বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৯, ০৯:০৭:৫৩

কিডনি রোগ সর্বনাশা, প্রতিরোধই বাঁচার আশা

 কিডনি রোগ সর্বনাশা, প্রতিরোধই বাঁচার আশা

ডা. নবীউল হাসান: এ্যাপোলো হাসপাতাল ঢাকা বাংলাদেশের নেফ্রোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও সমন্বয়কারী চিকিৎসক নবীউল হাসান রানা বলেন, কিডনি রোগ একটি সর্বনাশা রোগ। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে থেকেই প্রতিরোধ করতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। এ্যাপোলো হাসপাতালে কিডনি রোগনির্ণয় থেকে শুরু করে সুচিকিৎসা হয় বলে জানান তিনি।

ডা. নবীউল হাসান রানা বলেন, বাংলাদেশে কিডনি সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কিডনির ৭০ শতাংশ ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রোগীরা বুঝতেই পারে না যে তার কিডনির সমস্যা আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব রোগী আসেন, বেশির ভাগেরই দেখা যায় কিডনির ৭০ শতাংশেরই ক্ষতি হয়ে গেছে। ৩০ শতাংশ ভালো থাকে। এই অবস্থায় এলে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। এ রকম অবস্থায় সম্পূর্ণ ভালো করা খুব কম ক্ষেত্রেই সম্ভব হয়।’

কিডনি সমস্যার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস বলে উল্লেখ করেন এ্যাপোলোর এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে অথবা পরিবারে ডায়াবেটিস আছে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বা পরিবারে কারও থাকলে, পরিবারে কোনো কিডনি রোগী থাকলে কিডনির রোগে ভুগতে পারেন। এ ছাড়া নেফ্রাইটিস বলে একটা রোগ আছে, যা সচরাচর ধরা পড়ে না। এর লক্ষণ হচ্ছে পায়ে পানি আসা। নেফ্রাইটিস ছোটবেলায় একবার হলে দেখা যায় কয়েক বছর পরে কিডনির সমস্যা দেখা যায়। আরও একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত ওষুধ সেবন। এ দেশে যেখানে–সেখানে ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ওষুধ কিনতে পাওয়া যায়। অনেক ওষুধ আছে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যথানাশক ওষুধ, উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক। এ ছাড়া ভেজাল খাদ্যও ধীরে ধীরে কিডনির ক্ষতি করে।

কামরাঙা, বিলম্বি ফল নামে দুটি ফল খেতে নিষেধ করে চিকিৎসক নবীউল হাসান বলেন, ‘পিপাসার্ত অবস্থায় যদি কেউ কামরাঙার জুস খায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কিডনির ক্ষতি করবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।’

কিডনির অসুখ হলে যে ধরনের লক্ষণ দেখা যেতে পারে—পায়ে পানি আসা, খাওয়ার অরুচি, বমি বমি ভাব, বেশি দুর্বল লাগা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয় বলে জানান তিনি।

নবীউল হাসান বলেন, এ দেশে ২০ ভাগ লোক কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি সমস্যা বেশি হওয়ার কারণে চল্লিশোর্ধ্ব কিডনি রোগী বেশি দেখা যায়। আর নেফ্রাইটিস থেকে হলে আরও কম বয়সে হয়।

কিডনির পাথরজনিত কিছু সমস্যা আছে, যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে বলে জানান এ্যাপোলোর এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, কিডনিতে পাথর বেশি হয় খাদ্যাভ্যাসের জন্য।

কিডনি রোগীদের ভালো খাবার খাওয়া নিয়ে নানান ধারণা প্রচলিত আছে। এ বিষয়ে নবীউল হাসান বলেন, ‘কিডনির অসুখ হলে ভালো খাবার খাওয়া যাবে না, এ ধারণা একেবারেই ভুল। বরং কিডনি সুস্থ রাখতে হলে সুষম খাদ্য খেতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রোটিন খেতে হবে। খাবারের তালিকা থেকে প্রোটিন সম্পূর্ণ বাদ দিলে উল্টো কিডনির ক্ষতি হবে।’

এ ছাড়া পানি খাওয়ার বিষয়ে বলেন, একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন দুই–তিন লিটার পানি খেতে হবে। তবে তা আবহাওয়া ভেদে কম বা বেশি হতে পারে। বেশি পানি পান করাও কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

শেষ পর্যায়ে গিয়ে যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন তাঁদের জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন করাই হচ্ছে চিকিৎসা। ডায়ালাইসিস দুই প্রকার—রক্তের ডায়ালাইসিস ও পেটের ডায়ালাইসিস। বিশ্বে এখন পেটের ডায়ালাইসিসের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ডায়ালাইসিস রোগী বাসায় বসে নিজেই করতে পারেন।

ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক বেশি হয় বলে জানান নবীউল হাসান। তিনি বলেন, কয়েক মাস ডায়ালাইসিস করার পর আর তা চালিয়ে যেতে পারেন না অনেকেই। বন্ধ করে দিলে তখন রোগী মারা যান। এ জন্য ভালো উপায় হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন করা। আমাদের দেশে স্বল্প পরিসরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

এ্যাপোলোর নেফ্রোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, এ্যাপোলোতে মানসম্পন্ন একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার আছে। এখানে একজন রোগীর জন্য ডায়ালাইজার একবারই ব্যবহার করা হয়। এ কারণে রোগ সংক্রমণের কোনো ঝুঁকি থাকে না। যে পানি দিয়ে রক্ত পরিশোধন করা হয়, তা প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা করা হয়। এ হাসপাতালে একসঙ্গে ৩৯ জন ডায়ালাইসিস করতে পারেন। তিন শিফটে প্রতিদিন গড়ে ১০০ জন রোগী এখানে ডায়ালাইসিস করতে আসেন। নেফ্রোলজি বিভাগে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। এ ছাড়া ১১ জন মেডিকেল অফিসার আছেন।

কিডনির রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি অসুখ আছে কি না, তা ধরার জন্য ইউরিনের একটা পরীক্ষা আছে যেটা করলে কিডনি নষ্ট হওয়ার ১০ বছর আগেই ধরা পড়বে। এ সময় ধরা পড়লে তা চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য।

এ্যাপোলোতে নেফ্রাইটিস নির্ণয় করার জন্য কিডনির বায়োপসি করা হয়। তারপর চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিগগিরই এ্যাপোলো হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা শুরু হবে।
সূত্র: প্রথম আলো

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে