শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫৫:৩৫

প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইরানীদের কাছে কেন এত জনপ্রিয়?

 প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ইরানীদের কাছে কেন এত জনপ্রিয়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী, দূরদর্শী নেতা হিসেবে সারা বিশ্বেই ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমেদিনেজাদ সমাদৃত। বিশ্বের একসময়কার অন্যতম প্রভাবশালী ইরানের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট এখনো খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করেন। ইরানের মানুষের কাছে তিনি অুপ্রেরণার অসাধারণ এক উৎস।

এক. মাহমুদ আহমেদিনেজাদের জন্ম প্রত্যন্ত গ্রামে ও খুব গরিব পরিবারে। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কামার। অথচ কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ট্রান্সপর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

দুই. প্রেসিডেন্ট হবার পরও জীবনযাপন ছিল সাধারণ। আভিজাত্য তাকে স্পর্শ করেনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ছোট্ট বাড়িই বসবাসের জন্য পছন্দ করেন। তার বাসায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্র নেই। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের উপর ঘুমাতেন। আর নিজের ঘরের ফ্লোরে একটা পুরনো কার্পেটের উপর বালিশ বিছিয়ে ঘুমান। তার বাসায় কোনো শোয়ার খাট নেই। তিনি কার্পেটেই বসে থেতে পছন্দ করেন কিন্তু কোনো ডাইনিং টেবিলে নয়।

তিন. ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে আছে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি। পুনর্নিমিত দুই তলা ভবনেই তিনি ও তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। যে জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটার আয়তন মাত্র ১৭৫ বর্গমিটার। বেতন হিসেবে তেহরান ইউনিভার্সিটি থেকে পাওয়া ২৫০ ইউ এস ডলার দিয়েই সংসার পরিচালনা করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীনও রাষ্ট্র থেকে কোনো টাকা নেননি। বিবিসির সাংবাদিক তাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, সব সম্পত্তি হল রাষ্ট্রের আর তার কাজ হল সেগুলো পাহারা দেওয়া।

চার. প্রেসিডেন্ট ভবন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। সপ্তায় পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ইরানিদের চিঠি গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তেহরানের মসজিদে দান করে দেন, সাধারণ মানের কার্পেট বিছান। ভিআইপি অতিথিশালাও বন্ধ করে দেন। সাধারণ ঘরেই ভিআইপিদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়।

পাঁচ. যখন তেহরানের মেয়র ছিলেন তখন তিনি নিজ হাতে তেহরানের রাস্তা ঝাড়ু দিতেন। প্রেসিডেন্ট ভবনেও ফ্লোরে কার্পেটের উপর ঘুমাতেন। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলেন মাত্র ৪৫ জন (২৫ জন নারী এবং ২০ জন পুরুষ) অতিথিকে । শুধুমাত্র কমলা, আপেল, কলা ও ছোট এক টুকরো কেক দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। এনবিসি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি অত্যন্ত হাসিমুখে বিনয়ের সাথে বলেন, এর চাইতে বেশি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই।

ছয়. সময়ের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। নিতান্তই সাদামাটা একজন মানুষ। স্ত্রীর হাতে বানানো নাস্তা খেয়ে সকাল ৭টায় অফিসে যান। যাওয়ার সময় সাথে করে কালো ব্যাগে করে নিয়ে যান দুপুরের খাবার। দুপুরে অফিসে সবার সামনে মেঝের কার্পেটে বসে সেই খাবার খান।

সাত. দিনের একটা উল্লেখযোগ্য সময় তিনি বাসার দারোয়ান, পথচারী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে কাটান এবং তাদের সাথে সুখ-দুঃখ শেয়ার করেন।

আট. প্রতিদিন মাত্র ৩ ঘন্টা ঘুমান। প্রতিদিন সকাল ৫ টায় ফজরের নামায পড়ে কাজ শুরু করেন আর রাত ২টায় এশার নামায ও ব্যক্তিগত স্টাডি শেষ করে ঘুমাতে যান।

নয়. নামাযের জামাতে তিনি সব সময় পিছনের সারিতে সাধারণ মানুষের সাথে দাঁড়াতে ভালোবাসেন। মসজিদে সামনের কাতারে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগীতা করেন না। কখনো নামায বাদ দেন না। রাস্তায় থাকাকালে নামাযের সময় হলে তিনি রাস্তায় ছোট্ট কাপড় বিছিয়ে সেখানেই নামায আদায় করে নেন। তিনি মহান আল্লাহকে তার সর্বোত্তম দেহরক্ষী মনে করেন।

দশ. তিনি তার আসল পেশা শিক্ষকতায় ফিরে গেছেন। পাবলিক বাসে চড়ে ক্লাস নিতে যান! পাবলিক বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও যান গন্তব্যে! সাবেক প্রেসিডেন্ট হয়ে পাবলিক বাসে চড়তে একটু অস্বস্তিতে ভোগেন না তিনি, তার সহকর্মী-সহযাত্রীদেরও দেখা যায় একেবারে স্বচ্ছন্দ।
এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে