইনকাম করা যায় তা এদের না দেখলে হয়তো জানা যেতো না।-কলকাতা২৪
৮ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস