স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পঞ্চপাণ্ডবদের নিয়ে নিয়মিত লেখার আজ আমরা জানবো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পঞ্চপাণ্ডবদের মাঝে তিনি একজন। শত অবদানের পরেও তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুধুমাত্র পার্শ্ব চরিত্র তিনি। বিগত পাঁচ বছরে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচয়ে বেশি নিজেকে পরিবর্তন করা ক্রিকেটার তিনি।দলের সাধারণ এক খেলোয়াড় থেকে হয়েছেন দলের অপরিহার্য সদস্য।বিগ শট নিতে না পারা খেলোয়াড়টাই আজ দেশের অন্যতম সেরা টি-টুয়েন্টি স্পেসালিস্ট। পরিশ্রমের কাছে যে মেধাও হার মানতে বাধ্য সেটা প্রমাণ করেছেন তিনি।ইতিমধ্যে হয়তো আপনারা বুঝে ফেলেছেন আমি কার কথা বলছি হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন বলছিলাম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কথা।ব্রহ্মপুত্রের তীরে বেড়ে ওঠা শান্ত ছেলেটি নানা ঘাত প্রতিঘাত সয়ে চড়াই উত্রাই পাড়ি দিয়ে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে ১০ বছর অতিক্রম করতে চলসে।আজ রিয়াদের ক্যারিয়ারের সেরা পাঁচটি ইনিংসের গল্প শোনাবো আজ। চলুন তাহলে শুরু করা যাক
(এক):-
রিয়াদের অসংখ্য অসাধারণ ইনিংসের মধ্য আমার মতে সবচেয়ে বেশী কার্যকর ইনিংস মনে হয়েছে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই সেঞ্চুরি টা। ৩৩ রানে চার উইকেট পড়ার পর সাকিবের সাথে তার গড়া ২২৪ রানের পার্টনারশিপ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা পার্টনারশিপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আট চার,,চার ছয়ের মাধ্যমে করা সেঞ্চুরির মাধ্যমে দিয়েছিলেন তার ক্রিকেটীয় মেধাসত্তার পরিচয়।যদিও এ ম্যাচেও পার্শ্বনায়ক হয়ে যান রিয়াদ।ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া সাকিব লাইমলাইটের সবটুকু আলো কেড়ে নেন তার দিকে।
(দুই):-
২০১৫ বিশ্বকাপের সেই ইংল্যান্ড বধের সেই মহাকাব্যিক ম্যাচের কথা নিশ্চই মনে আছে আপনাদের। ইংলিশ বোলারদের পেস আর সুইংয়ে অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে খাবি খাচ্ছেন সেখানে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রিয়াদ খেলেন ১০৩ রানের ঝলমলে ইনিংস।রিয়াদের সেঞ্চুরি টি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম শতক ও বাংলাদেশি ব্যাটসমেনদের মধ্যে বিশ্বকাপে করা একমাত্র শতক।
(তিন):-
যদি জানতে চান রিয়াদের প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের হওয়ায় গল্প তাহলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে। সেদিন ক্যারিবিয়ানদের ২৪৯ রানের টার্গেটে রিয়াদের ৭০ বলে ম্যাচ জেতানো ইনিংস ও সাথে ২ উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মত ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জিতে নেন রিয়াদ।
(চার):-
আচ্ছা রিয়াদের অভিষেক টেস্টের কথা কি মনে আছে আপনাদের? যদি মনে না থাকে তবে বলছি- রিয়াদ কিন্তু শুধু ব্যাটসম্যান না দলের প্রয়োজনে হাত ঘুরিয়ে অফস্পিন টাও করতে জানেন তিনি যার প্রমাণ দিয়েছিলেন অভিষেক টেস্টেই।২০০৯ সালের ৯ জুলাই কিংস্টনের দি ভেল গ্রাউন্ডে টেস্ট ক্যাপ পড়েন রিয়াদ।অভিষেক টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে যথাক্রমে ৩ ও ৮ উইকেট নিয়ে একাই ধসিয়ে দেন ক্যারিবিয়ানদের।
(পাঁচ):-
টেস্টে প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চার শতাধিক রান করতে পেরেছিল বাংলাদেশ ওই রিয়াদের সৌজন্যই। ১৯৬ রানে ছয় উইকেট পরার পর রিয়াদ লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসমেনদের সাথে ছোট ছোট জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান একটা সম্মানজনক স্কোরের দিকে।ওই ইনিংসে রিয়াদ খেলেন ১৭৭ বলে ১১৬ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস।
এইযে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, হ্যাঁ ভাই আপনাকেই বলছিলাম সাকিবের মত আপনার স্টারডম নাই থাকতে পারে,,তামিমের মত ক্রিকেটীয় পরিবারে আপনার জন্ম নাই হতে পারে,,মাশরাফির মত আপনার ফ্যানবেজ নাই থাকতে পারে,,বিজয়-নাসিরদের জন্য ফেসবুকে আন্দোলন হতেই পারে আপনার জন্য তেমনি নাই হতে পারে,,মিরাজ-মুশফিকের মত হয়ত আপনি আবেগ দেখানোর নামে ন্যাকামি করতে পারেননা,,সৌম্য-সাব্বিরদের প্রতি কোচের আলগা দরদ থাকতেই পারে আপনার ক্ষেত্রে তেমনটা নাই থাকতে পারে তাই বলে আপনি হতাশ হবেননা।
১৬ কোটি বাঙালি জানে আপনি হতাশ হবার পাত্র নন।আপনার লাইমলাইটে আসার ইচ্ছা নাই থাকতে পারে,,আপনি প্রচারবিমুখ হতেই পারেন।আপনার সেই বিখ্যাত উক্তি কিন্তু জাতি ভোলেনি এখনো।আপনি বলেছিলেন,”আকাশে চাঁদ উঠলে নাকি কাউকে ডেকে দেখাতে হয়না চাঁদের আলো এমনিতেই সকলের কাছে পৌঁছে যায়”।হ্যাঁ ঠিক তাই আপনি যতই আড়ালে থাকুন না কেন,যতই আপনি অভিনয় করুন পার্শ্বচরিত্রে তবুও আপনার ক্রিকেটীয় মেধাসত্তার পরিচয় পেয়ে গেছে দেশবাসী।
আপনি থাকবেন ষোল কোটি বাঙালির হৃদয়ে হয়তো চুপিসারে নীরবে নিভৃতে।বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপনার মত একজন ম্যাচ উইনার,সাইলেন্ট কিলার,নিরব ঘাতক,ঠান্ডা মাথার খুনিকে বড্ড প্রয়োজন।আরো শতবার দেখতে চাই আপনার ব্যাটে সৌন্দর্যের ছটা আর কমেন্ট্রি বক্সে শুনতে চাই,”ম্যামাডুল্লা ইজ ওন ফায়ার “।
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি