শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭, ০৪:৪৮:৪৪

কাজিপুরের ফেরিওয়ালার ছেলে হালিম যেভাবে হলেন নাঈম আশরাফ

কাজিপুরের ফেরিওয়ালার ছেলে হালিম যেভাবে হলেন নাঈম আশরাফ

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সম্ভ্রমহানী মামলার দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, এ মামলার অপর আসামি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম) এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নাঈমের গ্রামের বাড়ির লোকজন জানান, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের একমাত্র ছেলে হাসান মোহাম্মদ হালিম। প্রতারণার উদ্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেকে নাঈম আশরাফ বলে পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী তাকে হালিম নামেই চেনেন। এছাড়া, সে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের ছেলে নাঈম আশরাফের নাম ব্যবহার করতো।

যেভাবে ফেরিওয়ালার ছেলে নাঈম আশরাফ : হালিমের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় দশম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে তাকে জুতাপেটা খেতে হয় ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষকের হাতে। ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। সেখানে নিজেকে সিরাজগঞ্জ শহরের একজন ধনাঢ্য ঠিকাদারের ছেলে পরিচয় দিয়ে এক ধনীর দুলালিকে বিয়ে করে।

কিছুদিনের মধ্যে আসল পরিচয় ফাঁস হলে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাদের মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে উত্তমমাধ্যম দিয়ে তাড়িয়ে দেন হালিমকে। তার বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার অভিযোগ আরও রয়েছে বলে জানান তারা। পরে বিষয়টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হলে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বগুড়া থেকে চলে যায় ঢাকায়। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয় এবং পাসও করে। ডিপ্লোমা পাস করে ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইন্টার্নি করে সেখানেই চাকরি নেয়। চেক জালিয়াতির কারণে তাকে সে চাকরিটি হারাতে হয়। পরে আরেকটি টেলিভিশনে চাকরি নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় হালিম। শাস্তিও একই।

এছাড়া, নিঃসন্তান হালিম বাবার নাম বদলিয়ে বিয়ে করে তিনটি। প্রতারণা করে বিয়ে করার বিষয়টি ফাঁস হলে গেলে আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তৃতীয় স্ত্রীসহ বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের কুলশীতে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো। সম্প্রতি প্রতারক হালিম নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে গান্ধাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল রানার সৌজন্যে একজন জাতীয় নেতার ছবির পাশে নিজের নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম ও ছবি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, বিলবোর্ড লাগানো হয়।

হালিমকে গ্রেফতার করার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর : এর আগে দুই ছাত্রী সম্ভ্রমহানীর ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের একজনের বাড়ি কাজিপুরের গান্ধাইলে জানতে পেরে বুধবার সিরাজগঞ্জে অবস্থানরত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রয়োজনে তার পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য : কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম রেজা জানান, দলের সহ-সভাপতি পদ তো দূরে থাক আমি তাকে কোনো দিন দেখিইনি। তবে, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে আবদুল হালিম ওরফে কালা হালিম নামে একজন রয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি কারিগরি কলেজে শিক্ষকতা করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ-আল ইসলাম বলেন, হাসান মোহাম্মদ হালিম বা নাঈম আশরাফ নামে কাজিপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোনো নেতা নেই। হালিম অপকর্ম ও প্রতারণার জন্যই মূলতঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ ব্যবহার করেছে।

হালিমের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার চাচি শিখা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে হালিম। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য প্রথমে বগুড়া ও পরে ঢাকায় যায় সে। হালিম এলাকায় খুব একটা আসে না। তার বাবা-মা দু’জনেই ঢাকায় হালিমের বাসায় থাকেন। বরিশালের এক মেয়ের সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল হালিমের। তবে তাদের কোনও ছেলে-মেয়ে নেই।’

নাঈমের আরেক চাচি কোহিনুর বেগম বলেন, ‘কয়েক মাস আগে স্বামীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। হালিমের বাড়িতেই উঠেছিলাম। তবে ওর সম্পর্কে এত কিছু জানা নাই।’

কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমিত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ঢাকা থেকে হালিমের বিষয়ে খবর পেয়ে গতরাতেই (বুধবার রাত) তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
১৩ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে