এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে উদ্ধার করার বদলে সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে মজা দেখতেই পছন্দ করে। অনেকে অাবার সুযোগ বুঝে মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা, ঘড়ি-গহনা ইত্যাদি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। প্রায় একই দৃশ্য দেখা যায় ভারতেও। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী একজন ব্যক্তির নাম দিল্লির সুরাজ প্রকাশ। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে বিবিসি।
দিল্লির এ ব্যক্তি যেন নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেলেই তিনি সে স্থানে ছুটে যান। হতাহতদের উদ্ধার করাই তার নেশা। আর এভাবে এখন পর্যন্ত ৯২ জনকে উদ্ধার করেছেন তিনি।
বর্তমানে ৬৬ বছর বয়সী সাবেক এ ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলা হয় বিপদের ত্রাতা। কারণ সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসা করানো অত্যন্ত জরুরি। প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে চিকিৎসা করা সম্ভব হলে জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু ভারতের মতো দেশে এ কাজটি অত্যন্ত কঠিন।
কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার কথা সরকারি সংস্থার। কিন্তু ভারতে সরকারি সংস্থার সেবা পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। দেখা যায়, এ ধরনের দুর্ঘটনায় সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছাতে বহু দেরি হয়ে যায়। ফলে রোগীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। অনেকেই দ্রুত সুচিকিৎসার অভাবে মারা যায়। দেশটিতে দুর্ঘটনায় নিহতদের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে ৫০ শতাংশ রোগীর জীবন রক্ষা করা যেত।
এ শূন্যস্থান পূরণ করতে দীর্ঘ তিন দশক ধরে কাজ করছেন সুরাজ। তিনি তার ফোন নম্বর বিভিন্ন স্থানে দিয়ে রেখেছেন। ট্যাক্সি চালক ও পথচারীরা অনেকেই জানে তার ফোন নম্বর। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে তারা তাকে ফোন দেয়। আর ফোন পেলে সঙ্গে সঙ্গে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান সুরাজ। সবার আগে সে স্থানে পৌঁছে তিনি উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
সুরাজ বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত ৯২ জন মানুষকে রক্ষাকরেছি। আমি পুলিশের কাছে দুর্ঘটনা লিপিবদ্ধ করি। প্রয়োজনে আদালতেও যাই প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এবং দুর্ঘটনায় আহতদের মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষা করি কোনো নিকটআত্মীয় না আসা পর্যন্ত।
’
সুরাজের সঙ্গে রয়েছে একটি পুরনো মোবাইল ফোন। এ ফোনেই আসে দুর্ঘটনার খবর। আর তিনি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে নিজের স্কুটারে করে ছুটে যান আহতদের চিকিৎসা দিতে।
এ কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের ঝামেলার সম্মুখিন হয়েছেন তিনি। দুর্ঘটনায় আহত অপরিচিত মানুষদের হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে তাকে আটক করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তবুও তিনি আহতদের উদ্ধার করার কাজটি ত্যাগ করেননি
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস