আশিকুর রহমান হান্নান, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : বিয়ে পাগল নয়ন। নতুনের সন্ধানে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। বিদেশ যাবে বলে কথা। বিয়েও করেছেন একাধিক। শ্বশুরবাড়ি থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন অঢেল টাকা। কিন্তু সবই গোপনে। এক বউয়ের খবর আরেক বউকে জানাতেন না।
প্রবাসে যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ির লোকদের ফাঁদে ফেলতেন। ভাগিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে ৭টি বিয়ে করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
কথায় আছে, চোরের দশদিন সাধুর একদিন। ধরা খেয়ে যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বটতলা রসুলবাগ এলাকার মৃত আবুল খায়ের খন্দকারের ছেলে মোখলেছুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৫)। এক বউয়ের মামলা আর ছয় বউয়ের অভিযোগে শ্রীঘরে আছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বটতলা রসুলবাগ এলাকার বিয়ে পাগল মোখলেছুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এক স্ত্রীর মামলা ও ৬ স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে প্রতারণার মাধ্যমে মোখলেছ একে একে ৭টি বিয়ে করেন।
পুলিশ ও তার স্ত্রীরা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বটতলা রসুলবাগ এলাকার মৃত আবুল খায়ের খন্দকারের ছেলে মোখলেছুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৫) দীর্ঘ ১০ বছর সৌদি আরবে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করে ৫ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে গত ৫ বছরে মোখলেছ একে একে ৭টি বিয়ে করে।
নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে নারীলিপ্সু মোখলেস বিভিন্ন এলাকায় গোপনে একের পর এক বিয়ে করেন। তার বিবাহিত স্ত্রীর সংখ্যা ৭। এরা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নয়াআটি মুক্তিনগরের আবদুল মালেকের মেয়ে শিরিনা আক্তার (১৮), আজিবপুরের মৃত জলির বেপারীর ছেলে রানী আক্তার (১৮), ঢাকা জেলার ডেমরা থানা এলাকার আনোয়ারা (২১), চাঁদপুর জেলার বারগাঁও এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে শিমু আক্তার (২২), নারায়ণগঞ্জ সদরের খানপুর এলাকার আবদুল কাদিরের মেয়ে সালেহা আক্তার টুম্পা (১৯) ও চট্টগ্রাম জেলায় বসবাসকারী তার এক মামাতবোন। যার নাম এখনও জানা যায়নি।
বিয়ে করার পর প্রথম মাস দু’য়েক স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করে আবার সৌদি আরব চলে যাওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রীর সাথে তেমন কোনো যোগাযোগ রাখেননি মোখলেছ। বিয়ে প্রতারক মোখলেছের গোপন বিয়ের কথা জানাজানি হলে তার এক স্ত্রী নারায়ণগঞ্জ খানপুরের সালেহা আক্তার টুম্পা বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরে আরো ৬ স্ত্রী থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই গোলাম সারোয়ার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে রসুলবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোখলেছুর রহমান নয়নকে গ্রেফতার করে।
মোখলেছ প্রতিটি বিয়ে করেছে রেজিস্ট্রি কাবিনমূলে। মোখলেছের ৭ স্ত্রী এক জোট হয়ে আইনের আশ্রয় নেন। বিয়ের নামে নারীদের জীবন নষ্ট করায় তারা মোখলেছের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, রসুলবাগ এলাকায় মোখলেছের দুটি বিলাসবহুল বাড়িসহ প্রচুর জায়গা জমি রয়েছে। বিয়ে করে বিদেশ যাওয়ার নাম করে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই বিয়ে ব্যবসায় নামে মোখলেছ।
মোটা অংকের টাকার লোভে এলাকার এক ঘটকের সহায়তায় তিনি ৭টি বিয়ে করেন। ওই ঘটকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন মোখলেছের স্ত্রীরা।
২৩.০৯.২০১৩/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/