সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ০৬:১৮:৪৬

শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার রোহিঙ্গা শিশুর মায়ের বড় আশা ছিল সে কোরআনে হাফেজ হবে

শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার রোহিঙ্গা শিশুর মায়ের বড় আশা ছিল সে কোরআনে হাফেজ হবে

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকা থেকে ১১ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা শিশুকে উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শিশুটির নাম জেহাদুল ইসলাম। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু গ্রামের বাসিন্দা বলে শিশুটি জানায়। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন ও মায়ের নাম শাহিনা আক্তার।

শিশুটি জানায়, গত ৯ দিন আগে সে তার ৩ বছর বয়সী ছোট ভাইকে নিয়ে মিয়ানমার বর্ডার পার হয়ে বাংালাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় তার ভাই স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত ও পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে নাফ নদী পার হয়ে দেশে প্রবেশ করে। এর আগে মিয়ানমারের সেনারা তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এসময় সেনাবাহিনীর সহযোগী মগরা তার বাবাকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গুলি করে এবং মাকে জবাই করে হত্যা করে।

জেহাদুল ইসলাম বলে, আমরা সবাই ঘরে ছিলাম। হঠাৎ মগরা এসে বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। তখন আম্মা আমি ও আমার ছোট ভাইকে নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় আম্মাকেও তারা ধরে নিয়ে ছুরি দিয়ে জবাই করে মেরে ফেলে। আমি আমার ভাইকে নিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি আসামাত্র বোমার আঘাতে আমার ভাই আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর পর আর ভাইকে খুঁজে পাইনি। আমি সীমান্ত পার হয়ে নদী পথে এ দেশে চলে আসি। এভাবেই নির্মমতার বর্ণনা দেয় ১১ বছরের শিশু জেহাদুল ইসলাম।

জেহাদুল জানায়, সে ৮/৯ দিন আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। চট্টগ্রামে মানুষের মুখে শুনেছে সিলেটে হজরত শাহ জালাল (রহ.)-এর বড় মাজার আছে। সেই মাজারে গেলে খাবার পাওয়া যায়। এ কথা শুনে তারা ২০ জন ট্রেনযোগে সিলেট রওয়ানা দেয়। কিন্তু ওই ট্রেন ফেনীতে আসার পর পুলিশ তার সঙ্গের সবাইকে নামিয়ে দেয়। সে একা শ্রীমঙ্গলে চলে এলে স্থানীয় এক মুরব্বি তাকে পেয়ে বাসায় নিয়ে যান। ওখানে ৪/৫ দিন থাকার পর রোববার তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

চকলেট কালারের পাজামা পাঞ্জাবি মাথায় সাদা টুপি পরিহিত শিশু জেহাদুল জানায়, মায়ের বড় আশা ছিল সে কোরআনে হাফেজ হবে। মংডুর এক মাদ্রাসায় সে ৩য় শ্রেণীতে পড়ত। মগরা সেই মাদ্রাসাটাও আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কে নজরুল বলেন, গত মঙ্গলবার শিশুটিসহ আরো ২০/২২ জন রোহিঙ্গা সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে উঠে। ফেনী রেল স্টেশনে পুলিশ বাকিদের নামিয়ে নিলেও ট্রেনের আসনে বসে থাকায় তাকে কেউ কিছু বলেনি। এসময় শহীদ মিয়া নামে শ্রীমঙ্গলের এক যাত্রী তাকে শ্রীমঙ্গল নামিয়ে তার বাসায় নিয়ে যায়। গতকাল রোববার দুপুরে বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দিলে পুলিশ জিহাদকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত জিহাদকে কক্সবাজার শরণার্থী শিবিরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে ওসি কেএম নজরুল জানিয়েছেন।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে