শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫৩:০০

ঈদুল আজহা, থাকুন সুস্থ-নিরোগ

ঈদুল আজহা, থাকুন সুস্থ-নিরোগ

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমুঃ ঈদুল আজহা সমাগত। পশু কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের প্রত্যাশা। নাড়ীর টানে ছুটছে সবাই। কিন্তু বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই খুশির আয়োজনে শামিল হতে পারেন না। একটু সচেতন হলে কিন্তু ঈদের সময়টা সুস্থ থেকে আনন্দে কাটানো যায়। ঈদে অতিরিক্ত গোশত খাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হন। মাটি হয় ঈদের আনন্দ। গোশত খাবেন তাতে সমস্যা নেই কিন্তু একটু রয়ে-সয়ে খান। আনন্দে, সুস্থ ভাবে পালন করুন ঈদ।


অতিরিক্ত খাবার বিশেষ করে আমিষ জাতীয় খাবার খেলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হতে পারে বদহজম, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বদঢেঁকুরের মত সমস্যা। যাদের আলসারের সমস্যা আছে তাদের বুকে জ্বলা বাড়তে পারে। খাবারে অতিরিক্ত লবণ ও মসলাযুক্ত খাবার খেলে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ভাজা-পোড়া খাবার পরিহার করুন। বেশি গোশত খাবেন না।  পরিমিত গোশত খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। যদি আলসারের সমস্যা থাকে তবে আগে থেকেই ওমিপ্রাজল খেতে পারেন। বুক জ্বলা থেকে রক্ষা পেতে খাবার আগেই পান করুন পানি। পেট খালি থাকা অবস্থায় খাবার টেবিল থেকে ওঠে পড়–ন। এন্টাসিড বা ওমিপ্রাজল সেবন করতে পারেন। অনেকে মনে করেন পেট পুরে গোশত খাওয়ার পর কোমল পানীয় পান করলে বুঝি সব সমস্যার মুক্তি। এটা ঠিক নয়। সমস্যার মুক্তি তো মিলবেই না দেখা দিতে পারে এসিডিটি। সালাদ ও ফলমুল বেশি করে খান। প্রচুর পানি পান করুন। শারীরিক পরিশ্রম করতে ভুলবেন না।
অর্ধ-সিদ্ধ গোশত খেলে হতে পারে ডায়রিয়াসহ নানান পেটের পীড়া। তাই খুব ভাল করে গোশত জ্বাল দিতে হবে। পশু জবাইয়ের পরপরই গোশত রান্না বা ফ্রিজে রাখবেন না। কিছুক্ষণ বাতাসে রেখে দিন। শহরে তরুণ ছেলে-মেয়েদের এ সময় চলে বার-বি-কিউ উৎসব। খেয়াল রাখতে হবে গোশত পুরোপুরি সিদ্ধ হয়েছে কিনা।


ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ব্রত সংযম পালন। ঈদেও পালন করুন সংযম। পশুর চর্বি কোলস্টেরলের আধার। এটি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বাড়ায়। অতিরিক্ত গোশত খাবেন না। আহার করুন পরিমিত। মিষ্টিজাতীয় খাবার কে না বলুন। একসাথে অনেক বেশি খাবার খাবেন না।


হৃদরোগীরা এক সাথে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। একবারে বেশি পরিমান খেলে আপনার বুকে ব্যথা হতে পারে। গোশতে কোলস্টেরল বেশি থাকায় বেড়ে যেতে পারে আপনার রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা। তাই কম পরিমানে খাওয়ায় শ্রেয়। কোরবানী পশুর মস্তিষ্ক ও যকৃতে কোলস্টেরল বেশি থাকে। এগুলো খাবেন না। ভাজা-পোড়া খাবেন না। বেশি ভীড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভাল। সাথে ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
কিডনী রোগীরা আমিষ জাতীয় খাবারে হোন সর্তক। যারা কিডনী রোগী কিন্তু ডায়ালাইসিস না করে অন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা প্রতিদিন ৩০-৪০ গ্রাম আমিষজাতীয় খাবার খেতে পারেন। ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২০ গ্রাম আমিষ থাকে। ডায়ালাইসিস করছেন এমন রোগীদের আমিষজাতীয় খাবারে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে অতিরিক্ত খেলে দেখা দিতে পারে সমস্যা। এদের পানি পানের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অতিরিক্ত পানি পানের কারণে হতে পারে হার্ট ফেইলিওর।


লিভার বা যকৃতের সমস্যা যেমন ক্রোনিক লিভার ডিজিজ খারাপ অবস্থায় পৌঁছে থাকলে আমিষ জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। কারণ অতিরিক্ত আমিষ জাতীয় খাবারে হতে পারে হেপাটিক এনকেফালোপ্যাথি। এ সমস্যায় রোগী অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যেতে পারেন। চাইলে দিনে এক টুকরা মাংস খেয়ে শামিল হতে পারেন ঈদের আনন্দে। অন্যরা স্বাভাবিক ব্যক্তিদের মতই পরিমিত গোশত খেতে পারেন।
শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন রোগীরা খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হোন। গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, হাঁসের ডিম, ইলিশ মাছ, বেগুন, নারিকেল, আনারস, পাকা কলায় হতে পারে অ্যালার্জি। এ থেকে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট। একবারে অনেক বেশি খেয়ে ফেললে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্ট। যাদের কফে যক্ষার জীবানু আছে তারা কোলাকুলি করে বা যেখানে সেখানে কফ ফেলে অন্যকে যক্ষায় আক্রান্ত করতে পারেন। এ ধরণের রোগীরা নিজেরাই একটু সচেতন হোন। ঈদের দিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চলে জাম্পেশ আড্ডা। সারাদিন ছোটাছুটি। গরমে ঘেমে গিয়ে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন নিউমোনিয়া, হাঁচি-কাশিতে। ঘেমে গেলে সাথে সাথে ঘাম মুছে ফেলুন। টাইট, মোটা কাপড় না পড়ে সুতি-ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পড়–ন যেন সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে।
জবাই করা পশুর রক্ত ও বর্জ্য যেখানে-সেখানে না ফেলে মাটিতে গর্ত পুতে ফেলুন। জবাই করা জায়গা ব্লিচিং পাউডার বা স্যাভলন বা ডেটল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।


যারা ঈদে বাড়ী যাচ্ছেন যাত্রা পথে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ভ্রমন করবেন না। ছোট শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন। বাড়ীর আশে-পাশে পুকুর-ডোবা থাকলে শিশুদের কিছুতেই একা ছাড়বেন না। আপনি নিয়মিত যে ওষুধ সেবন করেন তা পর্যাপ্ত পরিমানে সাথে নিন। সাথে রাখুন নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র যেমন ওরস্যালাইন, এন্টাসিড, জিংক ট্যাবলেট। সাথে রাখুন পরিচিত চিকিৎসকের মোবাইল নম্বর।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে