শুক্রবার, ০৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:২৭:২৩

যৌতুকের অর্থ ফিরিয়ে দিচ্ছেন ভারতের মুসলিমরা!

যৌতুকের অর্থ ফিরিয়ে দিচ্ছেন ভারতের মুসলিমরা!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভারতে যদিও যৌতুক নেওয়া বেআইনি, তবুও পণের দাবিতে গৃহবধূর ওপরে অত্যাচারের ঘটনা নিয়মিতই শোনা যায়। কিন্তু সেদেশেরই একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ঘটছে পুরো বিপরীত ঘটনা। পিছিয়ে থাকা রাজ্য বলে পরিচিত ঝাড়খন্ডের একটা অঞ্চলে বিয়ের সময়ে যৌতুক হিসাবে যে অর্থ নিয়েছিল পাত্রপক্ষ, এখন সেই টাকাই তারা ফিরিয়ে দিচ্ছে কনে পক্ষকে। খবর বিসিবির।

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের পালামৌতে এই প্রক্রিয়া বছরখানেক ধরে চলছে, এর মধ্যেই প্রায় আটশো মুসলমান পরিবার ছেলের বিয়ের সময়ে নেওয়া বরপণ ফিরিয়ে দিয়েছে পুত্রবধূর পরিবারকে। যার পরিমান প্রায় ৬ কোটি রুপি।

মুসলমান পরিবারগুলিকে দেখে ওই অঞ্চলের অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও যৌতুক ফেরানো শুরু হয়েছে। বরপণ নেওয়ার চেনা পথের উল্টোদিকে প্রথম হাঁটতে শুরু করে ঝাড়খন্ড রাজ্যের পোখারিটোলা গ্রাম। ছেলের বিয়ের সময়ে যে পণ নিয়েছিল পোখারিটোলার মুসলমান পরিবারগুলি, সেই টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছে তারা।

গ্রামের বাসিন্দা হাজি মুমতাজ আনসারিই এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেছিলেন। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, "অনেক লোক আমার কাছে এসে দু:খ করত যে মেয়ের বিয়ের পণ যোগাড় করতে গিয়ে কী অসুবিধায় পড়েছেন তারা।"

"ধারদেনা তো বটেই, জমিও বিক্রি করতে হত পণের টাকা যোগাড় করতে। সেই সব ঘটনা শুনেই আমার মনে হয় যে অনেক হয়েছে, আর না! বন্ধ করতে হবে এই পণ নেওয়া। তখনই মানুষকে বোঝাতে শুরু করি বিষয়টা।"

গত বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই পণ-বিরোধী অভিযানে একে একে মেয়ের পরিবারের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে আটশো পরিবার। অনেকে হয়তো টাকাটা এখনই ফেরত দিতে পারছে না, কিন্তু তারাও সবার সামনে অঙ্গীকার করছে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে বলে।

মুমতাজ আনসারির কথায়, "মুসলমান পরিবারগুলোকে দেখে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও এগিয়ে আসছেন। তারাও টাকা ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন।"

পোখারিটোলার বাসিন্দা মুহম্মদ জাকির হোসেন তিন মেয়ের মধ্যে সবথেকে ছোটটির বিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামেরই এক যুবকের সঙ্গে। পণ ফেরত দেওয়ার এই অভিযান শুরু হওয়ার পরে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

জাকির হুসেন বলছিলেন, "বড় দুই মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাদের বিয়ের সময়ে নগদ অর্থ না দিলেও দুই চাকার যান কিনে দিতে হয়েছিল। সঙ্গে বাসন, খাট, আলমারি এসব তো ছিলই। সে আর ফেরত পাওয়া যায় নি।"

"কিন্তু ছোট মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা - যেটা নগদে দেওয়া হয়েছিল, সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বেশ সানন্দেই ফিরিয়ে দিয়েছেন টাকাটা।"

বিহার ঝাড়খন্ডে পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ সমস্যা নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্রেকথ্রু। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সোহিনী ভট্টাচার্য বলছিলেন ওই পোখারিটোলা গ্রামের খবর তাদের কাছেও পৌঁছেছে।

তার কথায়,"যিনিই এই অভিযানটা শুরু থাকুন না কেন, দারুণ কাজ করেছেন। যদি ঠিকমতো চালিয়ে যেতে পারেন, তাহলে বহু মেয়ে এই পণের জন্য অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবে।"

"আসলে বিহার-ঝাড়খন্ডে পণপ্রথার সঙ্গে বাল্যবিবাহও যুক্ত হয়ে রয়েছে। যে মেয়ের বয়স যত বেশি বা যে যত বেশি শিক্ষিত, তার বাবা-মাকে তত বেশি পণ দিতে হয়। সেজন্যই মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেন বহু মানুষ।"

"নিজের পরিবারের কাছেই একটা মেয়ের জীবনের মূল্যটা কমে যায়। মুসলমানদের মধ্যে কিন্তু পণ প্রথা ছিল না, কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তারা এই পণের ব্যাপারটা শিখেছে। ঝাড়খন্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেও পণপ্রথা ছড়িয়েছে", বলছিলেন সোহিনী ভট্টাচার্য।

পোখারিটোলার এই পণ বিরোধী অভিযান এতটাই সমর্থন পেয়েছে পালামৌ অঞ্চলে যে এখন আর মুসলিম পরিবারগুলিতে কেউ বরপণ চাইতেই সাহস পাচ্ছেন না। আর যদি বা পাত্র পক্ষ এবং কন্যা পক্ষ নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে পণের ব্যবস্থা করেও ফেলে, তাহলে সমাজের মাথারা গিয়ে সেটা আটকিয়ে দিচ্ছেন। এমন কী পণ নেওয়ার কথা কানে এলে কাজি সাহেব সেই বিয়ে দিতেও সরাসরি অস্বীকার করছেন!

০২ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে