মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১০:৫৯:০০

‘বেশি গ্যাঞ্জাম কইরো না, ট্যাকা কবে দিবা-শালার পো শালা’

‘বেশি গ্যাঞ্জাম কইরো না, ট্যাকা কবে দিবা-শালার পো শালা’

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: কারস্টেন হ্যাকেনব্রোচ বাংলাদেশকে বলেন তাঁর সেকেন্ড হোম। বাংলা বলতে পারেন বাঙালির মতোই। মানুষের সঙ্গে মিশে যান আত্মীয়ের মতো। কারস্টেন বকাও জানেন। একদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন সরফরাজ খান

অ্যাই রিকশা, যাবে নাকি?

কই যাইবেন আফা?

ধানমণ্ডি ২ নম্বর। যাবে?

উঠেন। ভাড়া কইলাম না, আপনের ইচ্ছামতো দিয়েন।

কারস্টেনের কথা শুনলে কেউ তাঁকে বাঙালি না ভেবে পারবে না। একজন বাঙালির মতোই বাংলায় পারদর্শী হয়ে উঠেছেন জার্মান এই মেয়েটি। পরেনও সালোয়ার-কামিজ। মুখে হাসি লেগেই থাকে। চোখ দুটি সারাক্ষণ যেন কি খুঁজে। কারস্টেনের নামের শেষ অংশ হ্যাকেনব্রোচ। বাংলাদেশে প্রথম এসেছিলেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পেশায় শিক্ষক। বয়স হবে ৩০-৩২। বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারেন স্কুলে থাকতেই। নতুন নতুন দেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয় ওই স্কুলবেলায়। প্রথমবার এসে ১০ দিন মাত্র থেকেছিলেন। এর পর পরই কয়েকবার আসেন। ২০০৭ সালের আগস্টে আসেন পিএইচডির শেষ অংশ সম্পূর্ণ করতে। তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল তৃতীয় বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশে আসার আগে তিনি আফ্রিকার কিছু দেশেও কাজ করেছেন। মানুষের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, জীবনযাপন পদ্ধতি জানতে চাইছিলেন তিনি।

বাংলাদেশকে কাজের ক্ষেত্র কেন করেছিলেন?

এই দেশটা বৈচিত্র্যময়। মানুষ কাঁদতে যেমন পারে, হাসতেও পারে। দুঃখের মধ্যেও গান বেঁধে ফেলে। এটাই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে।

বাংলাদেশে আসার পর পরই তিনি ভাষা শিখতে লেগে যান। খুব মন দিয়ে রিকশাওয়ালা, চা-বিক্রেতা বা মাছওয়ালাদের কথা শুনতেন। মনোযোগী ছিলেন বলে সময়ও বেশি লাগেনি। তিনি বাংলাদেশের বেশির ভাগ জেলার নাম জানেন, বলতে পারেন অনেক গ্রামের নামও। থেকেছেন নিম্নবিত্ত পরিবারে পেয়িং গেস্ট হিসেবে।

ধানমণ্ডিতে গিয়ে রিকশা থেকে নেমে আমরা একটি চায়ের দোকানে ঢুকলাম। কারস্টেন বললেন, দুটি চা দেবেন। একটা রং চা।

আশপাশের লোকজন ফিরে তাকাল—যেমন সব জায়গায় হয়। একজন জিজ্ঞেসও করল, কিভাবে এমন বাংলা শিখলেন?

কারস্টেন বললেন, ‘আমি অনেক সময় টঙ্গীর এক বস্তিতে থেকেছি। সেখানে লোকজনের কাছে শিখেছি। আমি কিছু বকাও জানি।’ অন্যরাও এগিয়ে এলো এবার। উত্সুক লোক সব। সমস্বরে বলল, বলেন তো শুনি।

‘বেশি গ্যাঞ্জাম কইরো না, ট্যাকা কবে দিবা, শালার পো শালা,’ কারস্টেন নিজেই হেসে কুটি কুটি। লোকজনের চোখ বড় হয়ে গেছে। তারা জানতে চাইল, আপনি এগুলোর অর্থ জানেন?

কারস্টেন বলেন, ‘হ্যাঁ, জানি। শালা মানে ব্রাদার ইন ল। এটি খুবই সুন্দর বকা।’ বাংলাদেশে তিনি শহরেই কাটিয়েছেন বেশি। পুরান ঢাকা তাঁর বেশি পছন্দ। তিনি একপর্যায়ে এমন একটি প্রকল্পে যুক্ত হতে চাইলেন, যার মাধ্যমে জায়গাগুলোর নামের ইতিহাস জানা যায়। প্রকল্পের কাজ তিনি ব্যক্তিগত অর্থায়নে চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তিনি এই কাজ শুরু করেছেন। আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন।

কারস্টেনের কাছে বাংলাদেশ এখন আপন জায়গা। তাঁর কাউকে বা কোনো কিছুকে ভয় লাগে না। স্বচ্ছন্দে চলাফেরায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। বলতে ভালোবাসেন, ‘বাংলাদেশ আমার সেকেন্ড হোম। এ দেশের মানুষ সজ্জন ও অতিথিপরায়ণ। আমাকে দেখলে সবাই আনন্দিত হয়, আমিও আবেগ ধরে রাখতে পারি না।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে