এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: ভাের হওয়ার আগেই নর্থ ক্যারোলিনা হাসপাতালে ছুটে এলেন জেরেমি কলে। তার স্ত্রী জন্ম দিতে যাবে সন্তান। আর এই সন্তান জন্ম দিতে গিয়েই কোমায় চলে গেলেন জেরেমি কলের স্ত্রী শেলি। তাকে ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল গোটা পরিবার। শেলিকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন তার রক্তচাপ প্রায় ৬০/৪০, হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ১০৮। চিকিৎসকেরা বলছিলেন "লাস্ট-চান্স ভেন্টিলেটর।" কি আর করা এর উপরই ভরসা করতে হলো তাকে।
জন্মদেওয়া শিশুটির বয়স তখন মাত্র কয়েক ঘন্টা। তবে তখনও মিরাকলের আশা ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। জেরেমি বলেন, "হাসপাতালের নার্সরা আমাকে বলেন শিশুটিকে কোনও পোশাক ছাড়া শেলির বুকের ওপর রেখেদিতে। যাতে নিজের সন্তানের শরীর অনুভব করতে পারে শেলি। শুনতে পায় তার হৃদস্পন্দন, শিশুর গায়ের গন্ধে অনুভব করে মাতৃত্বের স্বাদ। এই অনুভূতিই তাকে লড়াই করার শক্তি জোগাবে।"
সেই অনুযায়ী শিশু রায়লানকে শুইয়ে দেওয়া হয় মায়ের বুকের ওপর। সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ে রায়লান। তাকে কাঁদাতে চিমটি কাটেন চিকিৎসকরা। রায়লান কেঁদে উঠতেই মায়ের মর্মস্থলে পৌঁছয় সেই কান্না। এর ১ সপ্তাহ পর জেগে ওঠেন শেলি। ফিরে এসে শেলি বলেন, "খুব অদ্ভুত অনুভূতি...স্বপ্ন ও বাস্তবের মাঝামাঝি একটা অবস্থায় ছিলাম আমি। রায়লানের মুখ যেন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন জানতাম না এক সপ্তাহ ঘুমিয়ে ছিলাম আমি। ফিরে আসার পর রায়লানকে প্রথম দেখি আমি।"
৩৫ বছর বয়সের জেরেমি কলে এখন কনকর্ডের ওয়াইএমসিএ ডিরেক্টর, আর ২৪ বছরের এন সি শেলি কলে নার্সিংয়ের ছাত্রী। জানান, সন্তান ধারণের চেষ্টা তারা করছিলেন না, আবার সন্তান না আসুক এমনটাও চেষ্টা ছিল না তাদের। শেলি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় খুব খুশি ছিলেন তার গোটা পরিবার এবং তারা স্বামী-স্ত্রী। স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানের জন্ম দিতে চেয়েছিলেন শেলি। সেইমতো স্বামী স্বাভাবিক জন্মের বিশেষ ক্লাসেও নিয়ে যেতেন। বলেন, "যাকে ভালবাসেন তার সন্তান যখন আপনার গর্ভে থাকে তখন অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। আমি জেরেমিকে সব অনুভূতির অংশীদার করতে চেয়েছিলাম। সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু হঠাৎই কেমন যেন সব গোলমাল হয়ে গেল।"
শেলির ডেলিভারির প্রায় একমাস আগে চিকিৎসকেরা জানান শেলির পায়ে রক্তজমাট হয়ে রয়েছে। ব্লাড থিনারের সাহায্যে শেলির চিকিৎসা শুরু হয়। ক্যালোলিন মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা শুরু করে। আর তখনি চিকিৎসকরা জানান, প্রি-একলাম্পশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন শেলি। এক বিরল সমস্যা HELLP সিনড্রোম দেখা দিয়েছে যার থেকে বেঁচে ফেরা শুধুই ভাগ্যের লিখনেই সম্ভব।
রাত সাড়ে ১১টা অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। শেলি বলেন, "আমি ভয় পেয়েছিলাম আমার জ্ঞান ফিরবে না। জানি না কেন এমনটা হয়েছিল। বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।" রায়লানের জন্মের কিছু সময় পরই চিকিৎসকরা জেরেমিকে জানান শেলির ফুসফুসে ফ্লুইড ভরে গিয়েছে। পালমোনারি এমবলিজমের ফলে কোমায় চলে গিয়েছেন শেলি। ২১ ইউনিট ব্লাড পাম্প করা হয় শেলির শরীরে। ভেন্টিলেটরে জীবিত রাখা হয় তাকে। অবশেষে শেষ চেষ্টা করতে রায়লাকে শেলির বুকের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/