শুক্রবার, ০৫ মে, ২০১৭, ০৩:০৮:৫২

এসএসসি রেজাল্টে মিডিয়া শুধু মেয়েদের ছবি ছাপে কেন?

এসএসসি রেজাল্টে মিডিয়া শুধু মেয়েদের ছবি ছাপে কেন?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: মিডিয়া শুধু মেয়েদের ছবি ছাপে কেন? মেয়েদের নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে!? ছেলেরাও ভালো করে, কিন্তু পরদিন পত্রিকার পাতায় বড় করে ছাপে কেবল মেয়েদের ছবি! টিভিগুলোও লাইভে বুম এগিয়ে দেয় খালি মেয়েদের দিকেই! মিডিয়ার কাণ্ডকারখানা দেখলে মনে হয় ছেলেরা বোধহয় পরীক্ষাই দেয়নি!

কোন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এরমক অনেক অনেক প্রশ্ন সোস্যাল মিডিয়া ঘুরে বেড়ায়।  যদিও ছেলেদের ছবি যে মিডিয়া একদমই আসে না তা নয়।  তবে মিডিয়া কেন মেয়েদের বেশি ফোকাস করে এ ব্যাপারে গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের নানা ধরনের ব্যাখ্যা আছে নিশ্চয়ই।  তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই।

আপনারা রাজধানী বা বিভাগীয় শহরগুলোতে যে চিত্র দেখেন পুরো বাংলাদেশের চিত্র কিন্তু একই রকম নয়।  এখানে মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে সমানে সমানে লড়াই করছে বটে।  কিন্তু দেশে এমনও অনেক পরিবার আছে যারা মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে, এমন “দুশ্চিন্তা” মাথায়ই আনে না।  কেবল কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার দায়ে এখনও অনেক নারীকে তালাক দেওয়ার খবর মিডিয়ায় আসে নিয়মিতই।

  অনেক দরিদ্র পরিবারে কন্যা সন্তান জন্ম নেওয়াকে অভিশাপ মনে করা হয়।  কিন্তু ওই বউ পরিত্যাগকারী বা হত দরিদ্র মানুষটিও যদি বিকেলে চা খেতে বা নুন-সদায় কিনতে গিয়ে দোকানে চলা টিভিতে মেয়েদের এমন উচ্ছ্বলতা দেখে, তাদের মা-মাবার মুখে তাদের নিয়ে গর্বের কথা শোনে তখন তারও অনুশোচনা জন্মাতে পারে, তারও মনে স্বপ্ন জগতে পারে যে তার মেয়েটি একদিন তার মুখ উজ্জ্বল করবে। 

কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া ‘পাপী’ মা’টিও হয়তো অন্যের ঘরের মেঝে মুছতে মুছতে এমন দৃশ্য দেখে।  কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়া যে পাপ নয়, সহসা তা জেনে হয়তো মেঝে মোছা ফেলে শীর্ণ কাপড়ের আচল দিয়ে নিজের চোখ মোছে।  মনে মনে হয়তো সেও প্রতিজ্ঞা করে প্রয়োজনে আরও দুই বাড়ি বেশি কাজ নিয়ে মেয়েকে স্কুলে পড়াবে তবু তার পরিণতি মেয়েকে ভোগ করতে দেবে না কিছুতেই।

গত এক দশক ধরে অন্তত মাধ্যমিক পর্যন্তও যে ছেলে-মেয়ের সংখ্যা সমান, মাত্র কয়েক বছর আগেও কি এমন ছিল? মেয়েরা এগিয়ে আসছে বলে কি রাষ্ট্র পিছিয়ে গেছে? বিশ্বের এমন কোন দেশ আছে যেখানে নারীরা অগ্রসর কিন্তু দেশ পিছিয়ে? এমন কোন দেশের উদাহরণও কি দিতে পারবেন যে নারীদের ঘরে বন্দী রেখে তারা ন্যুনতম উন্নতি করতে পেরেছে??

এর পরেও যদি বলেন, মেয়েদের সফলতার ছবি দেখিয়ে মিডিয়া ভুল করেছে তবে আমি বলবো এমন ভুলই করা উচিৎ।

ভাইরে, আপনাদের হাসিমাখা ছবি মিডিয়ায় না আসলে কিছু আসবে যাবে না।  আপনি চাইলেও আপনার পড়ালেখা আপনার পরিবার বন্ধ করতে দেবে না, সফলতাও কেউ আটকাতে পারবে না।  কিন্তু এগিয়ে চলা কিছু মেয়ের গর্বের হাসিমাখা ছবি দেখে যদি কিছু অভাগা মেয়ে অনুপ্রাণিত হয়, কিছু পরিবার যদি নতুন করে ভাবতে শেখে, তবে খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে??
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এম.জে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে