বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:৩২:৪৯

সৎ রাজনীতিবিদের উদাহরণ ছায়েদুল হক

সৎ রাজনীতিবিদের উদাহরণ ছায়েদুল হক

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: পাঁচ বারের এমপি। তার ওপর মন্ত্রী। কিন্তু অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের জীবন যাপনের পরিবর্তন হয়নি কখনোই। গ্রামের বাড়ির চেহারা যেন তার জীবন আদর্শেরই এক প্রতীক হয়ে উঠেছে এখন। নিয়মিত ডাকবাংলোর বিল পরিশোধ, নিজের পকেট থেকে খাবার খরচ মিটিয়ে রেখে গেছেন তিনি সততার আরেক উদাহরণ। এলাকার উন্নয়ন আর মানুষের জন্য কাজ করা হয়ে উঠেছিল তার দিনরাত।

নিজেকে নিয়ে ভাবেননি কখনো। শারীরিক অসুস্থতায় হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়েও নাসিরনগরের উন্নয়ন চিন্তাতেই ডুবেছিলেন। দিয়েছেন এলাকার নানা কাজের নির্দেশনা। চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বারবার। তার এসব গুণাবলীর কথা ফিরছে এখন নির্বাচনী এলাকার মানুষের মুখে মুখে। কাঁদছেন দলের কর্মী-সমর্থক আর সাধারণ মানুষ। ছায়েদুল হক ১৯৭৩, ৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন তথা নাসিরনগর থেকে। ২০০১ এর নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও জয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন খুবই সৎ এবং ধার্মিক। তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তেন নিয়মিত। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই নেতাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। কিন্তু ক্ষমতা তাকে বদলাতে পারেনি। সাদামাটা জীবনের গণ্ডি পেরোননি তিনি। পূর্বভাগ গ্রামে পৈতৃক টিনের ভাঙ্গাচুরা দুটি ঘর যেন তারই জানান দেয়। এর মধ্যে একটি বৈঠক ঘর, আরেকটি বসত ঘর। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ছায়েদুল হকের পৈতৃক বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর আবার তা নতুন করে বানানো হয়। সেই ঘর এখন জরাজীর্ণ। ছায়েদুল হক তাতে আর হাত দেননি। তার চাচাতো ভাই আবদুল বাছির বলেন-আমরা অনেকবারই বলেছি বাড়িঘর করার জন্যে। বলেছি চেয়ার টেবিল নাই। মানুষ আসলে বসতে দিতে পারি না। মানুষ সমালোচনা করে মন্ত্রীর বাড়ির এই অবস্থা। এসব শুনে তিনি আমাদের ধমকাতেন। বাড়িটিতে থাকেন বানেশ্বর নামের এক হিন্দু লোক। বানেশ্বর জানান-৫০ বছর ধরেই তিনি এ বাড়িতে আছেন। তার কোনো বাড়িঘর নেই। ছায়েদুল হক বাড়িতে এলে তার ঘরে যে খাবার রান্না হতো তাই খেতেন। ছায়েদুল হকের স্বজনদের আরো কয়েকজন বলেন- তিনি নিজের স্বার্থের কথা কখনো চিন্তা করতেন না। আমাদেরকে বলতেন আমি নবীর উম্মত। নবীর মতোই জীবনযাপন করতে চাই। আমাদেরকে বলতেন আখেরের চিন্তা করো। তার এক ভাতিজি বলেন- যা করেছেন দাদাই করেছেন। চাচা (ছায়েদুল হক) নিজের ছেলে-ভাই, ভাতিজা কারো জন্যে কোনো কিছু করেননি। সব করেছেন দেশের মানুষের জন্য।

ছায়েদুল হকের ছেলে রায়হানুল হক এবং ছেলের বউ এমবিবিএস ডাক্তার। নাসিরনগরের দুটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে তারা চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন দীর্ঘদিন। মন্ত্রী পিতার বদৌলতে অনায়াসেই তারা রাজধানী বা জেলা শহরের কোনো হাসপাতালে পোস্টিং নিতে পারতেন। কিন্তু ছায়েদুল হক তা করেননি। একবারে সাধারণ জীবন যাপন বা ক্ষমতার দাপট না দেখানোর এমন অনেক গল্পই ফিরছে এলাকার মানুষের মুখে মুখে। নাসিরনগরে এলে ডাকবাংলোতেই থাকতেন তিনি। যে ক’দিন থাকতেন হিসেব করে এর ভাড়া মিটিয়ে যেতেন। খাবারের টাকাও দিতেন নিজের পকেট থেকেই। নাসিরনগরের সংবাদকর্মী এমডি মুরাদ মৃধা বলেন- উপজেলা প্রশাসনে যারা চাকরি করেন তারা কখনোই ছায়েদুল হক এমপি বা মন্ত্রী কর্তৃক চাপে থাকেননি। তার রাজনৈতিক কর্মী-সমর্থকরা কোন কাজে কারো ওপর চাপ সৃষ্টি করেননি। আত্মীয়স্বজন কেউ অফিসে গেলে ডেকে এনে বিচার করেছেন তিনি। প্রশাসন ছিল এখানে স্বাধীন। থানায় কোনো দালালি ছিল না। তিনি রাতের খাবার অবশিষ্ট থাকলে সেটিই আবার সকালে খেয়েছেন। তিনি ছিলেন শতভাগ সৎ। ডাকবাংলোর কেয়ারটেকার মো. আলী মিয়া জানান- মন্ত্রী স্যার ডাকবাংলোয় এসেই খাবারের টাকা দিয়ে দিতেন। আর যাওয়ার সময় দিয়ে যেতেন থাকার ভাড়া। তার ভাড়া বাকি নেই। ছায়েদুল হক ডাকবাংলোর যে কক্ষটিতে থাকতেন সেটিও ছোটখাটো। ভেতরে একসেট সোফা আর একটি খাট। একটি আলনা রয়েছে। আলনায় ঝুলে রয়েছে ছায়েদুল হকের নামাজের বিছানাটি। কক্ষটির দেয়ালের কোনো কোনো দিকের চুনকামও উঠে গিয়েছে। কিন্তু এসবে কখনোই খেয়াল করেননি ছায়েদুল হক। তিনি সর্বশেষ এলাকায় এসেছিলেন ১০ই আগস্ট।

ছায়েদুল হক পত্নী দিলশাদ আরা বলেন- তিনি ছিলেন আদর্শবান একজন মানুষ। এলাকার মানুষকে ভালোবাসতেন। পরিবার বলতে কোনো কিছু ছিল না তার। তিনি আরো জানান- ছায়েদুল হকের নিজের কোনো সম্পদ নেই। সরকার তাকে একটি জায়গা দিয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রকৃতই মাটি ও মানুষের নেতা হয়ে উঠেছিলেন ছায়েদুল হক। তার নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণেই নাসিরনগর ছিল শান্তির এক জনপথ।-এমজমিন
এমটি নিউজ/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে