শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৪:১১:২৮

কবরের সঙ্গে মানুষের বসবাস!

কবরের সঙ্গে মানুষের বসবাস!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : কবরের সঙ্গে মানুষের বসবাস- কথাটি বেমানান মনে হলেও ঘটনা কিন্তু সত্যি। ঘরের ভেতরে কবর, দুই পাশে বসতঘর মাঝখানে কবর। এমন ঘটনা ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরদার বাড়িতে। তিনশ’ পরিবারের প্রায় আটশ’ লোক বসবাস করছেন কবরের সঙ্গে। ঘরের পাশে আবার কোথাও ঘরের ভেতর কবর থাকলেও রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম সবকিছুই চলে। অমানবিক হলেও এ রীতিই সেখানে। ইসলামের বিধান অনুসারে, মৃত্যুর পর একজন মুসলিমের লাশ কবরস্থানে দাফনের নিয়ম থাকলেও আমুয়া গ্রামের সরদার পাড়ায় নিজ ঘরেই দাফন করা হচ্ছে স্বজনদের মরদেহ। অবশ্য জমির অভাব ও সামাজিক বৈষম্যের কারণেই যুগযুগ ধরে ঘরের ভেতর কবরস্থ করার রীতি চলে আসছে। জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে বিষখালী নদী তীরবর্তী এ স্থানে ১৮০ শতাংশ জমির ওপর বসতি শুরু করেন সরদার বংশের লোকজন। তাদের সবারই পেশা ছিল মাছ ধরা ও বিক্রি করা। বিষখালী নদীতে মাছ ধরে তা পার্শ্ববর্তী আমুয়া বাজারে বিক্রি করা। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করত তারা। নদীর পাড়ের এই মৎস্যজীবীরা আগে ছিল বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রায় একশ’ বছর আগে একযোগে সবাই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বসবাস শুরু করেন সরদার পাড়ায়। সামাজিক বৈষম্যের কারণে সে সময় স্থানীয় গোরস্থানে কবর দেয়া হতো না সরদার পাড়ার কারো মরদেহ। তখন থেকেই আঙিনায় কবর দেয়ার রেওয়াজ চালু হয় সেই গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরেই এক খন্ড জমির অভাবে প্রিয়জনকে দাফন করছেন নিজের ঘরেই। কারো কারো আঙিনায় একাধিক কবরেরও দেখা মেলে। জায়গা না থাকায় কেউ মারা গেলে ঘরের আশপাশে দাফন করা হতো। পরে নিজ ঘরের মধ্যেই স্বজনকে কবর দিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। বংশ বৃদ্ধির কারণে জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি জমির পরিমাণ। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কোনো জমিও ক্রয় করতে পারেননি তারা। বাধ্য হয়েই ঘরের পাশে, উঠানের কোণে দাফন দেয়া শুরু করে স্বজনদের। পরবর্তীতে জায়গা না থাকায় বসতঘর নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস শুরু করে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে শোবার ঘর পর্যন্ত সবখানেই কবর। এ অবস্থায় সরদার বাড়ির শিশুদের মধ্যে অজানা ভয় বিরাজ করছে। অধিকাংশ সময় বিশেষ করে রাতে শিশুরা চলাফেরা করতে ভয় পায়। দুঃখ কষ্ট নিয়ে স্বজনদের কবরের সঙ্গে বসবাস করছেন সেখানকার মানুষরা। ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর স্থানীয় উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের জন্য একটি কবর স্থানের জায়গার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। ১৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে