মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৭:০০

পৃথিবীর মাপের তিন গ্রহ, পুরোটাই হীরার!

পৃথিবীর মাপের তিন গ্রহ, পুরোটাই হীরার!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : তাল তাল হীরা। যেন হীরার পাহাড়, হীরার সমুদ্র! শুধুই হীরা ভরা আছে তার অন্তরে-অন্দরে। তার পিঠেও মুঠো মুঠো হীরা। এত বড় হীরার খনির হদিশ এর আগে মেলেনি মহাকাশে! আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। যেন কয়েক লাখ কোটি মেগাওয়াটের আলো, যার জাঁক-জৌলুস ছিঁড়েফুড়ে দিচ্ছে মহাকাশের অতল অন্ধকার! হাত বাড়ালেই সেই হীরার খনি। আমাদের থেকে মাত্র ৪০ আলোকবর্ষ (এক সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল গতিবেগে আলো এক বছরে যতটা দূরত্ব যায়, ততটা) দূরে। বলা যায়, আমাদের সৌরমণ্ডলের ‘পাশের বাড়ির বন্ধু’! সেই হীরার খনি কত বড়, জানেন? চমকে যাবেন না। তিন-তিনটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে তা যতটা জায়গা জুড়ে থাকে, ততটা জায়গা জুড়ে রয়েছে ওই হীরার খনি। রাতের আকাশে যাকে আমরা ছাদে উঠে খালি চোখেই দেখতে পারি। ‘ক্যান্সার’ নক্ষত্রপুঞ্জে। যে চক্কর মারছে ‘55Cancri’ নামে একটা অসম্ভব রকমের গরম তারা বা নক্ষত্রের চারপাশে। সেটাই তার ‘সূর্য’। সেই ‘সূর্য’কে চক্কর মারছে পাঁচটি গ্রহ। ‘Cancri-a’ থেকে ‘Cancri-e’। আমরা যে হীরার খনির কথা বলছি, সেই ‘Cancri-e’ গ্রহটি ওই ‘সৌরমণ্ডলে’র বাকি চারটি গ্রহের থেকে একেবারেই আলাদা। একেবারে ঝকঝকে হীরায় মোড়া, প্রায় আদ্যোপান্তই! ২০১১-এ এই ‘হীরার গ্রহটি প্রথম যার নজরে পড়েছিল, তিনি একজন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিক্কু মধুসূদন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-পদার্থবিদ কানানি লি’র সঙ্গে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমির অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদনের সেই যৌথ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘অ্যাস্টোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। কতটা হীরা রয়েছে আমাদের সবচেয়ে কাছের ওই বৃহত্তম হীরার খনিতে? জ্যোতির্বিজ্ঞানী মধুসূদন তার ব্লগে জানিয়েছেন, ‘আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে থাকা ওই ‘সুপার আর্থ’ গ্রহের এক-তৃতীয়াংশই হীরায় মোড়া। তার পিঠটাও মোড়া রয়েছে হীরা আর গ্রাফাইটে। সেই গ্রাফাইট, যা দিয়ে বানানো হয় পেন্সিলের শিস। তিনটি পৃথিবীর ওজন যোগ করলে যা হয়, ততটাই। মানে ১৭.৯১৬-এর পর ২৭টা শূ্ন্য বসালে যে সংখ্যাটা দাঁড়ায়, তত কিলোগ্রাম! এখন আমাদের এই গ্রহে এক ক্যারাট বা ০.২ গ্রাম ওজনের হীরার দাম কয়েক হাজার মার্কিন ডলার। তা হলে বুঝুন, আমাদের প্রায় নাগালেই থাকা ওই গ্রহের দাম কত হতে পারে। কীভাবে জন্মাল ওই ‘হীরার গ্রহ’? বেঙ্গালুরু থেকে টেলিফোনে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জোতির্বিজ্ঞানী সুজন সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘এই সদ্য আবিষ্কৃত ‘Cancri-e’ গ্রহটি একটি পাথুরে গ্রহ। পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহগুলোতে অক্সিজেন অণুর পরিমাণ কার্বন অণুর দ্বিগুণ। তাই ভূপৃষ্ঠে অক্সিজেনের যৌগ জল, কার্বন ডাই-অক্সাইড আর সিলিকেট অক্সাইড পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। মঙ্গলও অনেকটা সে রকমই। আসলে আমাদের সৌরমণ্ডলে যে মেঘ থেকে বিভিন্ন গ্রহের জন্ম হয়েছিল, তাতে কার্বনের চেয়ে অক্সিজেন অণুর পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। কিন্তু পরিস্থিতিটা যদি উল্টো হয়, যদি অন্য কোনো ‘সৌরমণ্ডলে’ কার্বনের পরিমাণ বেশি হয়ে যায় অক্সিজেনের চেয়ে কোনো তারা বা তার গ্রহে, তাহলে সেই ‘সূর্য’কে বলা হয় ‘কার্বন স্টার’। আর তার চার পাশে যে ‘গ্রহগুরো চক্কর মারে, তাদের বলা হয় ‘কার্বন প্ল্যানেট’। প্রচণ্ড তাপ আর চাপে ওই কার্বন পরমাণুগুলোই হীরার কেলাস তৈরি করে। সেভাবেই গড়ে ওঠে ‘হীরার গ্রহ’ বা ‘ডায়মণ্ড প্ল্যানেট’। তাপ ও চাপ অত্যন্ত বেশি বলে আমাদের পৃথিবীরও পিঠের ১৫০/২০০ কিলোমিটার নিচে হীরা জন্মায়। অগ্ন্যুৎপাতে নিচ থেকে সেই হীরা আমাদের ভূপৃষ্ঠের ওপরে উঠে আসে। এটাই আমাদের প্রাকৃতিক হীরা। কিন্তু তাপ ও চাপ দুই-ই পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি বলে হীরার গ্রহ ‘Cancri-e’তে হীরার উজ্জ্বলতা অনেক বেশি। কাঠিন্যও বেশি। হীরার গ্রহের পিঠের তাপমাত্রা প্রায় ৩৯০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। সে তার ‘সূর্য’ ‘55Cancri’-র রয়েছে খুব কাছেই। মানে তার গা জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। সূত্র : আনন্দবাজার ২৪ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে