শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১১:০৪:৪৫

যে যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি

যে যুদ্ধ পাল্টে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতি

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আজ থেকে ৪৪ বছর আগের কথা। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় ইসরায়েল, মিসর আর সিরিয়ার মধ্যে। যে যুদ্ধের ফলে আরব বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি একেবারে বদলে যায়।

কিন্তু কেন যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল তিনটি দেশ? যুদ্ধ ১৯৭৩ সালে শুরু হলেও তার ভিত্তি গড়ে উঠেছে ছয় বছর ধরে। ১৯৬৭ সালে মিসর, জর্ডান এবং সিরিয়া মিলে ইসরায়েলের সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

ছয়দিনের ওই যুদ্ধের জেরে মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ইসরায়েল সেনাবাহিনী হামলা চালায়। ১৯৬৭ সালে হারের বদলা নিতেই ছয় বছর পর যুদ্ধে জড়ায় মিসর এবং সিরিয়া।

ঠাণ্ডা লড়াইয়ে আরব দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া এবং ইসরায়েলের পিছনে বরাবরই নির্ভরতার হাত দিয়ে রেখেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সাহায্য অব্যহত রাখে দেশটি।

মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল আসাদ গোপনে সিদ্ধান্ত নেন উভয়ের সেনাবাহিনীকে এককাতারে নিয়ে আসবেন। ইহুদিদের পবিত্র দিন ইয়ম কিপুরের সময় ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলে আরব জোট অতর্কিত হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে।

৬ অক্টোবর ১৯৭৩ সাল। সেদিন ছিল শনিবার। দুপুর ২ টার পরপরই মিসর এবং সিরিয়ার সেনাবাহিনী সোভিয়েতের কাছ থেকে কেনা ভারী অস্ত্র নিয়ে দু'দিক থেকে হামলা চালায় ইসরায়েলের উপর।

বদরে অভিযান চালানোর পর সুয়েজ খাল পার হয়ে বার লেভ লাইন দখলে নেয় মিসরের সেনারা। মিসর সেনাবাহিনীর সেই সফলতাকে ২৫ বছরের জয় বলে উল্লেখ করা হয়। সিরিয়ার সেনাবাহিনীও উত্তরাঞ্চল দখল করতে থাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

মাত্র তিন দিনের মধ্যেই ইসরায়েলিরা সিরিয়ানদের যুদ্ধবিরতি রেখার বাইরে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার অভ্যন্তরে চারদিনব্যাপী পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলি গোলন্দাজরা এক সপ্তাহের মধ্যে দামেস্কের উপকণ্ঠে গোলাবর্ষণ শুরু করে।

মিত্রের কথা চিন্তা করে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত পুনরায় হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই এই আক্রমণ ঠেকানো হয়। উল্টোদিকে ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ করে বসে। তারা মিসরের দক্ষিণ ও পশ্চিমে কায়রোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

ইসরায়েল নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নেয় ২৪ অক্টোবর নাগাদ। মিসরের থার্ড সেনাবাহিনী এবং সুয়েজ শহর ঘিরে ফেলতেও সক্ষম হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ে তাদের নিজ নিজ মিত্রদের এসময়ে সহায়তা করে। ফলে দুইটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। যুদ্ধবিরতি হয় ২৫ অক্টোবর।

১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে মিসরকে সিনাই উপদ্বীপ ফিরিয়ে দেয়া হয়। আর সে সময়ই প্রথমবারের মত কোনো আরব রাষ্ট্রকর্তৃক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে মিসর।

যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং মিসরের প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনে আসার আহ্বান জানান। পরে তিন নেতা মিলে ওয়াশিংটনে বসে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সালেই শান্তি চুক্তি করেন। ১৯৭৯ সালের মার্চে ওয়াশিংটনেই দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

জর্দান পশ্চিম তীরকে জর্দানের অংশ হিসেবে দাবী করতে থাকলেও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৮৮ সালে জর্দানের বাদশাহ হুসেন পশ্চিম তীরের উপর থেকে জর্দানে দাবি প্রত্যাহার করে নেন। ১৯৯২ সালে জর্ডানও ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে যায়। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুনভাবে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করতে হয়। -আল জাজিরা
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে