হাত-পা হারানো তাহেরারা এখন অনন্য দৃষ্টান্ত
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আর দশজন স্বাভাবিক নারীর মতোই ব্যস্ততা দিয়েই দিন শুরু হয় তাহেরা ইউসুফীর। একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকেও খুব দ্রুত কাজ করে সেরে ফেলতে পারেন তিনি। দেখে বোঝার সাধ্য নেই যে কিছু দিন আগেও তিনি ছিলেন মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত।
২০১৩ সালে কাবুলের একটি শিক্ষা অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে তিনি বর্তমানে সরকারী একটি সংস্থার সহযোগী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তার এত দূর আসার পথ একদম সহজ ছিল না বললেই চলে। অনেক ঝড়ঝাপটা পাড়ি দিয়ে তাকে এখানে পৌছাতে হয়েছে। তাহলে কি হয়েছিল তাহেরার এ প্রশ্নের উত্তরে এবার একটু পিছন ফিরে দেখা যাক।
১৯৯৮ সালের কথা তাহেরা তার পরিবার নিয়ে আফগানিস্তানের কাবুলে বসবাস করতো। আফগান তালেবানের সঙ্গে আহমেদ শাহ মাসুদের যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে রকেট হামলায় প্রায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। আর এতে বাদ পড়েনি তার বাবা এবং ছোট ভাই। শুধু এখানেই শেষ নয় এই রকেট হামলায় তিনি নিজেও বেশ আহত হয়। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার ডান হাত এবং বাম পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরিবার হারিয়ে চাচার কাছে বড় হতে থাকে তাহেরা। বিষন্নতা কাটানোর জন্য চাচার পরামর্শে স্কুলেও ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাকে সম্মূখীন হতে হয় আর এক নতুন সমস্যার।
তাহেরার ভাষ্যমতে ‘আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন কেউ আমার সঙ্গে বসতে চাইতো না। এমনকি পড়ালেখার কোন ব্যপারেও তারা আমাকে সাহায্য করতো না। একদিন স্কুলের একজন শিক্ষক আমার প্রতি এই বৈষম্যতা দেখে আমাকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে সান্তনা দেন। তিনি বলেন শারিরীকভাবে তোমার অক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু তুমি মনের দিক থেকে অক্ষম নও। তার সেদিনের কথা আমার মধ্যে শক্তি ও সাহসের সঞ্চার করেছিল। এর পর থেকে আমার আর পেছন ফিরে দেখতে হয়নি। আমি এখন একটি হাত ও পা ছাড়াও উপার্জন করতে সক্ষম’।
বর্তমানে তাহেরা একটি কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে চলাফেলা করে। তার উপার্জিত টাকা দিয়ে তিনি একটি জমি ক্রয় করেছেন। আফগানিস্তানে নরওয়েইন শরণার্থী পরিষদের সহোযোগীতায় অসহায়দের জন্য সেখানে একটি বাড়ি নির্মানের কথাও ভাবছেন তিনি। তাহেরার মতে কোন কিছু করার জন্য মনের চিন্তাটাই মুখ্য। যদি আপনি মনের দিক থেকে শক্তিশালি হয়ে থাকেন তাহলে শারিরীক বাধা কোন সমস্যাই না বলে মনে করেন তিনি।
২৫নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ
�