গাছের পাতায় পাতায় ছাগল!
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এমন কিছু ঘটনা আছে যা সহজে বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলেও কিন্তু সত্যি। বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটছে এমন ঘটনা। যদি বলা হয়, গাছের ওপর উঠে পাতা খায় ছাগল! বিষয়টি শুনে কেমন লাগবে আপনার?
হয়তো আপনার মনে হবে এটি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
অবশ্য অদ্ভুত দৃশ্যটা দেখলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে। একদল ছাগলকে গাছে চড়ে বসে থাকতে দেখলে অবাক না হওয়ার কোনো কারণও নেই। মরক্কোর তামরি জাতের ছাগলের খাবারের খোঁজে গাছে ওঠার ঘটনা স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে একেবারেই সাধারণ ঘটনা।
কাঁটাযুক্ত আরগান গাছের ডালপালা অনেক নিচ থেকে শুরু হয় বলে গাছ বাওয়ায় দক্ষ ছাগলগুলোর গাছগুলোতে উঠতে মোটেই বেগ পেতে হয় না।
মরক্কোর ছাগলগুলোর খুরগুলোতে আছে দুটি করে আঙুল। যার কারণে এরা ভারসাম্য ঠিক রেখে সহজেই গাছে উঠে পাতা খেতে ওস্তাদ।
তবে পাতাই শুধু নয়, জলপাইয়ের মতো দেখতে আরগান ফল খাওয়ার লোভে গাছে চড়ে ছাগলগুলো। মরক্কোর দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার মরু অঞ্চল ছাড়া আলজেরিয়ার পশ্চিমে টিনডিফ এলাকায় বিশেষ ধরনের আরগান ফল হয়।
এ ফলের বীজ থেকে পাওয়া যায় আরগান তেল। এই তেল সেখানকার অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলটির দৈর্ঘ্য দুই থেকে চার সেন্টিমিটার। শক্ত খোসার আবরণের ভেতরে থাকা রসাল অংশটিই মূলত ছাগলের প্রিয় খাবার।
সাধারণত জুন-জুলাইয়ের দিকে ফলটি পাকতে শুরু করলেও পাকার আগেই খেয়ে ফেলার বদাভ্যাস আছে ছাগলের। স্থানীয় অধিবাসীরা ফল পাকার মৌসুমের আগে ছাগলগুলোকে আরগান গাছের আশপাশে ভিড়তে দেয় না।
তবে আরেকটি কারণে স্থানীয় বারবার জাতির লোকেরা ফল পাকার সময় ছাগলগুলোকে সানন্দেই ফল খেতে দেয়। ছাগলে খাওয়া নিঃসৃত বর্জ্য থেকে বীচিগুলো আলাদা করেই তৈরি করা হয় তেল। কসমেটিকস তৈরিতেও এর ব্যবহার চোখে পড়ে।
প্রসাধনসামগ্রীতে ব্যবহারের কারণে বিগত দুই দশক ধরে আরগান তেলের চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে এই তেল এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি তেল, যার প্রতি লিটারের দাম ৩০০ ডলার বা ২৩ হাজার টাকা। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, এই আরগান তেলের কারণেই কমে যাচ্ছে আরগানগাছের সংখ্যা। স্থানীয়রা তেল বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে বেশি বেশি ছাগল কিনছে। ছাগলে পাতা ও ডালপালা খেয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি। আবার কাঠের জন্যও কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ।
ছাগলের বর্জ্য থেকে তেল সংগ্রহ বারবারদের প্রথাগত পদ্ধতি। তবে এই তেল ছাগলের গন্ধযুক্ত হওয়ায় খুব বেশি ব্যবহার করা হয় না। তবে অত্যধিক লাভের কারণে স্থানীয় কৃষক ও রাখালদের কেউ কেউ এখনো সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করেই বীজ থেকে তেল বের করছে। অবশ্য আরগান তেল ব্যবহারে সাবধানবাণী রয়েছে।
১০ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম
�