বিনোদন ডেস্ক : বিশ্বে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বড় ক্ষেত্র মুম্বাইভিত্তিক চলচ্চিত্র শিল্প 'বলিউড'। সেখানে সেলুলয়েড পর্দায় সিনেমার গল্প চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে পরিচালক, প্রযোজকদের প্রচেষ্টার কমতি থাকে না। দর্শক অনুভূতিকে চরমভাবে নাড়া দিতে বলিউড ইতিহাসে সৃষ্টি হয় কালজয়ী কিছু রোমান্টিক জুটি। অনস্ক্রিনে যাদের কেমিস্ট্রি দর্শকরা শুধু গ্রহণ করেননি বরং মনে গেঁথে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে। এমনই রোমান্টিক জুটি নিয়ে গবেষণা করে 'টাইমস অব ইন্ডিয়া' বলিউডের সিনেমা পর্দায় সর্বকালের সেরা ১০ জুটির তালিকা করেছে।
১. রাজ কাপুর-নার্গিস
বলিউড ইতিহাসের সাদাকালো পর্দাতে রাজ কাপুর ও নার্গিস ছিলেন দুর্দান্ত রোমান্টিক জুটি। বড় পর্দায় তাঁদের যৌথ কেমিস্ট্রি দর্শকদের কাছে জীবন্ত হয়ে ফুটি উঠেছিল। অভিনয়ে তাদের মধ্যে জড়তার কোন লেশ ছিল না। তবে রাজ ও নার্গিসের রসায়ন শুধু পর্দাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা বাস্তব জীবনেও একে ওপরের প্রেমে মজে ছিলেন দীর্ঘ দিন। ষাটের দশকে হিন্দু মুসলমান এ জুটির বেপরোয়া প্রেম ছিল সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত বিষয়। রাজ বিবাহিত ছিলেন আগেই, তবে তাতে মোটেও আটকে থাকেনি তাঁদের প্রেম। তাঁরা জুটি হয়ে 'আওয়ারা'(১৯৫১), 'আগ', 'বারসাত', 'আন্দাজ', 'শ্রী ৪২০' ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে আজও জীবন্ত হয়ে আছেন।
২. গুরু দত্ত-ওয়াহিদা রেহমান
হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগে গুরু দত্ত ছিলেন খ্যাতিমান অভিনেতা। তাঁর অভিনীত 'কাগজ কি ফুল' আর 'পিয়াসা' ছবি দুটি যথারীতি অমর হয়ে আছে। তবে এই ছবি দুটির সাফল্যের পেছনে রয়েছে গুরু দত্ত ও ওয়াহিদার অসামান্য উপস্থিতি। গুরু দত্ত কণ্ঠশিল্পী গীতা দত্তের সঙ্গে বিবাহে জড়ালেও, ওয়াহিদার সঙ্গে গুরুর ছিল তুমুল প্রেম। পরে অবশ্য গুরু দত্তের সঙ্গে গীতার বিচ্ছেদ হয়েছিল।
৩. দিলীপ কুমার-বৈজয়ন্তীমালা
ষাটের দশকে রোমান্টিক জুটির অন্যতম সাক্ষর হয়েছিলেন কিংবদন্তি হিরো দিলীপ কুমার ও বৈজয়ন্তীমালা। তবে দেবদাস-চন্দ্রমুখী এই জুটির সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ পেশাদার। বৈজয়ন্তীমালা ছিলেন দক্ষিণী ভারতের। বর্তমানে দীলিপ কুমার সায়রা বানুর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর আদর্শ জীবন কাটাচ্ছেন।
৪. রাজেশ খান্না-শর্মিলা ঠাকুর
হার্ডথ্রুব সুপারস্টার রাজেশ খান্নার চ্যাম্পিয়নের তকমা লেগেছিল রোমান্টিক রোলের বদৌলতেই। পর্দায় সর্বকালের সেরা জুটির মধ্যে বাঙ্গালী রূপসী শর্মিলা ও রাজেশ অন্যতম। এ জুটি 'রূপ তেরা মাস্তানা', 'আরাধনা', 'অমর প্রেম', 'দাগ' ছাড়াও আরো অনেক ফিল্ম করেছে স্মরণীয়।
৫. ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী
ধর্মেন্দ্র ছিলেন পাঞ্জাবের বরপুত্র। আর হেমা ছিলেন দক্ষিণের লাস্যময়ী রানি। ড্রিম গার্ল হেমা মালিনী ও ধর্মেন্দ্রর জগত বিখ্যাত জুটির কথা কোনো বলিউড প্রেমীর অজানা নয়। তাঁরা জুটি হয়ে ৪০টির বেশি ছবি করার রেকর্ড করেছেন। পর্দায় তাঁরা যেমন অনবদ্য তেমন বাস্তব জীবনেও ছিলেন সেরা প্রেমিক জুটি। শুধু এটুকু বললে হয়ত কম বলা হয়ে যাবে। তাঁদেরকে প্রেমিক জুটিদের আইকন বললেও বেশি বলা হবে না। পরে অনেক চড়াই উতরাই পার করে তাঁরা একে অপরের জীবন সাথী হন।
৬. অমিতাভ বচ্চন-রেখা
বলিউডের প্রায় সব সেরা অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করছেন বলিউডের 'অ্যাংরি ইয়ং ম্যান' অমিতাভ। তবে রেখা ছিলেন তাঁর সেরা রোমান্টিক জুটি। 'সিলসিলা' ছবির মধ্য দিয়ে অমিতাভ জয়া ভাদুড়ির সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ হলেও, রেখার সঙ্গে মেতেছিলেন তুমুল প্রেমে।
৭. ঋষি কাপুর-নিতু সিং
বলিউডের 'লাভার বয়' ঋষি কাপুর ও নিতু সিং একসঙ্গে কাজ করেছেন প্রায় ডজন খানেক চলচ্চিত্রে। সব প্রযোজকের কাছে এই জুটি ছিল সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত। ১৯৭৯ সালে বলিপাড়ার তুমুল সরগরম তুলে গাঁটছাড়া বাঁধেন এই জুটি। তাঁদের বিবাহের মধ্য দিয়ে নিতুর ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে।
৮. অনিল কাপুর-মাধুরী দীক্ষিত
আশির দশকের শেষভাগ ও নব্বইয়ের দশকের বড় একটা সময় জুড়ে বলিউড মাতিয়ে রেখেছিলেন 'হট' জুটি মাধুরী ও অনিল কাপুর। আবেগ ঘন দৃশ্যে অনিলের সঙ্গে মাধুরী ছিলেন সবসময়ই সাবলীল। তবে সে সময় অনিলের সঙ্গে শ্রীদেবীর বেশ রসায়ন ছিল। তবে মাধুরী-অনিল দর্শক মনে জায়গা পায় জীবন্ত হয়ে।
৯. আমির খান-জুহি চাওলা
বলিউডের সবচেয়ে ম্যাজিক হিরো 'মি. পারফেক্টশনিস্ট' খ্যাত আমির খানের প্রথম ছবি 'হোলি' আর জুহির প্রথম ছবি 'সালতানাত'। কিন্তু দর্শকরা এখনও মনে করেন জুহি ও আমিরের প্রথম ছবি 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক'। তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন নিয়ে দর্শক সবসময়ই আলোড়িত ছিলেন।
১০. শাহরুখ খান- কাজল
দর্শকের কাছে আর যাই হোক, কাজল-শাহরুখ জুটির রসায়ন নিয়ে কোনো ব্যাখ্যারই দরকার নেই! ফিল্মে কাজলের বিপরীতে শাহরুখ মানেই সুপারহিট, তাদের রেকর্ড তেমনটাই বলে। 'বাজিগর' থেকে 'কাভি খুশি কাভি গম' পর্যন্ত সব সময়ই জারি থেকেছে এই রেকর্ড। 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' ছবির কথা তো বলাই বাহুল্য! এমনকি 'কাল হো না হো' বা 'ওম শান্তি ওম' ছবিতে কাজলের গেস্ট অ্যাপেয়ারেন্স, সেগুলোও পেয়েছে সুপারহিটের খেতাব।
এমটিনিউজ২৪.কম/টিটি/পিএস