হাবিবুর রহমান, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : বাংলায় মুঘল শাসনামল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও যেসব জমিদার তাদের কর্তৃত্ব না মেনে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতেন বাংলার ইতিহাসের তারাই বার ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের সেই বার ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঈশা খাঁ। তিনি তার শাসনামলে নির্মাণ করেছিলেন বিভিন্ন ইমারত ও দর্শনীয় স্থাপনা। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থাপনা ছিল ইছাপাড়া এলাকায় প্রায় ৬০ বিঘা জমি খনন করে নির্মিত সোনাবিবির দিঘী।
নিজ স্ত্রীর নামে তিনি দিঘীর নামকরণ করলেও কালের বিবর্তে তা আজ খাসনগর দিঘী হিসেবে পরিচিত।
সৌন্দর্য্যবর্ধনের লক্ষ্যে তিনি দিঘীর চারপাশে রোপণ করেছিলেন সারি সারি নারিকেল গাছ। ছায়াঢাকা ও পাখির কল-কাকলীতে মুখরিত এ দিঘী তৎকালে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বের পর্যটকদেরও আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু দিঘীটি বর্তমানে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ায় তা হারিয়েছে পুরনো জৌলুস। দর্শনার্থীদের কাছেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এটি। অথচ সরকারিভাবে এটির পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে এ দিঘীও হতো দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট।
অপরদিকে ইতিহাসখ্যাত এ দিঘীকে নিয়ে রয়েছে রকমারি মুখরোচক গল্প। স্থানীয়দের মতে, এটি একটি গায়েবি দিঘী। চারশ’ বছর আগে বৃহৎ কোনো পাত্রে পান, সুপারি, ধান, দুর্বা ও সরিষ্যার তেলের চেরাগ জ্বালিয়ে কোনো বিয়ে বা মুসলমানির অনুষ্ঠানের জন্য এই দিঘীর কাছে থালা, বাটি, জগ, গামলা ও তামা-কাসা-পিতলের ডেগ চাওয়া হলে রাতের আঁধারে গায়েবিভাবে এসব জিনিসপত্রাদি দিঘীর পাড়ে এসে যেত, যা অনুষ্ঠান শেষে পুনরায় দিঘীকে ফেরত দেয়া হতো। তবে কোনো এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পিতলের একটি বাটি রেখে বাকি অন্যান্য মালামাল ফেরত দেয়ায় তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় দিঘীর গায়েবি সহযোগিতা।
তবে এ জাতীয় গল্প স্থানীয় প্রবীণদের মুখে মুখে থাকলেও সমসাময়িক শিক্ষিত শ্রেণীর নবীনরা এগুলোকে কল্পকথা বলে উড়িয়ে দেন। যদিও প্রশাসনের নজর পড়লে দিঘীটি দিয়ে সরকার অগণিত রাজস্ব আয় করতে পারে। এ বিষয়ে নবীন-প্রবীণ সবাই একমত পোষণ করেছেন।
১৮.০৯.২০১৩/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/