বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৭, ০২:৫৩:২৮

পাকিস্তানের পরমাণুকেন্দ্র উড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা ছিল ভারতের! সফল হয়নি কেন?

পাকিস্তানের পরমাণুকেন্দ্র উড়িয়ে দিতে পরিকল্পনা ছিল ভারতের! সফল হয়নি কেন?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পরমাণু শক্তিধর হলে পাকিস্তানের যে দাপাদাপি আরও বাড়বে তা ১৯৮১ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। সে সময় ইসলামাবাদ তাদের কাহুটা পরমাণু কেন্দ্রকে হাতিয়ার করে আড়াল থেকে নয়াদিল্লিকে অহররহ হুমকি দিচ্ছিল। চুপচাপ হাতে হাত রেখে বসে থাকতে রাজি ছিলেন না ইন্দিরা গাঁধী। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে পাকিস্তানের হুমকি নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন।

এই সময়ই ভারতের সঙ্গে অস্ত্র কেনা-বেচা চলছিল ইজরায়েলের। ১৯৮৩ সালে ভারতকে, মার্কিন এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তির তথ্য তুলে দিতে চুক্তি করে ইজরায়েল। এর বিনিময়ে ইজারায়েলকে মিগ-২৩ যুদ্ধবিমান-এর তথ্য দিতে সম্মত হয় ভারত। এই বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেনর হাত ধরেই ইজরায়েল পাকিস্তানের খাটুয়া পরমাণুকেন্দ্রটিকে উড়িয়ে দিতে সমহত পোষণ করে এবং যৌথ উদ্যোগে এই হামলার পরিকল্পনা করে।

অবশ্য, এই ঘটনার বছরখানেক আগেই ১৯৮১ সালের ৭ জুন ইজরায়েল আকাশপথে হামলা করে ইরাকের ওশিরায় নির্মিয়মাণ পরমাণুকেন্দ্রটিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ইজরায়েলের হামলা দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধীও। এইসময় ভারতীয় বিমানবাহিনীতে জাগুয়ার যুদ্ধ বিমান আসায় বায়ু সেনার বহর শক্তিশালী হয়। বায়ু সেনাও কাহুটা পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। কিন্তু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বক্তব্য ছিল, জাগুয়ার নিয়ে ভারতীয বায়ু সেনা যদি পাকিস্তানের কাহুটায় হামলা চালায়, তাহলে যুদ্ধ বাধবে এবং দু’দেশের নাগরিকদের কাছেই এটা চরম ক্ষতিক্ষারক।

১৯৮৩ সালে ভারত ও ইজরায়েলের যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি আদান-প্রদানের মাধ্যমেই কাহুটা পরমাণু কেন্দ্রে হামলার যে পরিকল্পনা হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু, এই পরিকল্পনার রাজনৈতিক বিরোধিতার আশঙ্কা দেখতে পেয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্টও ছিল যে, প্রত্যাঘাত করতে পাকিস্তান হামলা করতে পারে ভাবা অ্যাটোমিক রিসার্চে। ফলে, ফের একবার কাহুটা পরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করে নয়াদিল্লি।  

ইজরায়েলের চাপে ১৯৮৪ সালে ফের কাহুটা পরমাণুকেন্দ্রে হামলার ছক কষে ভারত। পাকিস্তান যে ভবিষ্যতে সন্ত্রাসে মদতপুষ্ট ইসলামিক রাষ্ট্রগুলির নেতা হতে চলেছে তা বুঝতে পেরেছিল ইজরায়েল। তাই যে কোনও মূল্যে পাকিস্তানের পরমাণু বোমা তৈরির পদক্ষেপকে বন্ধ করে দিতে চাইছিল। এমনকী, ভারতকে পাশে নিয়ে এই হামলার নেতৃত্ব দিতেও রাজি ছিল ইজরায়েল। এই হামলার পরিকল্পনায় ঠিক হয় জামনগরে ইজরায়েলের এফ সিক্সটিন যুদ্ধবিমান অবতরণ করবে। এরপর উত্তর ভারতের একটি পরিত্যক্ত বিমানঘাটিতে জ্বালানি ভরা হবে যুদ্ধবিমানে এবং হিমালয়ের উপর দিয়ে গিয়ে ভারত ও ইজরায়েলের যৌথবাহিনী আকাশপথে হামলা করবে কাহুটায়। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ধ্বংস করে দেওয়া হবে পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রটি।

এই হামলার কথা কোনওভাবে আঁচ করতে পেরেছিল ওয়াশিংটন। আমেরিকা তখন স্পষ্টতই হুঁশিয়ারি দেয় ইন্দিরা গাঁধীকে যে, পাকিস্তানের উপরে হামলা হলে তারা ভারত আক্রমণ করবে। আমেরিকার এই হুমকির মোকাবিলা করতে রাজি ছিলেন না ইন্দিরা গাঁধী। তাই তিনি তড়িঘ়ড়ি ফের একবার কাহুটাপরমাণু কেন্দ্রে হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেন। ইজরায়েলও ভারতের সিদ্ধান্তে প্রবল অখুশি হয়েছিল। অনেকেই বলেন, আমেরিকাকে কূটনীতিকভাবে সেদিন ইন্দিরা গাঁধী সামলাতে পারলে আজ হয়তো পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি নিয়ে গর্ব করার মতো কিছুই বেঁচে থাকত না।

যদিও, এর বছর খানেকের মধ্যেই মা ইন্দিরা গাঁধীর সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হেঁটেছিলেন ছেলে রাজীব গাঁধী।
২৫ জানুয়ারী, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে