এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিন নিজ নিজ দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আরো বাড়ানো ও শক্তিশালী করার সঙ্কল্প নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রতিরক্ষা প্রধানদের সাথে তার প্রথম বৈঠকে বলেছেন, ২০১৭ সালে তার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে পারমাণবিক সামর্থ্য আরো শক্তিশালী করা। পরে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও টুইটার বার্তায় একই ধরনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
দুই শক্তিধর দেশের এই সঙ্কল্পে নতুন করে পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের সঙ্কল্পের জবাবে নতুন টুইটারে তার আগের বক্তব্যকেই সমর্থন করেছেন। এতে মনে হচ্ছে বিশ্বের সম্বিত ফিরে পেতে আরো দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হবে। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন হাজার হাজার পারমাণবিক বোমা ও লাখ লাখ কিলো টন এই অস্ত্র নির্মাণের সরঞ্জাম মজুদ রয়েছে।
আর্ম কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বর্তমানে ১৫ হাজার ৪০০টি পরমাণু অস্ত্র মজুদ রয়েছে। এর বেশির ভাগ দু’টি দেশের হাতে রয়েছে। এ দেশ দু’টি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এর মধ্যে ১০ হাজার অস্ত্র সেনাবাহিনীর কাছে কার্যোপযোগী অবস্থায় আছে এবং অবশিষ্ট অস্ত্রগুলো ধ্বংস করার অপেক্ষায় রয়েছে।
কয়টি দেশের পারমাণবিক অস্ত্র আছে?
বিশ্বে ঘোষিত পারমাণবিক শক্তিধর দেশের সংখ্যা পাঁচটি। তারা হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব দেশকে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হিসেবে স্বীকৃত দিয়েছে।
এসব দেশ পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বা নির্মাণ নিয়ে কোনো ছলনার আশ্রয় নেবে না এবং চিরকালের জন্য তারা যে তা মজুদ করে রেখে দিতে পারবে, তা নয়। এ চুক্তির আওতায় তাদেরকে পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের বৈধতা দেয়া হয়েছে। তৎসত্ত্বেও এসব দেশও পরমাণু অস্ত্র পরিহার করতেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
তবে এর বাইরেও চারটি দেশের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। এগুলো হলো পাকিস্তান, ভারত, ইসরাইল ও উত্তর কোরিয়া। এসব দেশ কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, এ দেশগুলোয় ৩৩৮টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে এ সংখ্যাটা রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে খুবই নগণ্য। কারণ বিশ্বের ৯৩ শতাংশ পারমাণবিক অস্ত্র এই দুই দেশের হাতে রয়েছে। এই অস্ত্র কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
বিশ্ব তার হাতে থাকা ১৫ হাজার ৪০০টি পরমাণু বোমা দিয়ে কোটি কোটি মানুষ হত্যা এবং অসংখ্য নগরীকে নিমেষেই গুঁড়িয়ে দেয়া যাবে। টেলিগ্রাফের একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্মিলিতভাবে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে তার ধ্বংস ক্ষমতা ছয় হাজার ৬০০ মেগাটন। সারা বিশ্ব প্রতি মিনিটে যে পরিমাণ সৌরশক্তি গ্রহণ করে তার ১০ ভাগের এক ভাগ রয়েছে ওই পারমাণবিক অস্ত্রের।
নিউকম্যাপ ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, মার্কিন অস্ত্রাগারে সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন বৃহৎ যে বোমা তার নাম বি-৮৩। এটি প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ১৪ লাখ লোক হত্যার ক্ষমতা রাখে। এ ছাড়া তাপ বিকিরণে আহত হবে ৩৭ লাখ মানুষ। এই বোমার বিকিরণ ছড়াবে ১৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধজুড়ে।
অনুরূপভাবে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ টাসার বোমা যেটি ইউএসএসআর নামে পরিচিতি। এটি নিউ ইয়র্কে আঘাত হানতে সক্ষম। ধারণা করা হয় এটি ৭৬ লাখ মানুষ হত্যা করতে পারে এবং ৪২ লাখেরও বেশি মানুষকে আহত করতে সক্ষম। এটি বিকিরণ ছড়াবে প্রায় সাত হাজার ৮৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে; যার প্রভাব পড়বে কোটি কোটি মানুষের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া বেশ কয়েকটি পারমাণবিক চুক্তি করেছে। তাদের কোনো একটি দেশ যদি এ অস্ত্রের বিস্তার ঘটায় অন্যটি অবশ্যই তা করবে এবং চুক্তিগুলো ভেঙে যাবে। শুরু হবে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ।
টেলিগ্রাফ অবলম্বনে
২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম