রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭, ১০:২৭:২০

যে ৬টি মারাত্মক লক্ষণ বলে দিচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ!

যে ৬টি মারাত্মক লক্ষণ বলে দিচ্ছে, উত্তরপ্রদেশ হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভারতের উত্তরপ্রদেশ তথা গো-বলয়ের রাজনীতির সঙ্গে ভারতের অন্য প্রান্তের রাজনীতির একটি ভাগ স্পষ্ট ছিল। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা কখনওই স্পষ্ট মেরুকরণকে গুরুত্ব দেননি। তবে এবারের নির্বাচনের ফলাফল ও প্রভাব যেন আস্তে আস্তে পড়তে চলেছে!

অনেক রাজনৈতিক দল সেই চেষ্টা করেছে, অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ধর্মের ভিত্তিতে ভোটভাগের হিসাব-নিকেশ করেছেন কিন্তু এটা সবাইকে স্বীকার করতেই হবে যে, পশ্চিমবঙ্গে বরাবর সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় যৌথ ভাবেই শাসক বা বিরোধীকে শক্তি জুগিয়েছে। কিন্তু সেই চেনা পশ্চিমবঙ্গ কিছু অচেনা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। যা ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছেও চিন্তার কারণ হয়েছে। প্রশাসনকেও উদ্বিগ্ন করছে।

১। ইদানীং যে কোনও বিষয়কে কেন্দ্র করেই ‘হেট স্পিচ’-এ ভরে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতা। ঘটি-বাঙাল, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ভারত-পাকিস্তান কিংবা মোদি-মমতা— সবেতেই যেন অঘোষিত যুদ্ধ চলছে। গ্রুপে গ্রুপে রীতিমতো লড়াই লেগে যাচ্ছে। যা আরও একবার সামনে এনে দিয়েছে কবি শ্রীজাতর সাম্প্রতিক একটি কবিতা ও তা ঘিরে বিতর্ক।

২। সদ্য উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। গেরুয়া মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায়ণকে অনেকেই সমালোচনা করছেন। কিন্তু অনেকেই লক্ষ করেননি যে, পশ্চিমবঙ্গের চিরন্তন রাজনীতির ছবিটাও ক্রমশ বদলে চলেছে। মোদি থেকে যোগী— সব সমালোচনাই রাজনীতির সীমা ছেড়ে চলে আসছে ধর্মে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ঘুরছে বিপজ্জনক সব বার্তা। যার অনেকটাই সত্য নয়। কিন্তু ‘মিথ্যা’ ক্রমশই ‘সত্য’ হয়ে উঠছে।

৩। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ বরাবর করে এসেছে বিজেপি। ভারতে গেরুয়া বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি সেই অভিযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলও এখন শাসকের বিরুদ্ধে বিজেপির মতো চড়া না হলেও তোষণ রাজনীতির অভিযোগ তুলেছে। আর তা নিয়ে রাজ্যের মানুষের মধ্যেও অভিযোগের মাত্র ক্রমশ যে বেড়ে চলেছে, তা স্পষ্ট। এমনিতে নিরীহ এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের মানুষও সোশ্যাল সাইটে সরব হচ্ছেন খোলাখুলি।

৪। সামনে রামনবমী। পশ্চিমবঙ্গে কোনও কালেই সে ভাবে রামনবমী পালনের রেওয়াজ ছিল না। বিভিন্ন মঠ মন্দিরের পক্ষে কিছু উৎসব অনুষ্ঠান হলেও সাধারণ পর্ব পালন ছিল না। গত কয়েক বছর ধরেই একটু একটু করে শুরু হওয়া রামনবমী পালন এবার রাজ্যে বড় চেহারা নিতে চলেছে। এমনটাই প্রচার চলছে শহরে, গ্রামে এবং সোশ্যাল সাইটে। ইতিমধ্যেই বহু জায়গা পতাকায় পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অনেক স্পর্শকাতর এলাকাও রয়েছে। সর্বত্রই মিছিলে যোগ দিতে ডাক দেওয়া হয়েছে— ‘হিন্দু সমাজ’কে।

৫। সম্প্রতি একটি টিভি সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গো-মাংস নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। সেটা উত্তরপ্রদেশ প্রসঙ্গে হলেও এই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সেই মন্তব্যকে রাজ্যের প্রেক্ষিতে বড় করে দেখাতে চাইছে। বহুল প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াকে। সেখানেও চলছে জোর বিতর্ক। আর সেই বিতর্কের আড়ালেই রয়েছে নানা উস্কানিমূলক প্রচার।

৬। সাম্প্রতিক উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে অন্যতম ইস্যু হয়ে ওঠে ‘করবস্থান ও শ্মশান’ বিতর্ক। এরপরেই সদ্য একটা সাক্ষাৎকারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তার আমলে রাজ্যে কত কবরস্থান, কত শ্মশান তৈরি হয়েছে, তার বিবরণ এবং আগামী দিনে কোনটা কত সংখ্যায় করা হবে তারও বিবরণ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে নিজের বিধায়ক ও সাংসদদের নিজের নিজের তহবিল থেকে শ্মশান সংস্কারে খরচ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। এটা কি সেই বিভাজনেরই লক্ষণ নয়? উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে এই পশ্চিমবঙ্গে কি কখনও এই ভাবে অন্ত্যেষ্টির জায়গা নিয়ে বিভাজন দেখা গিয়েছে?

২৬ মার্চ ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে