শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:৪০:১০

ব্রিটিশ গভর্নরের থেকেও বেশি উপার্জনকারী নায়িকার মৃত্যু হয়েছিল নিঃস্ব অবস্থায়

ব্রিটিশ গভর্নরের থেকেও বেশি উপার্জনকারী নায়িকার মৃত্যু হয়েছিল নিঃস্ব অবস্থায়

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : টেলিফোন অপারেটর থেকে ভারতীয় সিনেমার প্রথম সুপারস্টার হয়েছিলেন রুবি মায়ার্স। সিনেমার জন্য নাম নিয়েছিলেন ‘সুলোচনা’। ‘দাদাসাহেব ফালকে’ সম্মানে ভূষিত এই অভিনেত্রী কোনও এক সময়ে উপার্জনে এগিয়ে ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গভর্নরের থেকেও। 

অথচ মৃত্যুর সময়ে তিনি নিঃস্ব ও কপর্দকহীন। তখন নির্বাক সিনেমার যুগ। ভারতীয় মহিলারা রাজি হতেন না সিনেমায় অভিনয় করতে। পরিচালকদের ভরসা ছিল অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বা অন্য বিদেশি সম্প্রদায়ের উপরেই। রুবি ছিলেন বাগদাদি ইহুদি সম্প্রদায়ের। ১৯০৭ সালে রুবির জন্ম ভারতের পুণে শহরে।

টেলিফোন অপারেটর রুবি চোখে পড়ে যান ‘কোহিনূর ফিল্ম কোম্পানির’ মোহন ভাবনানির। তবে তিনি প্রথমে রাজি হননি ছবিতে অভিনয় করতে। শেষে মোহনের বহু অনুরোধে ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন। অল্প দিনেই তিনি হয়ে ওঠেন ইউরেশিয়ান সুপারস্টার।

জনপ্রিয়তা বাড়তেই রুবি কোম্পানি বদল করেন। চলে যান ইম্পিরিয়াল ফিল্ম কোম্পানিতে। তখন তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী। আর এস চৌধুরীর পরিচালনায় বেশ কিছু ছবিতে তিনি চরম সাফল্যও পেয়েছেন।

‘মাধুরী’, ‘আনারকলি’, ‘ইন্দিরা বি এ’, ‘টাইপিস্ট গার্ল’, ‘বলিদান’-এর মতো বক্স অফিস সফল নির্বাক ছবির নায়িকা ছিলেন রুবি, ওরফে সুলোচনা। নির্বাক ছবির যুগ শেষ হতেই রুবি বিপাকে পড়লেন।

কারণ বিদেশিনী হওয়ার সুবাদে তিনি হিন্দি ভাল বলতে পারতেন না। এক বছর অভিনয় থেকে বিরতি নিয়ে হিন্দি শেখেন রুবি। ফিরে আসেন সফল ভাবে। প্রথম দিকের টকি সিনেমাতেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেনে রুবি।

‘ওয়াইল্ডক্যাট অব বম্বে’ ছবিতে নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট আটটি ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এক জন পুলিশকর্মী, হায়দরাবাদি পুরুষ, পথশিশু, ফলবিক্রেতা এবং একজন ইউরোপীয় স্বর্ণকেশী।

এতটাই তাঁর খ্যাতি ছিল, রুবি প্রতি মাসে পারিশ্রমিকে পেতেন তখনকার সময়ে পাঁচ হাজার রুপি। সে সময়ে এর পরিমাণ ছিল আকাশছোঁয়া। কেরিয়ারের পাশাপাশি প্রেমও তখন মধ্যগগনে। নির্বাক ছবির নায়ক ডি. বিলিমোরিয়ার সঙ্গে রুবির জুটি পর্দায় এবং পর্দার বাইরেও ছিল সফল। 

দুজনে মিলে শুরু করেছিলেন আলাদা প্রোডাকশন হাউজ। ক‌েরিয়ারের সোনালি দিনে রুবি ছিলেন বিলাসিতার শীর্ষে। তার বাহন ছিল শেভ্রলে। তৎকালীন ব্রিটিশ বম্বের গভর্নরের থেকেও বেশি ছিল তার উপার্জন। ভারতীয় ছবিতে তার অবদানের জন্য তাকে ১৯৭৩ সালে সম্মানিত করা হয়েছিল ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে মরচে পড়ল রুবি ওরফে সুলোচনার কেরিয়ারে। নতুন নায়িকাদের সঙ্গে পেরে উঠলেন না প্রতিযোগিতায়। ধীরে ধীরে সরে গেলেন পার্শ্ব চরিত্রের ভূমিকায়। তাকে শেষ বার পর্দায় দেখা গিয়েছিল ১৯৮১ সালে, ‘খট্টা মিঠা’ ছবিতে।

কেরিয়ারের সঙ্গে ভাঙন ধরল সম্পর্কেও। সুলোচনা আর বিলিমোরিয়ার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে তাঁদের সংস্থাও। বরাবরই সময়ের থেকে এগিয়ে ছিলেন সুলোচনা। ভালবাসতেন চেনা ছক ভেঙে বেরিয়ে আসতে। পিছিয়ে পড়া কেরিয়ার নিয়ে অনুতাপ অনুশোচনা করতেন না।

যে সুযোগই পেতেন, নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর সময় ছিল না নির্বাক যুগের নায়িকাকে মনে রাখার। ১৯৮৩ সালে মৃত্যু হয় রুবি মায়ার্সের। তখন বম্বে, আজকের মুম্বাইয়ে নিজের ফ্ল্যাটে পড়ে ছিল তার মৃতদেহ। কপর্দকহীন অবস্থায় সকলের অজান্তেই চলে যান ভারতীয় ছবির প্রথম সুপারস্টার নায়িকা। সূত্র : এবিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে