শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫১:৪১

বন্দি ইঞ্জিনিয়ার জেলে বসেই আবিষ্কার করলেন ডিজিটাল জেল বানানোর সফটওয়্যার

বন্দি ইঞ্জিনিয়ার জেলে বসেই আবিষ্কার করলেন ডিজিটাল জেল বানানোর সফটওয়্যার

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: একেই বোধহয় বলে, 'ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে'। ভুয়া মামলায় জড়িয়ে ১৩ মাস জেল খেটেছেন। কিন্তু সেখানে বসেও কী ভাবে জেলগুলোকে তথ্য-প্রযুক্তিগত ভাবে আরও আঁটোসাঁটো করে তোলা যায়, সে বিষয়েই মাথা খাটিয়েছেন ভারতের গুরগাঁওয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অনিল কুমার মিশ্র। তিনি জেলে বসেই তৈরি করে ফেলেছেন এক নতুন সফটওয়্যার, যা একদিকে যেমন জেল পরিচালনা সহজ করে দেবে, তেমনই সাহায্য করবে আসামীদেরও। বিয়ের দু বছরের মধ্যেই ৩১ বছরের এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। কিন্তু অনিল কুমারে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে পণের দাবিতে স্ত্রীর উপর অত্যাচারের অভিযোগ এনে মামলা ঠুকে দেয়। স্ত্রীর মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় অনিল কুমারকে। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে অনিল জেলের প্রতিদিনের ছবিটা ভালো করে লক্ষ্য করেন। নিরাপত্তা ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বেশ কিছু ফাঁক-ফোকর আবিস্কার করেন তিনি। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবস্থার অভাবেই জেলগুলোর এই দৈন্যদশা বলে মনে হয় তাঁর। জেলে বসেই নতুন সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করে দেন তিনি। কী ভাবে জেলের প্রতিদিনের ছবির মধ্যে একটা সমন্ন্বয় গড়ে তোলা যায়, সেই চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন অনিল। ১৩ মাস জেলে কাটিয়ে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করে বেরিয়ে আসার আগেই ফিনিক্স নামে এক নতুন সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেন তিনি। জেলে থাকার সময়ই অনিল লক্ষ্য করেন যে বেশিরভাগ আসামীই জানে না, যে তার বিরুদ্ধে কোন কোন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। কোন আসামীর পরবর্তী শুনানির তারিখ কবে এবং কোন আদালতে, তা জানতেও প্রচুর ফাইল ঘাঁটতে হয় কারারক্ষীদের। অনিল কুমারের তৈরি সফটওয়্যার ফিনিক্সের সাহায্যে জেলের মধ্যে নতুন কিয়স্ক বসানো হয়। যেখানে যে কোনও আসামী বুড়ো আঙুল ছোঁয়ালেই তার বিরুদ্ধে অপরাধের ধারা, পরবর্তী শুনানির তারিখ, মামলার বর্তমান অবস্থা - সব ফুটে উঠবে। এতে একদিকে যেমন আসামীরা নিজেদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারেন, তেমনই জেল কর্তৃপক্ষেরও পরিচালনার কাজটি অনেক সহজ হয়। এছাড়া জেল ক্যান্টিন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতেই এই সফটওয়্যার আসামীদের কাজে লাগে। এতদিন জেল কর্তৃপক্ষ আসামীদের এক বিশেষ কুপন দিত, যার সাহায্যে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারত তারা। কিন্তু এর ফলে অনেক সময়ই প্রয়োজনের থেকে বেশি টাকা খরচ করতে হত আসামীদের। অনিলের তৈরি সফটওয়্যারে কুপন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে আঙুলের ছাপেই প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে নেওয়া যাবে। ওই সব জিনিসের দাম সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে। হরিয়ানার সব জেলে ইতিমধ্যেই এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৫-র ১৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলকে জেলে এই সফটওয়্যার বসানোর নির্দেশ দিয়েছে। হরিয়ানার পর অরুণাচল প্রদেশ এই সফটওয়্যার বসাবে বলে জানিয়েছে। কথা চলছে উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব এবং অসমের সঙ্গেও। একসময়ে জেলে কাটানো এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বর্তমান ঠিকানা গুরগাঁওয়ের ভনদোসি জেল ক্যাম্পাসের সরকারি আবাসন। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের রাসেল

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে