বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৫৬:৩৪

পাত্রী চাই, কনে বাজারে!

পাত্রী চাই, কনে বাজারে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাজারে গেলে কী না পাওয়া যায়! রোজকার প্রয়োজনের নানা জিনিস কিনতে সকাল- বিকেল ঝুলি নিয়ে আপনি বাজারে হাজির হন৷‌ রান্নার পাঁচফোড়ন থেকে সেলাইয়ের সুতো, কচি ডুমুর থেকে খলসে মাছ– বাজারে কী মেলে, তা নিয়ে শব্দ খরচ করে লাভ নেই৷‌ কথায় বলে, কলকাতার বাজারে নাকি বাঘের দুধও মেলে৷‌ অংশুমান রায়ের একটা বিখ্যাত গানের লাইন ধরে ঘটনায় ঢোকা যাক– ‘দাদা পায়ে পড়ি রে, মেলা থেকে বউ এনে দে৷‌’ বিয়েপাগলা ভাই দাদাকে বলছে, তাকে মেলা থেকে বউ এনে দিতে হবে! নিছক ঠাট্টাচ্ছলে লেখা এ গান৷‌ মেলায় বউ পাওয়া যায় নাকি! বুলগেরিয়ার কনে বাজারের কথা না জানলে গানটা ঠাট্টাই থেকেই যেত৷‌ ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়া৷‌ সেখানকার একটি জায়গার নাম স্টারা জাগোরা৷‌ গ্রাম হলেও আদতে শহরতলি৷‌ একটা বড় মাঠ৷‌ একদিকে ঘোড়া কেনাবেচার আসর বসেছে৷‌ আরেকদিকে বেশ ভিড়৷‌ চলুন, এবার সেই স্টারা জাগোরা এলাকায় যাওয়া যাক৷‌ বাজারের একদিকে অনেক মানুষের ভিড়৷‌ কিন্তু কোনও দোকান বসেনি৷‌ কেউ জিলিপিও ভাজছে না, বেলুনও বিক্রি হচ্ছে না৷‌ ‘হরেক মাল ১০টাকা’ গোছের কোনও দোকান নেই৷‌ হাট বসেছে, অথচ দোকানপাট নেই৷‌ এমন হয় নাকি! তার থেকে বেশি আশ্চর্যের, এই বাজারে আসা মানুষজনের হাবভাব! দারুণ ফিটফাট কয়েকজন যুবক৷‌ আর ফাটাফাটি সাজগোজ করা কয়েকজন তরুণী৷‌ কোথাও একট অদৃশ্য সাইনবোর্ড ঝুলছে– কনে বাজার! আজব বাজারের কাহিনি বলার আগে এর নেপথ্যে থাকা রোমা সম্প্রদায়ের কথা বলতে হবে৷‌ বুলগেরিয়ার খুব ছোট এক জনগোষ্ঠী রোমা, এঁরা রক্ষণশীল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ৷‌ সংখ্যায় মাত্র ১৮হাজার৷‌ স্হানীয় ভাষাায় এদের বলা হয় কালাইদঝি৷‌ পেশায় এরা প্রধানত তাম্রকার৷‌ ধর্মীয় আচার আচরণ পালন শুধু নয়, জীবনচর্যায় রোমা সম্প্রদায়ের মানুষ খুব গোঁড়া৷‌ এদের সমাজে ছেলেমেয়েদেব মধ্যে অবাধ মেলামেশার সুযোগ নেই৷‌ তারা একটু বড় হলেই বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকা পড়ে৷‌ মেয়েদের বয়স বছর পনেরো হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ৷‌ অভিভাবকদের আশঙ্কা, মেয়েদের দিকে কেউ কুনজর দিতে পারে! অর্থাৎ, মন দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ নেই৷‌ কিন্তু বিবাহ নামের প্রথাটি আছে রোমা সমাজে৷‌ পাত্রী বাছাইয়ের রীতি ভারী অদ্ভুত৷‌ বরের জন্য কনে বাছাই করতে বসে পাত্রীর বাজার৷‌ স্টারা জাগোরায় বছরে চারবার এই মেলা বসে– বসন্ত ও গ্রীষ্মে দু’বার করে৷‌ বাবা-মায়ের সঙ্গে দারুণ সেজেগুজে বাজারে হাজির হন তরুণীরা৷‌ পাত্রপক্ষের নজর টানতে খুবই আকর্ষণীয় পাত্রীদের সাজসজ্জা৷‌ পরনে ঝলমলে পোশাক, হাইহিল জুতো আর মিনি স্কার্ট৷‌ মাসকারা, ফিতে, ক্লিপ– নানা আয়োজন৷‌ বিভিন্ন ধরনের গয়নায় মোড়া পাত্রীর অঙ্গ৷‌ তাঁদের চাহনিতে গাঢ় আবেদন৷‌ পাত্রীরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন৷‌ বাজারে আসে পাত্রপক্ষ৷‌ ধরা যাক, একজন পাত্রের একটি মেয়েকে পছন্দ হল৷‌ ছেলেটি তাঁর কাছে যায়৷‌ দু’জনে কিছুক্ষণ কথা বলে৷‌ অভিভাবকরা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা সেরে নেন৷‌ মুখে মুখেই বায়োডাটা বিনিময় হয়ে যায়৷‌ যদি পছন্দ হয় ভাল, না হলে পাত্রপক্ষ আবার অন্য পাত্রীর দিকে হাঁটা দেয়৷‌ পাত্রী পছন্দ হলে শুরু হয় দরাদরি৷‌ মেয়েটি রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী হলে দাম বাড়ে, না হলে কমে৷‌ একেবারে বাজারের কায়দায় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দরাদরি শুরু হয়৷‌ সাধারণভাবে ১৩ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বিয়ে হয় রোমা কন্যাদের৷‌ বয়স কম হলে দাম বেশি, দ্বিতীয় বিয়ে হলে দর কম– এমন নানা খুঁটিনাটি বিষয় দেখেশুনে সিদ্ধান্তে পৌঁছয় দু’পক্ষ৷‌ বুলগেরিয়ার মুদ্রার নাম লেভ‍্৷‌ ১ লেভ‍্ সমান প্রায় ৩৭ টাকা৷‌ বুলগেরীয় অর্থনীতি সঙ্কটে পড়ায় পাত্রীর দাম গড়ে ১০-২০ হাজার লেভের মধ্যে ওঠানামা করছে৷‌ তার মানে পছন্দমতো বউ ঘরে আনার জন্য ৭ লক্ষ টাকা খসাতে হচ্ছে অভিভাবকদের! ইউরোপের অর্থনীতি যখন চাঙ্গা ছিল, তখন সুন্দরী ও গুণবতী পাত্রীর দাম চড়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত! আমাদের দেশে যৌতুকের প্রথা এখনও দিব্যি টিকে রয়েছে৷‌ ‘পাত্রী চাহ’ বিজ্ঞাপনে ফর্সা মেয়েদের কদর৷‌ এগিয়ে থাকা বা তথাকথিত আধুনিকতার খোলস আমাদের গায়ে এঁটে রয়েছে৷‌ তাই স্মার্টফোন কিংবা হাল ফ্যাশনের পোশাক প্রমাণ করে না, সমাজ কতটা আধুনিক হল৷‌ মোটা মাইনের চাকুরে কিংবা ডাক্তার হোক বা আইটি পাত্র, তাদের অভিভাবকেরা পাত্রীর জন্য পণ চাইতে কসুর করেন না– ছেলে মানে যে হিরের টুকরো! রক্ষণশীল রোমা সম্প্রদায় চাকা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে৷‌ রোমা পিতারা কন্যাদায়গ্রস্ত নন– পুত্রদায়গ্রস্ত! ছেলের বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনতে তাদেরই পকেট বেশি খসে! ২৯ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে