স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের অভাব নেই। বিশেষ করে গত দুবছরে নক্ষত্র যেমন বেড়েছে, বেড়েছে উজ্জ্বলতাও। যার মধ্যে অতি উজ্জ্বল একটি নক্ষত্রের নাম বোধহয় জুন। জুন মাসে যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির এক মহাকাব্যিক পুর্নমঞ্চায়ন করে দেখাল টাইগাররা।
এদিন কী অসাধারণ ব্যাটিং করলেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কেউ এতটা প্রত্যাশা করেনি তাদের কাছ থেকে। বড় ইনিংস খেলেন অনেকেই। কিন্তু এমন বিপর্যয়ের মুখে এত অসাধারণ ব্যাটিং কেউ বা করে করতে পেরেছে! সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ যা করে দেখিয়েছেন, আজ তা সত্যিই অসাধারণ। লড়াকু যুদ্ধ করে সেঞ্চুরি করেই সেজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহকে স্বরণ করলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে টাইগাররা আজ বদলেছে অনেককিছুই। টাইগার ক্রিকেটের সাফল্যের ঊর্ধ্বগামী মানচিত্রটাও। আর এই বারো পার্বণে রান বেড়েছে মাত্র ১৬টি বেশি, ২৬৫! দুটিই কার্ডিফে। প্রথম জুনের রানটি অস্ট্রেলিয়ার, পরেরটি তাসমানিয়া সাগরপাড়ে তাদের প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডের। সেই দুটি টপকেই ইতিহাস গড়েছে একটি দল। যার নামটি বাংলাদেশ।
টাইম মেশিনে চড়ে একটু পেছন থেকে ঘুরে আসা যাক। সোফিয়া গার্ডেন্সে ২০০৫ সালের প্রতিপক্ষ ছিল সেসময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। পরাক্রমশালী রিকি পন্টিংয়ের দলকে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৯ রানে আটকে রাখে মাশরাফি-রফিকদের বোলিং আক্রমণ।
পরে মোহাম্মদ আশরাফুলের ১১ চারে সাজানো ১০১ বলে ১০০! পাঁচে নামা অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ৪৭, আর আফতাবের অপরাজিত ২১ রানের পিঠে ভর করে ৪ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই পাওয়া অবিস্মরণীয় সেই জয়।
সেই ম্যাচের পর এবারই প্রথম কার্ডিফে খেলতে গেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি এবার অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ড। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নয়, গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের রানার্সআপ। তবে পরাক্রমশালী তো নয়ই। এইতো কদিন আগেই আয়ারল্যান্ডের মাটিতে কিউইদের হারিয়ে দেয়া গেছে। গত কয়েক বছরে ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিপক্ষেই জয়ের অনেকগুলো নজীর আছে টাইগারদের।
সেখানে নিউজিল্যান্ডকে ২৬৫ রানে আটকে রেখে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মঞ্চ প্রস্তুত করেই রেখেছিল মাশরাফির দল। এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরুর ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০০ পেরোনো সংগ্রহ গড়েছিল যে বাংলাদেশ, তাদের কাছে ২৬৬ তো আশা করাই যায়।
কিন্তু ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার কিছুপরই চক্ষু চড়কগাছ। ১২ রানেই তিন উইকেট নেই, ত্রিশের কোটায় আরো একটি। টপঅর্ডার উধাও। দর্শকরা নড়েচড়ে বসার আগেই গেল-গেল রব।
সেখান থেকেই রচিত হল ফিরে আসার এক মহাকাব্যিক ইতিহাস। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর রেকর্ড জুটিতে সব ছত্রখান। আরেকটি কার্ডিফ বধ, আরেকটি জুনে, এবারও ৫ উইকেটের জয়। আর বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটিটি থামল ২২৪ রানে। সাকিব ফিরেছেন ১১৪তে, মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ১০২ রানে।
কার্ডিফে দুই জুনের মাঝে মিল থাকল অনেক কিছুতেই। সেই ম্যাচের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ছিল ২টি ফিফটি, শুক্রবার নিউজিল্যান্ড ইনিংসেও থাকল দুটি। ওই ম্যাচে চারে নামা ডেমিয়েন মার্টিন করেছিলেন ফিফটি (৭৭), এই ম্যাচে চারে নেমে রস টেইলর করলেন ৬৩! বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি ছিল একটি, এবার অবশ্য দুটি। দুই জয়ই ৫ উইকেটে। তবে সবচেয়ে বড় মিলটা থাকল একটি শব্দে, জয়ী- লাল-সবুজের পতাকা।
০৯ জুন ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস