শুক্রবার, ১২ মে, ২০১৭, ১১:৫৫:৫৩

নৌকায় পালিয়ে বিয়ে করছে মেয়ে; পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্রোধে ফুঁসছেন বাবা!

নৌকায় পালিয়ে বিয়ে করছে মেয়ে; পাড়ে দাঁড়িয়ে ক্রোধে ফুঁসছেন বাবা!

এক্সক্লুসিভ: মানুষের জীবনের বিবাহ নাম ঘটনাটি মনে রাখার মতোই বিষয়। প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে নিজের বিয়ের স্মৃতি সংরক্ষণ করে। কিন্তু এই প্রেমিক জুটির জীবনে যা ঘটল তা যতটা হাস্যকর ততটাই স্মরণীয়। একেবারে সিনেমাটিক! পাড়ে দাঁড়িয়ে তখন জামার হাতা গুটিয়ে, নাকের পাটা ফুলিয়ে রাগে ফুঁসছে মেয়ের বাড়ির লোকজন। মুখে বলছেন, "সাহস থাকে তো এ দিকে আয়। " কিন্তু তখন কে শোনে কার কথা। নৌকায় চোখ বন্ধ করে মন্ত্রোচ্চারণে ব্যস্ত বর-কনে। মন্ত্র বলতে বলতে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে পাড়ের দিকে তাকিয়ে ফের মন্ত্রে মন দিলেন পাত্র।

ঘটনাটি গাইঘাটার পাঁচপোতায়। ঐ এলাকার একটি বাওরে ভাসতে ভাসতে মালা বদল হল পাত্র-পাত্রীর। মহিলারা শঙ্খ বাজালেন, উলুধ্বনি উঠল। এতসব শব্দে চাপা পড়ল পাড়ে দাঁড়ানো মেয়ের বাড়ির লোকজনের হা-হুতাশের শব্দ। একটা সময়ে যখন বুঝে গেলেন, আর কিছু করার নেই, রাগে গোঁ গোঁ করতে করতেই তাঁরা বাড়ির পথ ধরলেন। কিন্তু এ ভাবে বিয়ে করতে হল কেন তরুণ-তরুণীকে?

বছর দুয়েক আগে হাওরা থানার মছলন্দপুরের মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল পাঁচপোতার ২৬ বছর বয়সী ঐ যুবকের। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। যুবকটি বেঙ্গালরুর বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। দূরত্ব কখনই ভালবাসার পথে অন্তরায় হয়নি। তরুণী শ্রীচৈতন্য কলেজে পড়াশোনা চালাতে চালাতেই ঠিক করে ফেলেন, বিয়ে যদি করতে হয় তো এই ছেলেকেই করবেন।

কিন্তু মেয়ে একা ভাবলেই তো হল না। বাড়ির লোকের মত যে অন্যরকম! অভিভাবকেরা চাইছিলেন, দ্রুত মেয়েকে পাত্রস্থ করতে। ছেলেও দেখা হয়েছিল। তরুণী জানিয়ে দেন, স্নাতক না হয়ে বিয়ে করবেন না। কিন্তু তাতে বাড়ির লোকের মন গলেনি। বরং তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন তারা। মেয়েটি উপায় না দেখে শেষপর্যন্ত জানিয়েও ছিল তার ভালবাসার কথা। তাতে উল্টো বিয়ের তোড়জোড় আরও বাড়িয়ে দেন বাড়ির লোকজন।

প্রেমিককে সে কথা ফোনে না জানিয়ে উপায় ছিল না তরুণীর। মঙ্গলবার প্রেয়সীকে বধুবেশে নিয়ে যেতে বাড়ি ফিরেন সেই যুবক। পরিকল্পনা অনুসারে বুধবার সকালে প্রেমিকা চলে আসেন প্রেমিকের বাড়িতে। কবে কখন বিয়ে হবে, তা অবশ্য তখনও প্ল্যান হয়নি। কিন্তু খোঁজ-খবর করতে করতে মেয়ের বাড়ির লোকজনও হাজির হয় সেখানে। যুবকটি পাড়া-প্রতিবেশীর সাহায্য চান। এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে প্রেমিক যুগল।

পাড়ার লোকজনই বিয়ের আয়োজন সেরে ফেলেন দ্রুত। কেনা হয় শাঁখা-সিঁদুর-শাড়ি-আলতা-টোপর। গাঁয়ের পুরুত মশাইকেও হাজির করানো হয়। শেষে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন, বিয়েটা দেওয়া হবে মাঝ-বাওরে, নৌকায় ভাসতে ভাসতে। তাতে করে মেয়ের বাড়ির লোকজনের পিছু ছাড়ানো যাবে।
হলও তাই। মেয়ের আত্মীয়-স্বজনেরা যদি বা হাজির হন বাওড়ের পাড়ে, দ্বিতীয় কোনও নৌকো খুঁজে না পেয়ে পাড়ে দাঁড়িয়েই তর্জন গর্জন সেরে ফিরতে হয়েছে।

যুবকটি পরে বলেন, "আমি ওকে জোর করিনি। সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলাম। ও যখন বাড়ি ছেড়ে চলেই এল, তখন দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলার কথা ভাবি। " সদ্য কপালে সিঁদুর দেওয়া মেয়েটির মুখে তখন এক আকাশ আলো ছড়িয়ে। মুচকি হেসে বললেন, "ভাগ্যিস ঘাটে আর একটা নৌকো ছিল না!"-আনন্দবাজার
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে