সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা মাদিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই বসতি গাইন সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের। কার্ত্তিক চন্দ্র গাইনের ছেলে রাজীব গাইন (১৯)। জন্ম থেকেই বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম তারা আজো জানেন না। তার বাম হাতটি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ফেপে উঠেছে। সেই সঙ্গে ফেপে উঠেছে তার পিঠও।
জন্মের তিন বছর পর নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। তবে সেখানে সুচিকিৎসা হয়নি। ডাক্তাররা তার রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসা দিতে পারেননি। তবে জানিয়েছিলেন বয়স যখন ১৫ হবে তখন আপনারা নিয়ে আসবেন। অপরারেশন করলে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে অভাবের সংসারে টাকা জোগাড় হয়নি। যার কারণে পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য আর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এসব কথা জানান রাজীবের মা মমতা রানী।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরা, খুলনায় ডাক্তার দেখিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। কোনো ডাক্তার রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেনি। কি রোগ হয়েছে ছেলের সেটিও আমরা জানি না। রাজীবের বাবা মাদুরের ব্যবসা করেন। সেটাতে খুব বেশি রোজগার হয় না। কোনো মতে সংসারটা চলে যায়। চিকিৎসা কীভাবে করাবো বলুন ?
তবে এই বিরল ও জটিল রোগ নিয়েও থেমে থাকেনি রাজীব গাইন। বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুল থেকে সফলতার সঙ্গে এসএসসি ও চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন।
রাজীব গাইন দুঃখের সঙ্গে বলেন, আমি আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই। স্কুল কলেজে গেলে অন্যরা আমাকে দেখে অনেক সময় দূর থেকে হাঁসি ঠাট্টা করে। কেউবা আবার সমবেদনা জানায়। আমার চলাফেরা করতে, রাতে ঘুমাতেও অনেক কষ্ট হয়। স্বাভাবিকভাবে কোনো কিছুই করতে পারি না। আমি সুস্থ হতে চাই। সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই। আপনাদের কোনো সুযোগ থাকলে আমার জন্য চেষ্টা করুন।
পরিবারটি অসহায় জানিয়ে বড়দল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম মোলা জানান, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছি। তাছাড়া এর থেকে আমাদের বেশি কিছু করার থাকে না। চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তার পরিবার কি করছে আমি জানি না।
ইউপি সদস্য নীলকণ্ঠ বলেন, আপনারা চেষ্টা করে দেখুন ছেলেটির চিকিৎসার জন্য কিছু করতে পারেন কিনা। টাকার অভাবে তার কোনো উন্নত চিকিৎসা আজো হয়নি।
যোগাযোগ করা হয় ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. জিএম আব্দুস সালামের সাথে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটি হেমানজিউমা রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব।
এদিকে, রাজীব গাইনের মা মমতা রানী সরকার ও বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন ছেলেকে সুস্থ করার জন্য।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস