রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:০২:৫১

গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে যা করবেন, এই নির্দেশনা মানছেন তো?

গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে যা করবেন, এই নির্দেশনা মানছেন তো?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাসা-বাড়িতে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ত্রুটিপূর্ণ ব্যবহার। সঠিক নিয়মে সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই সিলিন্ডার ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অগেই অবগত হতে হবে।
 
এ বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, আমদানি এবং দেশে তৈরি করা এলপি গ্যাস ও গাড়ির গ্যাস সিলেন্ডারগুলো সবই মানসম্মত। কারণ আমদানি করা সিলিন্ডারের মডেল, ধাতব পাত্রের বিবরণ ও বডি কেমন হবে তা সবই আইনে নির্ধারিত রয়েছে। সে অনুযায়ী বিস্ফোরক পরিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। ছাড়পত্র নেয়ার পর যখন আমদানি হয় তখনও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয়া হয়। আর দেশীয় প্রতিষ্ঠান- যারা এসব সিলেন্ডার উৎপাদন করে তারাও জাপান থেকে শিট এনে এখানে শুধু ঝালাই করে জোড়া দেন। ফলে প্রতিটি সিলিন্ডার মানসম্মত হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটে ব্যবহারের ত্রুটি থেকে। এজন্য প্রয়োজন অধিকতর সচেতনতা।
 
ব্যবহারকারীদের সচেতন করার জন্য তারা (বিস্ফোরক পরিদফতর) বেশ কিছু লিফলেট, ব্যানার ইত্যাদি তৈরি করেছেন- যাতে এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।

শামসুল ইসলাম আরও বলেন, এজন্য মূলত জনসাধারণ ও ব্যবহারকারীদের সতর্ক করতে হবে। তারা সচেতন হলেই এলপি গ্যাস বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
 
গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নির্দেশনা-
♦ এলপি গ্যাস সিলিন্ডার খাড়াভাবে রাখা, গ্যাস সিলিন্ডারকে মেঝের সমতলে রাখা এবং চুলা বা অন্য কোনো এলপিজি ব্যবহার যন্ত্রকে সিলিন্ডারের চেয়ে উঁচুতে রাখা। সিলিন্ডারের সেফটি ক্যাপ সিলিন্ডারের সঙ্গে রাখা। ব্যবহার শেষে সিলিন্ডার বাল্বের মুখে সেফটি ক্যাপ আটকে রাখা ও রান্নার সময় দরজা-জানালা খোলা রাখা।
 
♦ ব্যবহারের আগে সিলিন্ডারের লেবেল ও মেটেরিয়াল সেফটি ডাটা শিট (এমএসডিএস) পরে নেয়া উচিত। সিলিন্ডার এমন স্থানে খাড়াভাবে রাখা উচিত যেখানে যানবাহন বা মানুষ চলাচল করে না। ঠাণ্ডা ও অবাধ বাতাস চলাচল করে এরূপ স্থানে সিলিন্ডার রাখতে হবে।

♦ প্রচণ্ড ধাক্কা বা পড়ে যাওয়া থেকে সিলেন্ডারকে রক্ষা করতে হবে। সিলেন্ডার ব্যবহারের সময় সেফটি জুতা এবং হাতে মোজা ব্যবহার করা উচিত। উপযুক্ত ট্রলির সাহায্যে সিলিন্ডার স্থানান্তর করতে হবে।
♦ দাহ্য ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ পরীক্ষা খোলা আগুন দিয়ে না করে সাবানের ফেনা দিয়ে করতে হবে। তাপ ও আগুনের উৎস এবং দাহ্য বস্তু ও গ্যাস থেকে সিলেন্ডার দূরে রাখতে হবে।
♦ গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার ও গ্যাসশূন্য সিলিন্ডার আলাদা রাখতে হবে।
♦ সিলিন্ডার এবং বাল্বে তেল বা গ্রিজ ব্যবহার করা যাবে না।
♦ বাল্ব খোলা এবং বন্ধ করার সময় অযথা বল প্রয়োগ করা যাবে না।
♦ সিলেন্ডারে কোনো ক্ষতি বা আঘাতের দাগ মেরামত বা রং করে ঢেকে দেয়া যাবে না। সিলিন্ডারের কোনো ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ফেরত দিতে হবে।
♦ প্রয়োজনীয় জরুরি ফোন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
♦ ব্যবহারের পর গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখতে হবে। আগে ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে তারপর চুলা জ্বালাতে হবে। রান্না শেষে প্রথমে চুলা বন্ধ করতে হবে এবং তারপর সিলেন্ডারের সংযোগ বন্ধ করতে হবে। জ্বলন্ত চুলা থেকে পাত্র নামানো যাবে না।
♦ গ্যাসের গন্ধ পেলে লাইট, ফ্যানসহ যাবতীয় ইলেকট্রিক সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। গন্ধ পেলে ঘরের দরজা খুলে দিতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়তে হবে।’
♦ সিলেন্ডার সরাসরি সূর্যের আলো, বৃষ্টি এবং তাপ থেকে নিরাপদ দূরুত্বে রাখতে হবে। ব্যবহারের পর অবশ্যই রেগুলেটর সুইচ বন্ধ কর দিতে হবে।
♦ সিলেন্ডার খালি হোক বা পূর্ণ হোক ব্যবহারের পর অবশ্যই ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হবে। রান্নার সময় নাইলনের জামা ব্যবহার না করে সুতি কাপড়ের অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে।
♦ নিজে বা অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে সিলেন্ডার মেরামত করানো যাবে না।
♦ সিলিন্ডারের আশপাশে শুকনো কাঠ-কয়লা অথবা অন্য কিছু জ্বালানো যাবে না। কখনও বদ্ধ স্থানে সিলিন্ডার রাখা যাবে না।
♦ দুর্ঘটনা এড়াতে দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ সঞ্চালন পাইপ ব্যবহার করতে হবে। রান্না করা অবস্থায় চুলা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না। তাপ নির্গত হয় এমন কোনো বস্তু সিলিন্ডারের এক মিটারের মধ্যে রাখা বা ব্যবহার করা যাবে না।
♦ সিলিন্ডারের পাশে ধূমপান করা যাবে না।
 
সিলিন্ডার তৈরি, আমদানি ও বিক্রির সতর্কতা প্রসঙ্গে বিস্ফোরক অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত ডট ফোর বি সিলেন্ডার আমদানি ও বাজারে বিক্রি করতে হবে। সিলেন্ডারে রং লাল হওয়া, লেভেলে গ্যাসের নাম, গ্যাস পূরণকারীর নাম এবং ঠিকানা থাকতে হবে। প্রত্যেকটি সিলিন্ডারে সতর্কীকরণ চিহ্ন থাকতে হবে। সিলেন্ডারের রং পরিবর্তন করা যাবে না। এরকম বেশ কিছু নির্দেশনা তরলীকরণ পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিধিমালা ২০০৪-এ বর্ণিত আছে। সিলেন্ডার তৈরি ও বিক্রির ক্ষেত্রে সেগুলো মানা বাধ্যতামূলক। -যুগান্তর।
১৮ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে