বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৫৪:৫১

গাড়িচাপায় যে গ্রামের সবাই বিধবা!

গাড়িচাপায় যে গ্রামের সবাই বিধবা!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : হাইওয়ে যখন, সেখানে দুর্ঘটনা ঘটবেই। কিন্তু, একটা হাইওয়ে গোটা গ্রামকে এ ভাবে 'বিধবা' বানাতে পারে! হারাধনের ছেলে হারানোর মতো, এক এক করে বাড়ির পুরুষ মরতে মরতে, এখন আক্ষরিক অর্থেই ঠেকেছে, 'রইল বাকি এক'-এ! লোকমুখে এ গ্রামের নামই এখন তাই 'হাইওয়ে বিধবাদের গ্রাম'।

৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের একটা বাইপাস রাস্তা গিয়েছে তেলেঙ্গানার পেড্ডাকুন্তা গ্রামের মধ্য দিয়ে। ২০০৬-এ রাস্তাটা তৈরি হওয়ার পর, এই ক'বছরে ক্রমে গ্রামটি পরিণত হয় বিধবাদের গ্রামে। এ গ্রামে বাস ৩৫টি পরিবারের। গোটা গ্রাম ঢুঁড়লে, পরিণত বয়স্কের পুরুষ বলতে একজনই। আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছাড়া আর কোনও পরিণত পুরুষ অবশিষ্ট নেই!

আর আছেন মহিলারা, যাঁদের বেশির ভাগই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা। রয়েছে তাদের সন্তান-সন্ততি। স্থানীয়রা জানালেন, প্রত্যেক পুরুষই কিন্তু মরা গিয়েছেন রাস্তা পেরোতে গিয়ে। গাড়ির চাকার চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে।

কুরা আসলির বয়স ২৩, ভরা যৌবনে পরনে বিধবার বেশ। 'আমার স্বামী মরেছেন পথদুর্ঘটনায়, আমার ভাইও তাই, এমনকী বাবাও গাড়ির নীচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান', এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন কুরা। হাতে ধরা স্বামীর ঝাপসা হয়ে আসা ছবি।

গ্রামেরই আর এক মহিলা জানালেন, তাঁর স্বামীর বাঁ-পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় অনেকটা সময় রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায়স ছটফট করেছেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকেও বাঁচানো যায়নি।

এতদিনে স্থানীয়রা ফুট ব্রিজ বা সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের দাবি তুলেছেন, যাতে তাঁরা চার লেনের এই মারণপথ নিরাপদে পেরোতে পারেন। অন্য বিধবাদের জন্য যেমন ভাতা রয়েছে, সেই বিধবাভাতার সঙ্গেই তাঁর চান আয়ের পথ। সরকারি তরফে রোজগারের ব্যবস্থা।

অভিযোগ, সে দাবি কানেই তোলে না কেউ। 'কেউ আমাদের সাহায্য করে না। কিন্তু, প্রত্যেকেই আসে, ছবি নেয়, তার পর চলে যায়। আমাদের অবস্থার হেরফের হয় না।' মাটির উনুনে রান্নার কড়া চাপিয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন মানি। 'আমার বাড়িতে গ্যাস নেই। একটা শৌচাগারও নেই। এ ভাবেই চলছে।' তিন সন্তানের মায়ের কথায় হতাশার সুর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, গোটা ভারতে বছরে ২,৩০,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় পথ দুর্ঘটনায়। যানবাহন বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই দুর্ঘটনা-মৃত্যুর বড় কারণ বেহাল রাস্তা ও বেপরোয়া ড্রাইভিং। চালকের ঠিকঠাক প্রশিক্ষণ না-থাকাটাও একটা কারণ। পথনিরাপত্তা বাড়াতে সরকার অনেক কিছুই করছে। এই গ্রামের পরিবারগুলোর কথা একটু ভাববে কি? সূত্র: এই সময়
১৪ অক্টোবর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে