এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : তুরস্কে গণভোটে জয় পেলেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এটি দেশটির ইতিহাসে রাজনৈতিক পদ্ধতির সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। গণভোটে প্রেসিডেন্টের শাসিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাতিল হয়ে গেল সংসদীয় গণতান্ত্রিক
পদ্ধতি। কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ভোট পেয়ে আরো ১২ বছর প্রেসিডেন্টের পদটি পাকা করে নিয়েছেন রিসেপ তায়েপ এরদোগান। এমনটাই দাবি করছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, এর ফলে তুরস্কে একনায়কতন্ত্র শক্তিশালী হতে যাচ্ছে, কারণ গণভোটের রায়ে শক্তিশালী এরদোগান প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন এটা হবে আধুনিক তুরষ্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার। এ গণভোটে তুরস্কের মানুষ ভোট দিয়েছে হ্যাঁ ও না ভোটে। এরদোয়ান নিজে দাবি করেছেন, নিজের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে তিনি স্পষ্টতই সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়েছেন এবং এখন সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়িত হবে।
রোববার ইস্তাম্বুলে ভোট দেবার সময় তুর্কি এরদোগান আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্ককে স্মরণ করেন। পরে তিনি বলেন, এটি কোনো সাধারণ ভোট নয়, তুরস্ককে আরো সমৃদ্ধ করতে আমরা আতাতুর্কের স্বপ্ন পূরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
বিশ্লেষকরা বলছেন এটা হবে আধুনিক তুরষ্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংস্কার। এ গণভোটে তুরস্কের মানুষ ভোট দিয়েছে হ্যাঁ ও না ভোটে। নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা দেখেই রাস্তায় নেমে এসেছে এরদোয়ানের সমর্থকরা। ক্ষমতাসীন একে পার্টির সদরদপ্তরে সমর্থকরা ভিড় করে এবং তারা স্লোগান দিয়ে, গাড়ীর হর্ণ বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
তার সমর্থকদের দাবি প্রেসিডেন্ট নির্বাহী ক্ষমতা পেলে তা দেশকে উন্নত করবে। দেশটির প্রধান দুটি বিরোধী দল ফল এখনো মেনে নেয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু একটি জায়গায় সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে এবং দিয়ারবাকির এলাকায় ভোট কেন্দ্রের কাছ গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে।
তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি বলছে, প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ানের ক্ষমতা-বৃদ্ধি প্রস্তাবের ওপর গণভোটের ফলাফল তারা চ্যালেঞ্জ করছে। ঐ ফলাফল বাতিল করার জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।
সিএইচপি দলের উপ-চেয়ারম্যান বুলেন্ত তেজকান বলছেন, গণভোটে কারচুপি হয়েছে বলে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে আইনগত শঙ্কা দূর করতে হলে ফলাফল বাতিল করাই একমাত্র পথ। তুরস্ক থেকে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, গণভোটে কোন রকমে উৎরে গেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
একান্ন শতাংশের সামান্য একটু বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় তিন শহর - আঙ্কারা, ইস্তান্বুল এবং ইজমিরে তিনি হেরেছেন।
গণভোটে প্রস্তাবের বিরোধিতাকারীরা বলছেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়মের হয়েছে - এমনকি নির্বাচন কমিশনের সিল ছাড়া ব্যালট পেপার গণনার সময় বৈধ বলে গৃহীত হয়েছে।
ভোটের ফলাফল নিয়ে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তান্বুলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেরকান দেমিরতাস বলেছেন, তুরস্কের সমাজ ও রাজনীতিতে যে মেরুকরণ রয়েছে, এই গণভোটের পর তা আরও তীব্র হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
গণভোটে একে পার্টি এবং এরদোয়ান কোনও রকমে জিতলেও, কর্তৃত্ব অব্যাহত রাখা তাদের জন্য কঠিন হবে বলে তার মনে হচ্ছে।
গণভোটর ফলাফল নিয়ে আঙ্কারায় বাঙালি সাংবাদিক সরওয়ার আলম বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে এমনকি একে পার্টির সমর্থকরা সরকারকে একটি বার্তা দিয়েছে। আর সেটি হলো তারা একে পার্টিকে সমর্থন করলেও, দলের ক্ষমতাবৃদ্ধিকে তারা সুনজরে দেখছেন না।
১৭ এপ্রিল ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস