রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৬:৩৫:৩০

৭টি কারণে রোহিঙ্গা মুসলমান নিধনে নীরব সু চি

৭টি কারণে রোহিঙ্গা মুসলমান নিধনে নীরব সু চি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সামরিক জান্তার কবলে দীর্ঘদিন ধরে থাকা মিয়ানমারে শান্তি আর গণতন্ত্রের সুবাতাস বয়ে এনে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন নেত্রী অং সান সু চি। যিনি গোটা বিশ্বে মানতাবাদী আর গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতা সু চি এর আগে ভোগ করেছেন দীর্ঘ গৃহবন্দিত্ব, সহ্য করেছেন দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা নির্যাতন। সেই সু চি কেন তার দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের নিধনযজ্ঞে নীরব এবং নিশ্চুপ? সু চির নীরবতার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। এসব হচ্ছে-

১। সু চি নিজে ও আর তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময়ে দমনপীড়ন ও বর্বরতার শিকার হয়েছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দল ও নিজেকে টিকে রাখার কারণেই নির্মোহভাবে রোহিঙ্গা সংকটের দিকে নজর দিতে চাচ্ছেন না।

২। সু চি কখনই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সমব্যথী ছিলেন না। গেল কয়েক বছর ধরেই তার এই দৃষ্টিভঙ্গি দেখা গেছে। ২০১৫ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রচারণায় রাখাইনে সহিংসতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন।

৩। ভোটের আগে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সু চির দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নির্বাচনমুখী। যদিও তার আগেও রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বিপন্ন হয়েছে। যখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়নি। সুচি ভোটের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের সমস্যার বিষয়টি সাংবাদিকদের ‘অতিরঞ্জিত’ না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৪। সু চিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাড়িত করা অন্যতম ব্যক্তি হলেন সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একজন মুসলিম লেখক মং থো কা। সু চি তার দলের (ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি-এনএলডি) প্রতিনিধিত্ব করেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৌদ্ধর মতো অনেক এনএলডি সদস্য মনে করেন, রোহিঙ্গারা বহিরাগত ‘বাঙালি’। তারা এ দেশে (মিয়ানমার) বসবাস করতে পারে না। সু চির দৃষ্টিভঙ্গি এনএলডি দ্বারা প্রভাবিত।

৫। সু চি হয়তো মনে করেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা নেই। গেল বছর সেজন্য হয়তো সু চি মিয়ানমারে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটিকে রোহিঙ্গা না বলতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৬। সু চি এমনটা মনে করেন রাখাইন রাজ্যে বর্বরোচিত সামরিক অভিযান বন্ধে তার সামর্থ বা শক্তি খুবই কম। তিনি সরকারের প্রধান হলেও শীর্ষ জেনারেল মিন অং হ্লেইংই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। কেননা, মিয়ানমারের সংবিধান সশস্ত্র বাহিনীকে সামরিক বাজেট ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিয়েছে। এ ছাড়া পার্লামেন্টে তাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসনও বরাদ্দ আছে।

৭। সু চির ধারনা, আগামীতে বেসামরিক শাসনের একটা পর্যায়ে গিয়ে রাজনীতিতে ভূমিকা কমে আসার পর সেনাদের ক্ষমতা কমবে। সে পর্যন্ত দলীয় লোকজনের কাছে উপেক্ষিত একটি বিষয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধাচারণ করে রাজনৈতিক শক্তি খরচ করাকে অবাস্তব মনে করেন সু চি।অ

তবে এতো কিছুর পরও সু চির দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিয়ানমারের কার্যত নেতা (যদিও আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট নন) সু চি নীরবে লাখ লাখ রোহিঙ্গার (১০ লাখের বেশি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যালঘু) হত্যা ও পালিয়ে যাওয়া দেখেছেন।

মানবতার বিরুদ্ধে এসব ঘটনায় সু চি নীরব থাকলেও গোটা বিশ্বে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে। বিশেষত রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এমনকি তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে