এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: একটি শহরের সকল রাস্তাই পানির, ভাবা যায়! পানির রাস্তা হলেও পথটিকে নদীপথ বলা যায় না। কারণ রাস্তাগুলো মানুষের তৈরি, একদম কৃত্রিম। পানির রাস্তা হওয়ায় শহরটিতে নেই কোন যান্ত্রিক যানবাহন, নেই কোনো যানজট, ভিড়ভাট্টা। সত্যিই এ এক আজব শহর। যার অবস্থান ইউরোপের দেশ হল্যান্ডের গেইথর্নে।
শহরটির বাসিন্দারা যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ নির্ভর করেন জলপথের ওপর। শহরের প্রতিটা বাড়ির সামনে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে খাল কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাতে সবাই নৌকায় করে যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহনের কাজটা সারতে পারেন। আর্থিক সক্ষমতা থাকার পরও শহরবাসীদের কারো গাড়ি কেনার উপায় নেই। কারণ কোনো রাস্তাই তো নেই গেইথর্নে।
আর গাড়ি নেই বলেই নেই কোনো কালো ধোঁয়ার ঝামেলা কিংবা হর্নের বিকট শব্দ। যদি নৌকায় চড়তে ভালো না লাগে তাহলে একটি সরু গলিপথ আছে শহরটিতে। সে পথে সাইকেল চালিয়ে কিংবা হেঁটে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাতায়াত করা যায়। শহরটির পোস্টম্যানও একটি ছোট নৌকায় করে এবাড়ি ওবাড়িতে চিঠি বিলি করেন।
২৬০০ জনসংখ্যার এই শহরটি কিছুদিন আগেও একটি গ্রাম ছিল। কিন্তু পর্যটন খাতে এই ছোট্ট গ্রামটির অংশগ্রহণের কারণে গ্রামটিকে ছোট্ট শহরের মর্যাদা দেয় কর্তৃপক্ষ।
জলপথের শহর বলেই প্রতিবছর গেইথর্নে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। ১৯৫৮ সালে ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা বার্ট হ্যান্সট্রা তাঁর বিখ্যাত হাসির ছবি ফানফেয়ার শুটিংয়ের জন্য গেইথর্নকে বেছে নিয়েছিলেন। এর পরই মূলত প্রচারের আলোয় এসেছিল তখনকার ছোট্ট গ্রামটি। তারপর এই শহরে আরো অসংখ্য সিনেমার শুটিং হয়েছে। পর্যটকরা শহরটিকে ভেসিন অব নর্থ কিংবা ভেনিস অব নেদারল্যান্ডস নামে ডাকতে ভালোবাসেন। গেইথর্ন গ্রামের বাসিন্দা রোজেন বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রামকে খুবই ভালোবাসি। রাস্তা নেই বলে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। বরং আমরা এই ব্যাপারটাকে উপভোগ খুব করি।’
খালের পানি কীভাবে এতটা পরিষ্কার থাকে; এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের গ্রামের ছেলেবুড়ো সবাই যথেষ্ট সচেতন। আমরা এই পানিতে কোনো কিছু পরিষ্কার করি না। গোসল করাও একেবারেই নিষেধ। যন্ত্রচালিত নৌকা থেকে তেল নিঃসরণ হয় তাই ওই নৌকা আমাদের এখানে নিষিদ্ধ।’
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ