মঙ্গলবার, ০২ মে, ২০১৭, ০১:১৯:৫৫

বিশ্বের সবচে’ ধনী গ্যাংস্টার!

 বিশ্বের সবচে’ ধনী গ্যাংস্টার!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: ২০১৫ সালের ফোর্বেসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের অন্যতম ধনী গ্যাংস্টার হচ্ছেন দাউদ ইব্রাহিম। চলতি সপ্তাহে শারীরিক অবস্থার অবনতিতে এই গ্যাংস্টারের মৃত্য হয়েছে- এমন খবরের পর আবারো আলোচনায় আসেন তিনি। দাউদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাজারো গুজব রটে। কিন্তু সব গুজব উড়িয়ে দিয়ে তার সবচে’ ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিল জানান, সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে আছেন ৬১ বছরের দাউদ।

১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের মূলহোতা ছিলেন দাউদ। সে হামলায় ২৫৮ জন নিহত হন। এতে আহত হন প্রায় ৭০০ জন। এরপরই ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসেন তিনি।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) ছায়া তলে করাচীতে অবস্থান করছেন তিনি। করাচীর কিল্ফটন এলাকায় ৫৪ হাজার বর্গফুটের বিলাশ বহুল প্রাসাদে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। আর সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেন তার ‘মাফিয়া সাম্রাজ্য’।

দাউদের বিরুদ্ধে আল-কায়েদা ও লস্কর-ই-তৈয়বার মতো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করারও অভিযোগ আছে। আর এ জন্য তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়।

ফোর্বস জানায়, বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ডন হচ্ছেন দাউদ। কলোম্বিয়ার ড্রাগ গড পাবলো এসকোবারের পরই তার অবস্থান। ফোর্বের হিসেবে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাবলোর মোট আয় ছিল ৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যদিও এসকোবার ১৯৯৩ সালেই মারা যান। এর মানে দাউদ হচ্ছেন বিশ্বের জীবিত ডনদের মধ্যে সবচে’ ধনী।

ফোর্বসের মতে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত দাউদের আয় ছিলো ৬.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ব্যবসাভিত্তিক এ ম্যাগাজিনটি আরো জানায়, ব্যাপক ক্ষমতা বলে শুধু মাত্র ইংল্যান্ডেই ৪.৫ মিলিয়ন সম্পদ আছে তার। এছাড়া ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় দার সম্পদ রয়েছে। তার আয়ের ৪০ শতাংশ আসে ভারত থেকে।

দাউদ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ ও তথ্য থাকার সত্বেও এ পর্যন্ত ধরা ছোয়ার বাইরেই রয়েছেন তিনি।

এক নজরে দাউদ ইব্রাহিম:

দাউদের জন্ম:

১৯৫৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরিতে জন্ম নেন দাউদ। দাউদের বাবা ইব্রাহিম কাসকর মুম্বাই তৎকালীন বম্বে পুলিশের হেড কনস্টেবল ছিলেন। দাউরা ১১ ভাইবোন ছিলেন। দাউদের পুরো নাম দাউদ ইব্রাহিম কাসকর। মা আমিনা গৃহবধূ ছিলেন।

দাউদের শৈশব:

মহারাষ্ট্রের ডোংরি এলাকার তেমকার মহল্লায় শৈশব কেটেছে তার। আহমেদ সেলর হাই স্কুলে পড়াশোনা করা। কিন্তু মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন দাউদ। স্কুলে থাকতেই চুরি ডাকাতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। দাউদের ভাই ইকবাল কাসকরসহ পরিবারের অনেক সদস্য এবয়ং আত্নীয়রা এখনও মুম্বাইয়ে বসবাস করেন।

দাউদের পরিবার:

গোয়েন্দদের তথ্য মতে করাচিতে দাউদের সঙ্গে তার স্ত্রী মেহজাবীন শেখ ওরফে জুবিনা জেরিন ও একমাত্র ছেলে মঈন নওয়াজ থাকের। তার দুই মেয়ে মাহরুখ ও মারহীন। সবচে’ ছোট মেয়ে মারিয়া ১৯৯৮ সালে মারা যায়। মাহরুখের স্বামী জুনায়েদ ও মাহরিনের স্বামীর নাম আয়ুব। মঈনের স্ত্রী সানিয়াও পাকিস্তানেই থাকেন।

ক্রিকেটের সঙ্গে দাউদ:

মাহরুখের স্বামী জুনায়েদ পাকিস্তানের জনপ্রিয় প্রাক্তন ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলে। এই বিয়ের কারণে মিয়াদাদকে ভারতে চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভারতের ক্রিকেটে ফিক্সিং কেলেংকারিতে বিভিন্ন সময় তার নাম উঠে এসেছে।

সৌখিন দাউদ :

সিনেমার ডনদের মতোই দাউদের লাইফ স্টাইল ছিলো। দাউদ সব সময় সেরাটাই নিতে পছন্দ করেন এটিও সবাই জানতেন। বলিউডের বড় বড় পার্টির আয়োজক ছিলেন দাউদ। সেখান থেকেই বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মন্দাকিনিকে নিজের জন্য বেছে নেন দাউদ। ঘোড়া এবং দামি ও পুরনো ওয়াইনের শখ ছিলো দাউদের।

অপরাধে হাতে খড়ি:

দাউদ নিজের অপরাধ জগতের কাজ শুরু করে করিম লালা গ্যাংয়ের হাত ধরে। সেই সময় মুম্বাইয়ের কুখ্যাত ডন ছিল এই করিম লালা। আশির দশকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কুখ্যাত নাম হয়ে যায় দাউদ। এছাড়াও বেটিং ও বলিউডের ছবি প্রযোজনা করত দাউদ। বেটিংয়ের সময়ই ছোটা রাজনের সঙ্গে আলাপ হয় দাউদের।

ডি কোম্পানি:

হাওলা থেকে তারপর অস্ত্র পাচারের কারবার শুরু করে দাউদ। ভারত ছেড়ে দুবাই চলে যাওয়ার পর সেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরাধ সিন্ডিকেট ‘ডি কোম্পানি’ গড়ে তোলেন দাউদ। ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের ধারাবাহিক হামলায় দাউদের হাত রয়েছে জানার পরই তাকে ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করা হয়।

ছদ্মবেশী দাউদ:

এস হুসেন জেডির লেখা ‘ডোংরি সে মুম্বাই তাক’ বইতে দাউদের ১৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধ জগতের শুরুতে দাউদের ঘন কালো গোঁফের জন্য তাকে 'মুচ্ছড়' বলে ডাকা হত। ভারত থেকে পালানোর পর একাধিরবার নিজের নাম পরিবর্তন করে দাউদ। শোনা যায় চেহারায় বদল আনতে কয়েকবার মুখের প্লাস্টিক সার্জারিও করেন তিনি।

দাউদের ১৩টি ছদ্মনামের মধ্যে একটি শেখ দাউদ হাসান। এছাড়াও ডেভিড নামেও ডাকা হত তাকে। ভারতে কাউকে ফোন করলে নিজেকে হাজি সাহাব কিংবা আমির সাহাব নামে পরিচয় দিতেন।

দাউদের পাসপোর্ট দাউদ ইব্রাহিমের চারটি পাসপোর্ট আছে। যার মধ্যে একটি ১৯৯৬ সালের ১০ জুলাই করাচি থেকে ইস্যু করা হয়। এই পাসপোর্টে দাউদের তখনকার সাম্প্রতিক ছবি ছিল। পাসপোর্টের নম্বর ছিল c267185। বাকি তিনটি ইয়েমেন, আবু ধাবি ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইস্যু করা হয়েছিল।

বলিউডে দাউদ:

দাউদ একটা রহস্য। আর এই রহস্য নিয়ে মানুষের মনে কৌতুহলও অনেক। আর সেই কারণেই এই কুখ্যাত আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে নিয়ে বলিউডে একাধিক ছবি তৈরি করেছেন পরিচালকরা। কোম্পানি (২০০২), ডি (২০০৫), ব্ল্যাক ফ্রাইডে (২০০৭), শুটআউট অ্যট লোখন্ডওয়ালা (২০০৭), ডি ডে (২০১৩)। এছাড়াও আন্ডারওয়ার্ল্ডের বহু ছবিতেও দাউদের চরিত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। দাউদের বোন হাসিনাকে নিয়েও সম্প্রতি একটি সিনেমা হচ্ছে। এই সিনেমায় মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্রদ্ধা কাপুর।

কথিত আছে সালমান খান, সঞ্জয় দত্ত, প্রীতি জিনতা, অর্জুন রামপাল, মমতা কুলকারনিসহ বেশ কয়েজন বলিউড তারকার সঙ্গে দাউদের সম্পৃক্তা আছে।

দাউদের ব্যবসা:

হীরা থেকে নকল টাকা। বৈধ থেকে অবৈধ অনেক ব্যবসাই করেন দাউদ। ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইংল্যান্ড, জার্মানি, তুরস্ক, ফ্রান্স, স্পেন, মরক্কো, সাইপ্রাস, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তার ব্যবসা রয়েছে। ২০০৯ সালে দাউদ বাংলাদেশে নিজের কর্মকাণ্ড বিস্তারের জন্য তার সহযোগী দাউদ মার্চেন্টকে এ দেশে পাঠায় বলে অভিযোগ করে পুলিশ।-আরটিভি
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে